সোশ্যাল মিডিয়ার ভালো-মন্দ

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া নামক একটি নোতুন জগতের সাথে আমাদের পরিচিতি ঘটেছে৷ এক বিংশ শতাব্দীর সূচনা লগ্ণ থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার পথ চলা শুরু৷ বর্তমান সময়ে এর প্রভাব ও বিস্তার উপেক্ষা করার মতো নয়৷ আট থেকে আশি সকলের কাছেই সমাদর লাভ করেছে সোস্যার মিডিয়া পরিবারের সদস্যবৃন্দ যেমন--- ফেসবুক , হোয়াটস আপ, টুইট্যার, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি ৷

লক্ষ কোটি মানুষের মেল বন্ধন ঘটেছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে৷ আঙুলের স্পর্শে ভৌগোলিক দূরত্ব মুছে যাচ্ছে, দেশ-মহাদেশ -মহাসাগর অতিক্রম করে মানুষ মিশে যাচ্ছে, একাকার হয়ে যাচ্ছে স্থান-কাল-পাত্র উপেক্ষা করে৷

সোশ্যাল মিডিয়ার সবচেয়ে বড় অবদান হলো প্রতিটি মানুষ নিজের কথা বলার একটা প্লাটফর্ম পেয়েছে৷ নিজের মতামত, অনুভূতি উপলদ্ধি সবকিছু  ভাগ করে নিতে পারছে অন্যের সাথে৷ সে দিক থেকে দেখতে গেলে সোশ্যাল মিডিয়া একটা সামাজিক বিপ্লব এনে দিয়েছে মানুষের সমাজে৷ সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের ছবি যেমন আমরা দেখতে পাচ্ছি তেমনি ব্যক্তি মানুষের চাওয়া-পাওয়া বেঁচে থাকা, জীবন সংগ্রামের চালচিত্রও ফুটে উঠছে৷ শুধু তাই নয় পৃথিবীর নানা জনজাতি, নানা সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-দর্শন -রাজনীতি সমাজনীতি প্রভৃতি জ্ঞান সাম্রাজ্যের মণিমুক্ত আদান-প্রদান করে নিচ্ছি৷ সেদিক থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময়ের অন্যতম বিশ্বস্ত মাধ্যম হয়ে উঠেছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ এছাড়া সমাজের নানা ব্যাভিচার, প্রতিবন্ধকতার কুসংস্কার, গোঁড়ামির মূলেও কুঠারাঘাত করছে সোশ্যাল মিডিয়া৷

এতো ভালোর মধ্যেও সোশ্যাল মিডিয়ার নেতিবাচক দিকগুলোকে উপেক্ষা করা যায় না৷ বরং এ বিষয়ে আমাদের সকলের সচেতন থাকা উচিত ও অন্যকে সচেতন করা উচিত৷ সোশ্যাল মিডিয়ার দ্বারা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে টিনেজারসরা অর্থাৎ যাদের বয়স ১৩-১৯ এর মধ্যে৷ তারা জেনে বা না জেনে সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ছে যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের জীবন সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে৷social media addiction এর কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় অতিবাহিত করছে স্মার্ট ফোনে, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে৷ যার ক্ষতিকর প্রভাব তাদের মানসিক, সামাজিক,শারীরিক বিকাশে প্রতিফলিত হচ্ছে৷

পড়াশোণার প্রতি তীব্র অনীহা, মনঃসংযোগের ঘাটতি, সমবয়সী বন্ধু-বান্ধবদের সাথে সামাজিক মেলামেশা এসব কিছুই ভীষণভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে৷

সেই সাথে সন্তানদের এহেন পরিস্থিতিতে মা-বাবাদের মধ্যে দুশ্চিন্তা ও ভয় দানা বাঁধছে৷ যারফলে পারিবারিক জীবনেও দেখা যাচ্ছে৷ চরম বিশৃঙ্খলা৷

ছাত্র-ছাত্রা ছাড়াও সমাজের সর্বস্তরের মানুষ কমবেশি স্যোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সংক্রামিত হচ্ছেন৷ অবসর সময়ে বইপড়া, গানশোণা, নাটকদেখা থেকে বিরত দুয়ে সবাই হুড়মুড়িয়ে ঢুকে  পড়ছেন স্যোশাল মিডিয়ার অন্ধগলীতে৷ নিজেরই অজান্তে ধীরে ধীরে আসক্ত হয়ে পড়ছেন সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি৷ ভোগবাদী সমাজ ব্যবস্থার প্রধান কারিগর মানুষকে ভোগ লালসার বস্তু বানাতে বিশেষ সহযোগীতা করছে সোশ্যাল মিডিয়া৷ চোখ ধাঁধানো পণ্য সামগ্রীর হাতছানি,উগ্র ও নীতি নৈতিকতাহীন স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপনের প্রতিনিয়ত প্রেরণা জোগাচ্ছে আমাদের এই সাধের সোশ্যাল মিডিয়া৷

সময়ের সাথে সাথে সামাজিক সম্পর্কগুলো ক্রমশ প্রাণহীন, নীরস, অসাড় হয়ে যাচ্ছে অথচ Virtual world- এ মিথ্যে সম্পর্কের জাল মাকড়সার জালকেও হার মানাবে৷ মানুষ সাময়িক নিজের একাকীত্ব, অসহায়ত্বকে ভুলে থাকার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অংশ নিচ্ছে৷ কিন্তু নিজের অজান্তেই চোরাবালির মতো ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকারী অধিকাংশই আত্মপ্রচার ও নিজের ঢাক নিজে পেটানোর তত্ত্বেই আটকে আছেন৷ খুবই ব্যতিক্রমী কিছু মানুষ আছেন৷ যাঁরা প্রকৃত অর্থে সোশ্যাল মিডিয়াকে ‘‘সর্বজন হিতায়চ,সর্বজন সুখায়চ’’ এর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চান৷ সময় থাকতে থাকতে সাবধান না হলে সমূহ বিপদ আমাদের৷ তাই পাঠকের প্রতি আমার আবেদন সোশ্যাল মিডিয়ার  সঠিক ব্যবহার করুন অন্যকে সঠিক ব্যবহারে বাধ্য করুন৷ আসুন, সোশ্যাল মিডিয়ার সাহায্যে মানুষের সেবা ও কল্যাণের অঙ্গীকার একটি নোতুন পৃথিবী গড়ে তোলার স্বপ্ণ দেখি৷