‘‘তন্মাত্র ও মাইক্রোবাইটাম’’

লেখক
সমরেন্দ্রনাথ ভৌমিক

মাইক্রোবাইটাম ধনাত্মক কিংবা ঋনাত্মক যাই হোক না কেন এরা অত্যধিক সুক্ষ্ম সত্তা৷ তাই সবকটি তন্মাত্রের মধ্য দিয়েই এরা বাহিত হয়৷ যতগুলি তন্মাত্র আছে, তার মধ্যে শব্দ তন্মাত্র হ’ল  সব চাইতে সুক্ষ্ম তন্মাত্র৷ এই শব্দ তন্মাত্র আমাদের শ্রবণ নাড়ীতে গৃহীত ও বাহিত হয় এবং বিভিন্ন গতিশীল সত্তায় স্পন্দিত হয়৷ শব্দ-তন্মাত্রের চেয়ে স্পর্শ-তন্মাত্র বেশী সূথল, এর চাইতেও বেশী স্থূল হ’ল রূপ-তন্মাত্র ৷ এইরূপ তন্মাত্র আলোক তরঙ্গে গৃহীত ও বাহিত হয়৷ আবার রূপ তন্মাত্রের চেয়ে রস-তন্মাত্র আরো বেশী স্থূল, যা তরলের মধ্যে গৃহীত ও বাহিত হয়৷ সব চাইতে স্থূল তন্মাত্র হ’ল গন্ধ-তন্মাত্র, যা গন্ধরেণুর দ্বারা বাহিত হয়৷

সাধারণতঃ তন্মাত্র যত সুক্ষ্ম হয়, পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম তত সহজে তার মধ্য দিয়ে বাহিত হ’তে পারে, এবং তন্মাত্র যত স্থূল হয়, নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম্ ততই সহজ বাহী হ’য়ে থাকে৷

মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব অনুযায়ী আসক্তি, অনুরক্তি, রক্তির  ভাব প্রভৃতির উপরও  মাইক্রোবাইটামের গতি নির্ধারিত হয়৷ যেমন শব্দ-তন্মাত্র যদিও সব চাইতে সুক্ষ্ম তন্মাত্র তথাপি এই তন্মাত্র সর্বদা পজেটিভ মাইক্রোবাইটামের বাহক হবে একথা হলপ করে বলা যায় না৷ নেগেটিভ শব্দ হ’লে  অর্থাৎ আজকের নিম্ন মানের ছা-র্যা-র্যা গান কিংবা ডিজিট্যাল বক্সের বিকট শব্দ প্রভৃতি কে জড়াশ্রয়ী তন্মাত্র বলে৷ এই সমস্ত শব্দ-তন্মাত্র জড়ভাবাশ্রয়ী হওয়ায় এই শব্দ-তন্মাত্রের মধ্য দিয়ে নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম বাহিত হবে৷ এক্ষেত্রে শব্দ  তন্মাত্র সবচাইতে , সুক্ষ্ম-তন্মাত্র হওয়া সত্ত্বেও এই তন্মাত্র আর পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম বহন ক’রবে না৷ তাই বুদ্ধিমান মানুষের উচিত সুক্ষ্ম ভাবানুশ্রয়ী-তন্মাত্র গ্রহণ করা ও স্থূল ভাবানুশ্রয়ী তন্মাত্রকে বর্জন করা৷ নোংরা নিম্নমানের  শব্দ তরঙ্গকে নেগেটিভ সাউন্ড বলে৷ উচ্চমানের সূক্ষ্মভাবাশ্রয়ী শব্দের উদাহরণ হ’ল  কীর্ত্তন, প্রভাত সঙ্গীত, আনন্দ সংগীত, রবীন্দ্রসংগীত প্রভৃতি৷ ‘বাবা নাম্ কেবলম্’ কীর্ত্তন হ’ল পজেটিভ সাউন্ডের উৎকৃষ্ট উদাহরণ৷ এই কীর্ত্তনের সময় অজস্র পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম বাহিত হয়৷ তাই সৎলোকেরা ও সাধক লোকেরা  হবেন  পজেটিভ শব্দ-তন্মাত্র অনুরাগী৷ আবার, গন্ধ-তন্মাত্র যদিও  সবচাইতে স্থূল তন্মাত্র তথাপি গন্ধ যদি সুক্ষ্ম ভাবানুশ্রয়ী হয়, তবে তা শেষ পর্যন্ত পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম তৈরী ক’রে দেবে৷ সাধারণত দুর্গন্ধ নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম  বহন করে, আর সুগন্ধ পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম বহন করে৷

