প্রভাতী

নুকাইঁ নুকাইঁ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

তৃতীয় ধরনের কপটাচরণও আমরা কম দেখি না৷ শুনেছিলুম, আমেরিকায় এক ভদ্রলোক একটি প্রচণ্ড রকমের মদ্যপান–বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন৷ এক জনসভায় মদের অপকারিতা সম্বন্ধে তিনি ওজস্বিনী ভাষায় ঠায় এক ঘণ্টা বত্তৃণতা করেছিলেন৷ তারপর বললেন–উঃ, উঃ গলা শুকিয়ে গেছে, এক গ্লাস ব্র্যাণ্ডি দাও৷       

* * * * * * * *

সেবার আমি সাহেৰগঞ্জ থেকে দুমকা যাচ্ছি৷ সুদীর্ঘ পথ৷ সাহেৰগঞ্জ শহর পার হবার পরই শুরু হল পাহাড় আর জঙ্গল৷ পশ্চিম রাঢ়ের এই প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রাকৃতিক দৃশ্য অতি রমণীয়৷ ইচ্ছে হ’ল, এই পাহাড়–জঙ্গলের মধ্য দিয়ে মাইল খানেক পায়ে হাঁটি৷ গাড়ি থেকে নেৰে পড়লুম..........হাঁটতে শুরু করলুম৷ কিছু দূর যাবার পর দেখছি, পায়ে নতুন জুতো–পরা সাত–আট বছরের একটি ন্যাংটো ছেলে কঞ্চি দিয়ে মাঠের একটি গর্ত্তের মধ্যে খোঁচা দিচ্ছে৷ আমি তাকে জিজ্ঞেস করলুম–তুর নাম কী বটেক

সে বললে–রামকৃষ্ণ তুরী বটেক গো৷

আমি বললুম– কী করছিস বটেক

ছেলেটি বললে–ইন্দুর ধরছি৷

আমি জিজ্ঞেস করলুম–ইন্দুর লিয়ে কী করবি

সে বললে–পুড়াই খাব৷

আমি জিজ্ঞেস করলুম–ব্রাহ্মণ–কায়স্থরাও খায়

সে বললে–হঁ, উয়ারা নুকাইঁ নুকাইঁ খায়৷

এই ‘নুকাইঁ নুকাইঁ খাওয়া’ লোকের সামনে নিজের ত্রুটি ঢ়াকার অপচেষ্টা৷ এটাও এক ধরনের কপটতা৷

ধরা আর সরা

দেশজ শব্দে ‘ট’ যথাযথভাবেই বজায় থাকে৷ আর ‘ড’ বা ‘ড়’ মৌলিক শব্দ হিসেবেই থেকে যায়৷ যেমন, আজ ভুলোর সঙ্গে ভোঁদার আড়ি হয়ে গেল৷ ওরা বলছে, ওরা আর একসঙ্গে মার্ৰেল খেলবে না, একটা পেয়ারাও আর কামড়াকামড়ি করে খাবে না৷ গোপনে কান পেতে শোনাকেও আড়িপাতা বলে৷ এটিও বাংলা দেশজ শব্দ৷

সেই যে একজন মহিলা আহ্লাদে আটখানা হয়ে তার এক ৰন্ধুকে বলেছিল–তোমার সঙ্গে দেখা হওয়ায় আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে তা ভাষায় বলতে পারছি না৷ ৰন্ধু বলেছিল, তোমার যে কী আনন্দ হচ্ছে তার একটু আভাস আমায় দাও৷ মহিলাটি বলেছিল, আহ্লাদের আতিশয্যে আমার এখন ধরাকে সরা মনে হচ্ছে৷ সেই সময় হয়েছে কী, একজন চাষীর গোরু হারিয়ে গেছে৷ সে গোরু খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত হয়ে যে বাড়ির বারান্দায় বসেছে সেই বাড়িরই ঘরের ভেতর ওই মহিলাটি বলছে– আমি আনন্দের আতিশয্যে ধরাকে সরা মনে করছি৷ চাষী আড়ি পেতে কথাটা শুনে নিলে৷ এবার সেও আনন্দের আতিশয্যে ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে ঘরের বাইরে থেকে ওই মহিলাটিকে গড় করে বললে–মা লক্ষ্মী, এই বিরাট ধরাটা যখন তোমার কাছে সরা হয়ে গেছে তখন দয়া করে বলে দাও, ওই সরার কোন্খানটিতে আমার গোরুটা রয়েছে৷

