সৎ নীতিবাদীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের হাল ধরার সময় এসেছে

লেখক
প্রবীর সরকার

ভারতের দলতন্ত্র যার নাম দেওয়া হয়েছে গণতন্ত্র, বর্ত্তমানে সেটি খণ্ড ক্ষুদ্র স্বার্থের যূপকাষ্ঠে মহা সংকটের মধ্যে অবস্থান করছে৷ মনে পড়ে গত ১৯৭৫ সালের অভ্যন্তরীণ জরুরী অবস্থার পর কংগ্রেসী স্বৈরতন্ত্রের অবসান ঘটে৷ জনতাদলের শাসন কায়েম হয়৷ সেই সময় ছোট দলগুলো জনতা দলকে সমর্থন জানায়৷ সেই পরিস্থিতিতে দিল্লীর জুমা মসজিদের প্রধান ইমাম আবদুল্লা বুখারি সেই কেন্দ্রীয় মিলিজুলি সরকারকে সমর্থন জানিয়ে ঘোষণা করেন –‘গুলসান–ই–গুলসান’৷ অর্থাৎ পাঁচ ফুলের মিলিত সাজি৷ কিন্তু দলতন্ত্রের স্বার্থান্ধতায় সেই গুলসান শুকিয়ে মিলিয়ে যায়৷ সেটা ছিল সেই আজকের যে আওয়াজ উঠছে ছোট ছোটদলের ফোডারেশন বা ফ্রন্ট গড়ার ইচ্ছা তেমনই কিন্তু ধোপে টেঁকেনি৷

আবার দেখা গেল সেই ইন্দিরাগান্ধীর দল উঠে এলো বৃহত্তম দল হিসাবে৷ তাকে সমর্থন দিলো বাইরে থেকে ভিন্ন মেরুতে অবস্থানকারী কমিউনিষ্ট দলগুলো যেমন সিপিআই, সিপিএম–ও অন্যান্যরা দলীয় স্বার্থে৷

তারপর দেখা গেল বিজেপিকে কোণঠাসা করতে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী লোকসভা নির্বাচনে দলের মুখপত্র হয়ে প্রচারে নামছেন ও আদবানি পিছন সারিতে চলে গেছেন তাই এন ডি এ জোটের শরিক বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার জনতাদল ইউনাইটেড এর নেতা ও সভাপতি শারদ যাদব এন ডি এ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন৷ তাঁরা আলাদা ফ্রন্টের  চিন্তা করছেন৷ তাঁরা নরেন্দ্র মোদিকে পছন্দ করছেন না৷ পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসে সিপিএমের ৩৪ বছরের রাজ্যপাঠ তুলে দিয়ে বাঙলা দখল করেছে৷ বাঙলা হাতছাড়া হওয়ায় সর্বভারতীয় রাজনীতিতে  সিপিএম তার গুরুত্ব হারিয়েছে৷

কিন্তু ভারতের রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় শাসন পরিচালনার নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে থাকে উত্তর ভারত৷ দক্ষিণ ভারত হাওয়া বুঝে সমর্থন জানায়৷ অদ্যাবধি সর্বভারতীয় দল হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে কংগ্রেস ও বিজেপি৷ সম্প্রতি দক্ষিণে কংগ্রেস কর্নাটকে শাসনে এসেছে বিজেপিকে সরিয়ে কিন্তু উত্তর ভারতে এই দল কায়দা করতে পারেনি সম্প্রতি মধ্যবর্ত্তী নির্বাচনে৷

এটা বেশ বোঝা যায় যে পরিকাঠামোতে ভারতীয় সংসদীয় গণতন্ত্র চলছে তাতে ‘‘ট্রাডিশন’’  শব্দটাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না৷ দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো একটি ট্রাডিশন নিয়ে চলেছে৷ আর উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোও সেই তাদের মতোই প্রাচীন ধারাকে বহন করছে৷ এই ধারাটাকে কাটিয়ে উঠে এক নোতুন প্রগতিশীল চিন্তা ভাবনাকে নিয়ে এগুতে হলে যে মানসিক উন্নয়নের প্রয়োজন সেটা কিন্তু দলগুলোই নানা ফন্দি–ফিকির করে সেই পথ বন্ধ করে রেখেছে৷ আজও দেশের কোটি কোটি মানুষ নিরন্ন ও দিনযাপনের গ্লানি বহন করে চলেছে৷ প্রতিটি নাগরিকতো বাধ্যতামূলক হিসাবে ভোট দেয় না৷ তাই যেনতেন প্রকারে ভোট পর্ব সমাধা করে দলগুলো কৌশলে জিতে আসে৷ ভারতীয় সংবিধানের কিছু ত্রুটি দূর করা দরকার৷ নির্বাচনে ভোট দান করাটা আবশ্যিক হওয়া দরকার৷ এক সময় হয় কংগ্রেস না হয় বিজেপি সারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য হতে যে আসন লাভ করবে সেই অনুপাতে তৃতীয় ফ্রন্ট নামধেয় দল তা সংগ্রহ করতে সক্ষম হবে বলে মনে হত না৷ বর্তমানে দেশে কংগ্রেস তার গুরুত্ব অনেকটাই হারিয়েছে উপযুক্ত নেতার অভাবে৷ তাই প্রথমবার ব্যর্থ হওয়া সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদীর এন.ডি.এ আবার দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরে আসে৷ কংগ্রেস              অপ্রাসঙ্গিক, বিভিন্ন রাজ্যের আঞ্চলিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না৷ আসলে ভারতের রাজনীতিতে সৎ ও নীতিবাদী নেতৃত্বের অভাব৷   তাই রাজনীতি হতে দুর্নীতি উৎখাত করতে দরকার সৎ নীতিবাদী বিশ্বৈকতাবোধে উদ্বুদ্ধ একদল তরুণ ও তরুণী৷ যাঁরা দেশ ও দেশের স্বার্থে দলহীন গণতন্ত্রের আওয়াজ তুলেবেন ও সেই পথে এগুবেন৷ এ ব্যাপারে ‘প্রাউট’তথা প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্বের যে সদ্বিপ্র নেতৃত্বের কথা বলা হয়েছে তারাই নূতন পথ দেখাবে৷