শোষণ–মুক্তির দিশারী–প্রাউট

লেখক
সৌমিত্র পাল

শেষাংশ

প্রাউটের শিল্পনীতি ঃ কৃষির পাশাপাশি শিল্পের বিকাশ ঘটানো হবে প্রধানতঃ সমবায়ের মাধ্যমেই৷ এখানে সমস্ত শিল্প বা উদ্যোগকে তিন ভাগে ভাগ করা হবে–(১) মূল শিল্প – (যা থাকবে স্থানীয় সরকারের হাতে) (২) সমবায় ভিত্তিক মাঝারি শিল্প (স্থানীয় মানুষের কর্মসংস্থানকে সুনিশ্চিত করবে) (৩) কুটিরশিল্প বা অতি ক্ষুদ্রশিল্প (এগুলি থাকবে ব্যষ্টি মালিকানায়)৷ প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি কৃষি–উর্বর জমি ধ্বংস করে শিল্প কারখানা গড়ার পক্ষপাতী নয় প্রাউট৷ বরং কৃষির পাশাপাশি অকৃষি জমিতে  বা  অনুর্বর জমিতে কৃষিভিত্তিক ও কৃষি সহায়ক শিল্প গড়ে তুললে তা বেকার সমস্যার সমাধানের পথ দেখাবে৷ প্রাউট–প্রবক্তার মতে, শ্রমিকরাই থাকবে শিল্পের মালিক৷ কাজ ও দক্ষতার ভিত্তিতে বেতন প্রথা চালু থাকবে শিল্পগুলিতে৷ তবে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের বেতনগত বৈষম্য থাকবে তবে তা খুব বেশী হবে না৷

এইভাবে কৃষি ও শিল্পের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে  প্রাউট ১০০ শতাংশ স্থানীয় মানুষের কর্ম সংস্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সমাজে অর্থনৈতিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়৷

প্রাউটের শিক্ষানীতি ঃ প্রাউট শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে পাশ্চাত্ত্যের বিজ্ঞান–প্রযুক্তি ও প্রাচ্যের আধ্যাত্মিক ভাবধারার সমন্বয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রণয়ন করেছে৷ যার দ্বারা কেবল অর্থকরী শিক্ষার পরিবর্তে ছাত্রছাত্রারা তাদের জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশের শিক্ষালাভ করতে পারে৷

প্রাউটের সাহিত্য বা শিল্পনীতি ঃ বর্তমানে আর্ট বা শিল্পের আদর্শ–ট্টব্জব্ধ ন্দ্রপ্সব্জ ট্টব্জব্ধ’ব্দ ত্রড়্ত্রন্সন্দ্ব অর্থাৎ শিল্পকলার জন্যেই শিল্পকলা৷ আর তাই বর্তমানে শিল্প–সাহিত্য–সঙ্গীত্ সবকিছুর মধ্যে রুচিবিকৃতির রমরমা৷ সুন্দর সংসৃক্তি অসংসৃক্তিতে পরিণত হয়ে সমাজকে অবক্ষয়ের পাঁকে নিমজ্জিত করেছে...অশ্লীলতার স্রোতে শ্লীলতাকে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ প্রাউট প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন–ক্সক্সট্টব্জব্ধ ন্দ্রপ্সব্জ ত্রন্দ্বব্জ্লন্ন্তুন্দ্ব স্তু চ্প্তন্দ্বব্দব্দন্দ্বস্ত্ অর্থাৎ সাহিত্য– শিল্পকর্ম যা কিছু সৃষ্টি হবে তা হবে মানুষ তথা সমাজের কল্যাণ ও মঙ্গলের জনে৷ শ্রী সরকার তাঁর ‘‘অভিমত’’ গ্রন্থে সাহিত্য শিক্ষা, শিল্পের রুচি প্রভৃতি কীরূপ হলে পরে মানুষ তার জীবনকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তুলতে পারবে তার সুষ্ঠু পথ নির্দেশনা দিয়েছেন৷ প্রাউট–প্রবক্তা নিজে বহু শিল্প সাহিত্য, ছড়া, গল্প, সঙ্গীতও (পাঁচ সহস্রাধিক সঙ্গীত) সমাজের কল্যাণার্থে সৃষ্টি করেছেন৷

প্রাউটের বিজ্ঞাননীতি ঃ প্রথমেই বলি জড়বাদ যেখানে পথভ্রষ্ট সেখান থেকে অধ্যাত্মবাদের শুরু৷ তাই অধ্যাত্ম্য চিন্তা বিজ্ঞানের পরিপন্থী তো নয়ই বরং বিজ্ঞানকে প্রাউটিষ্টরা সমাজ তথা সভতার আর্শীবাদ বলে মনে করে৷ প্রাউট–প্রবক্তা ‘বিজ্ঞানে’র সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে বলেছেন–‘‘জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সামাজিক, আর্থিক, মানবিক তথা আধ্যাত্মিক–প্রতিটি ভূমিতেই মানুষকে অধিকার সচেতন করে দেওয়ার নামই জ্ঞান বিস্তার করা আর এই অধিকারের পূর্ণ প্রয়োগের নামই বিজ্ঞানসাধনা৷’’ জড়বাদী সমাজের বস্তাপচা নীতি মানুষের মনকে বিকৃত করে সমাজজীবনে  ধ্বস নামিয়েছে৷ বিজ্ঞান প্রযুক্তি মানুষের শত্রু নয়–শত্রু মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তি, ঘাতকের হাতে ছুরি পড়লে তা নরহত্যার কারণ হয় আর সেই ছুরি উপযুক্ত ডাক্তারের হাতে পড়লে তা চিকিৎসায় রোগীর রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে৷ তাই দোষটা ছুরির নয়৷ দোষটা ছুরির ব্যবহারকারীর৷ বিজ্ঞান ঠিক ওই ছুরির মতই৷ প্রাউট চায়, ছুরি (বিজ্ঞান) ঘাতকের হাতে নয়, উপযুক্ত ডাক্তারের (নীতিবাদী ব্যষ্টি) হাতেই যেন থাকে৷ তাই আগামী দিনে বিজ্ঞান ও প্রজ্ঞার মণিকাঞ্চন যোগকে কাজে লাগিয়ে নোতুন পৃথিবী তৈরী করতে চায় প্রাউট৷

নীতিবাদী নেতৃত্ব ঃ নোতুন পৃথিবী সংরচনা কোন অবাস্তব অলীক চিন্তা নয়–সেই পৃথিবী সংরচনাতে সুষ্ঠু সমাজনীতি, ধর্মনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি প্রভৃতির ক্ষেত্রে প্রাউট প্রবক্তা যে নীতিগত, আদর্শগত ভাবনা সুসজ্জিত করেছেন তাকে বাস্তবের মাটিতে প্রয়োগ করার জন্যে চাই নীতিবাদী নেতৃত্বের যাঁরা অধ্যাত্ম ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঈশ্বর জ্ঞানে নিঃস্বার্থভাবে জগতের সেবা করবে৷ সর্বপ্রকার শোষণ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করে মানব জীবন ও সমাজ জীবনকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তুলবে৷ প্রাউট প্রবক্তার উজ্জীবিত এই নেতৃত্বই একমাত্র পারে প্রাউটের আদর্শে নোতুন পৃথিবীর সংরচনা করতে৷ (ক্রমশঃ)