সুগন্ধ বা দুর্গন্ধ যাইহোক কেন এটা সম্পূর্ণভাবে আপেক্ষিক তত্ত্ব৷ যে জীবের যেমন মনের সংস্কার সেই অনুযায়ী বা তার  উপর ভিত্তি করে কোন গন্ধকে সুগন্ধ ও কোন গন্ধকে দুর্গন্ধ বলা  হয়৷ কোন গন্ধ সুগন্ধ কিংবা দুর্গন্ধ যাই হোক না কেন প্রথমে জীবের নাসারন্ধ্রের মধ্যে দিয়ে গন্ধরেণু গ্রহণ করে এবং এরপর ঐ গন্ধ রেণু হতে যে তরঙ্গের সৃষ্টি হয় সেই তরঙ্গ গন্ধবাহী স্নায়ুকোষে পৌঁছায় ও গন্ধের অনুভূতি জাগায়৷ এখন,এই গন্ধ যদি ঐ জীবের সংস্কার অনুযায়ী অনুকূল বেদনীয়ম্ হয় তবে ঐ গন্ধ ঐ জীবের ক্ষেত্রে সুগন্ধ ও প্রতিকূল বেদনীয়ম্ হলে ঐ গন্ধকে দুর্গন্ধ বলে মনে ক’রবে৷ যেমন---কোন জীব যখন ভাগাড়ে মরে পড়ে পচতে থাকে তখন তা থেকে নির্গত গন্ধ মানুষের কাছে দুর্গন্ধ লাগে, কিন্তু শকুনের সংস্কার অনুযায়ী শকুনের কাছে ঐ গন্ধ আর  দুর্গন্ধ লাগে না বরং ঐ  গন্ধ শকুনের নাসারন্ধ্রে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে শকুন ঐ গন্ধযুক্ত মরা জন্তুর দিকে ছুটে যায়৷ অথচ মানুষ ঐ মরা মাংস খেলে নানা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, হয়ত বা মৃত্যুও হ’তে পারে৷ আবার মানুষের ক্ষেত্রেও নিজ নিজ সংস্কার অনুযায়ী  গন্ধের এই অনুকূল ও প্রতিকূল বেদনীয়মের পার্থক্য ঘটে থাকে৷ একজন রাঢ়ের মানুষ  হয়ত শুকটি মাছের গন্ধে অতিষ্ট হ’য়ে পালাই পালাই করবে, আবার এই রাঢ়ের মানুষের মধ্যে এমন মানুষ  অনেকেই আছেন, এই শুকটি মাছ তাঁদের কাছে অমৃত তুল্য৷ এটা হয় মনের সংস্কারের জন্য৷ যখন জীব মরে যায় তখন তার দেহ পচ্তে থাকে ও দেহ ক্রমশ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে খণ্ডিত হ’তে থাকে৷ এই খণ্ডিত হওয়ার সময় ঐ পচা দেহ হ’তে দুর্গন্ধের রেণু বিপুল পরিমাণে নির্গত হতে থাকে৷ গলিত পচা মর দেহকে  খাবার জন্য এতে এক ধরনের কীটানু জন্ম গ্রহন করে, যা বাহিত হ’য়ে থাকে গন্ধের মাধ্যমে৷ এই বাহিত কীটানুগুলো হ’ল একধরনের  নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম৷ আর যা সুগন্ধ সৃষ্টির জন্য আসে তা হ’ল পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম৷

জীব যখন প্রাণশক্তি  ও মনশক্তির  অভাবে  মারা যায় তখন মরদেহটি খণ্ড ও বিখণ্ড হ’তে হ’তে বিভাজিত হয় এবং  এইভাবে  বিভাজিত হ’তে হ’তে  পঞ্চভূতে  বিলীন হ’য়ে যায়৷ এই সময়ে এর থেকে দুর্গন্ধ নির্গত হয়৷ কিন্তু যদি এই প্রাণশক্তি ও মনশক্তির  সংশ্লেষ Synthesis) ঘটনা ঘটে, অর্থাৎ একীভূত করা হ’লে সেখানে পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম কাজ করে ও সুগন্ধ আসে৷

ভক্ত স্বভাবের মানুষ বা যোগাচারী মানুষ সাধারণতঃ সুগন্ধযুক্ত  হ’য়ে থাকেন৷

ঈশ্বর প্রেমের যতগুলি লক্ষণ আছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে সুরভিস্যন্দ৷ তাই দেখা যায়, মানুষ যদি একান্তে বসে কিছুক্ষণের  জন্য পরম পুরুষের  সান্নিধ্য পাওয়ার  জন্য চেষ্টা  করে তবে  তার কাছে  থেকে সুগন্ধ উত্থিত হয়৷ এটা হ’ল পরম পুরুষের  একান্ত কৃপা৷

নেগেটিভ মাইক্রোবাইটাম বিভিন্ন ধরণের ক্ষতিকর  কার্য্য ঘটায় তন্মাত্রের সাহায্যে৷ বিভিন্ন ধরনের  রোগ ছড়ায় এই তন্মাত্রের সাহায্যে৷ দেশ-দেশান্তর থেকে গ্রহ-গ্রহান্তর হ’তে, এমনকি মহাকাশের দূরপ্রত্যন্ত হ’তে ক্ষতিকারক রোগের বীজ এরাই বহন ক’রে  নিয়ে আসে, আর অপর দিকে  পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম গ্রহ গ্রহান্তর হতে, নীহারিকার সুদূর প্রত্যন্ত হ’তে বহন ক’রে নিয়ে আসে শুভ ভাবনা, শুভ সংবেদন৷  আমাদের এই বিভিন্ন ভাবনাকে সংশ্লেষনের পথে নিয়ে ঐ ভাবনাকে মহাবোধিতে পরিণত ক’রে দেয়৷ শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে বলেছেন---‘‘পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম তৈরী করা  কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না, এমন কি কোন মহাপুরুষ তথা সাধকের পক্ষেও সম্ভব না, অর্থাৎ  এই পজেটিভ মাইক্রোবাইটাম হ’ল পরমপুরুষের উৎসারিত কনা, আর এই উৎসারিত কনাই হ’ল পরম পুরুষের জ্যোতিরাশিস্৷’’ (ক্রমশঃ)