ত্রিপুরায় বাঙালীর অস্তিত্ব সঙ্কট

লেখক
দুলাল ঘোষ

বাঙালীদের জন্য সুখবর--- এন.আর.সির দাবি নিয়ে চলছে আন্দোলন, আমরা কিন্তু কেউ বাঙালী না৷ আমরা এখন নিজেকে  বড় কংগ্রেস, কমরেড, বিজেপি বলতে ভালোবাসি৷ বাঙালী পরিচয় দিতে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পাই৷ আমরা এখন রবীঠাকুর, বিনয়, বাদল, দীনেশ, সুকান্ত, নজরুল,নেতাজীর বংশধরের বাঙালী পরিচয় দিতে লজ্জা পাই৷ আমরা এখন লেলিনের, চের, বড় বড় নেতাদের কথায় নাচতে ভালোবাসি৷ যদি ছেলেটার, চাকরি হয়, যদি লোনটা পায়৷

আগে যারা কংগ্রেস করত তারা এখন বলে কংগ্রেস দেশটাকে শেষ করে গেছে৷ লালরা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা বাঙালীকে বার বার দাঙ্গা হাঙ্গামা করে বাঙালীদের শেষ করে দিয়েছে৷ আর এখন যারা ক্ষমতায় আছে তারাও যদি চলে যায় তখন কি বলবে জানি না৷ এই সব দলের কারণে বাঙালী একবার দেশভাগের শিকার হয়ে চৌদ্দপুরুষের  ভিটেমাটি ছেড়ে এসেছে৷ লালের কারণে এডিসি থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে৷ কংগ্রেস দিয়েছে তিনটি জেনারেল সিটকে রিজার্ভ করে৷ আর বিজেপি নূতন করে রাষ্ট্রহীন বানিয়ে পথে নামাবে৷ যে যেই দল করুন গুজরাটে মুম্বাই যান আর দক্ষিণ ভারতে যান আপনি এদের চোখে  বাংলাদেশী৷ আশির দশকের আগে পর্যন্ত আপনি ত্রিপুরার যে কোন জায়গায় যেতে পারতেন৷ এখন যদি বলি আপনি ত্রিপুরার মূল সড়ক থেকে কিলোমিটার ভিতরে ঘুরতে কিংবা চাকরি করতে নিশ্চয় যেতে পারবেন না!

শুধু ত্রিপুরা  কেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের যে কোন রাজ্যে কোন বাঙালী লোক সদর্পে ঘুরে আসতে পারবে কি না জানিনা৷ কিন্তু বাঙালীবাদে অন্যজাতির  লোক যে কোন রাজ্যে ঘুরতে পারবে৷ যতগুলো দল করেছেন৷ সবাই বাঙালী জাতিকে ধবংস করে দিচ্ছে৷ আর আজ হোক কাল হোক এন.আর.সি হবেই৷ মাত্র আমরা বাঙালী দল ছাড়া কেউই জোর কদমে এন.আর.সি বিরোধীতা করবে না৷ কারণ তাদের ভোট লাগে, কারণ তাদের মধ্যে একতা আছে৷ আর বাঙালী জাতির একতা নেই, এই জাতির  দুর্দশা থাকবেই৷ আপনি,  দল করুন কোন দল বাঙালী জাতির  বিপদে দাঁড়াবে না৷ কারণ তাদের সবার উদ্দেশ্য বাঙালীকে  ধবংস করা৷ কাঞ্চনপুরবাসীদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে৷ কাদের জন্য৷

পঃবঙ্গে হিন্দু মুসলিমে, ত্রিপুরাতে জাতি উপজাতিতে, অসমে অসমীয়া বাঙালীতে লাগিয়ে ভেকধারী দলগুলি বাঙালী জাতির উপর ছুরি চালিয়ে যাচ্ছে৷ আর বাঙালী ভাবছে আমার কিছু হয়নি৷ হবে, অপেক্ষা করুন৷ আর বাঙালী জাতি যে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে এই জেনেই সৃষ্টি হয়েছিল ‘আমরা বাঙালী’ দল৷ কারণ একদিন আসতে হবেই এই দলে, এছাড়া যে এই জাতির পাশে দাঁড়াবার কেউ থাকবে না৷ দেখবেন গ্রাম পাহাড়ে যখন বাঙালীরা উগ্রপন্থীর আক্রমণে পড়ে তখন কি বলে জানেন৷ দুনিয়ার বাঙালি এক হও৷ তখন কিন্তু লাল সাদা লাল গেরুয়া বলে লাভ হয় না৷ কারণ মুনি ঋষিদের স্বপ্ণ কখনো ব্যর্থ যাবে না৷ একটা কথা আছে বাঙালী আজ যা ভাবে অন্যরা অনেক পরে ভাবে৷ আর বাঙালী তখনই বাঙালী হতে পারবে যখন অন্যের গোলামী ছেড়ে নিজের জাতিকে ভালবাসতে পারবে৷ আর এইটাও ঠিক ‘আমরা বাঙালী’ দলই একদিন বাঙালীজাতিকে নূতনভাবে উদ্বুদ্ধ করে বাঁচার স্বপ্ণ দেখাবে৷