শিবরাত্রির কথা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বারাণসীতে এক ব্যাধ ছিল৷ বনে পশু শিকার করাই ছিল তার জীবিকা৷ একদিন একটা হরিণ শিকার করতে তাকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল৷ হরিণের পেছনে ধাওয়া করতে করতে সে বনের অনেক গভীরে ঢুকে পড়েছিল৷ ফলে বন থেকে ফিরতে সেদিন তার সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত হয়ে গিয়েছিল৷ সেই বনে ছিল বাঘের উপদ্রব৷ বাঘের ভয়ে ব্যাধ তখন একটি উঁচু বেল গাছের ওপর আশ্রয় নিল৷ রাতটা শেষ হলেই সে বাড়ি ফিরে যাবে৷

সেদিন ব্যাধ অনেক পশু শিকার করেছিল৷ তাই সে বড় ক্লান্ত ছিল৷ রাত গভীর হতেই গাছের ওপর সে ঘুমিয়ে পড়লো৷ সেই গাছের নীচে ছিল শিবলিঙ্গ৷ রাত্তিরে ব্যধ যখন ঘুমোচ্ছিল তখন তার গা থেকে এক ফোঁটা ঘাম শিবলিঙ্গে পড়লো৷ সেদিনটা ছিল শিবরাত্রির দিন৷ আর ব্যধও ছিল সারাদিন উপবাসী৷ মহাদেব ব্যাধের একফোঁটা ঘামেই সন্তুষ্ট হন৷ অজান্তেই ব্যাধ শিবের বরে হয়ে গেল মহাপুণ্যবান৷ তাই যথা সময়ে ব্যাধের মৃত্যুর পর যখন যমদূত এসে তাকে নরকে নিয়ে যেতে চাইল, তখন শিবদূত এসে তাকে বাধা ছিল৷ শিবদূত ব্যধকে নিয়ে গেল শিবলোকে অর্থাৎ কৈলাসে৷

এই আদিম মিথোলজি তথা লোকপুরাণের কাহিনীই শিবরাত্রির ব্রতকথায় রূপান্তরিত হয়েছে৷ এই সব ব্রতকথাকে বলা হয় অলিখিত সাহিত্য৷ এককালে মুখে মুখেই এইসব অলিখিত সাহিত্য আমাদের মা-বোনেদের মুখে মুখে প্রচারিত হয়েছে৷ ভিন্ন ভিন্ন মুখে একই কাহিনীর রূপান্তর ঘটাও তাই অস্বাভাবিক কিছু নয়৷

যেমন, এই কাহিনীতেই অনেকে বলেন, বেল গাছে যখন ব্যাধ ঘুমিয়েছিল তার নড়াচড়াতে কিছু বেলপাতা খসে গাছের নীচে শিবরূপী পাথরের ওপর পড়েছিল৷ আর পড়েছিল কয়েক ফোঁটা শিশির৷ শিব ভাবলেন, ব্যাধ বুঝি বেলপাতা আর জল ঢেলে পুজো করছে৷ তাই শিব সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দিলেন৷

ফাল্গুনী কৃষ্ণা চতুর্দশীতে শিশিরের চাইতে ক্লান্ত ব্যাধের ঘাম ঝরাটাই বেশি বাস্তবসম্মত নয় কি?

দেবকুলে সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবতা হলেন শিব৷ বৈষ্ণবধর্ম প্রভাবিত কিছু অঞ্চল বাদ দিলে বাংলার প্রায় সর্বত্রই শিবের রাজত্ব৷ শিব নানা সময়ে নানারূপে পূজিত হন৷ ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে কুমারী মেয়েরা শিবরাত্রি পালন করে৷ ‘‘ক্ষ্যাপার চৌদ্দ ক্ষ্যাপীর আট৷ এ নিয়েই কাল কাট৷’’ ক্ষ্যাপা হচ্ছে শিব, চৌদ্দ অর্থাৎ ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী (শিবরাত্রি)৷ মেয়েরা সেদিন উপোস করে শিবের মাথায় দুধ বা জল ঢালে৷ ওইদিন মেয়েদের রাত জাগতে হয়৷ শিবরাত্রির উদ্যোক্তা মূলত কুমারী মেয়েরা হলেও পুরুষ, বিধবা ও সধবারাও শিবরাত্রি পালন করেন৷

কুমারী মেয়েদের শিবরাত্রি পালনের অন্যতম উদ্দেশ্য শিবের মতো বরপাওয়া৷ এটাই প্রচলিত ধারণা৷ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের কথায় বলি---‘বিবাহ’ শব্দটির শাব্দিক অর্থ দাঁড়াচ্ছে, বিশেষ এক ধরণের দায়িত্ব নিয়ে নোতুনভাবে জীবনধারাকে প্রবাহিত করা৷...শিব এই দায়িত্ব নিয়েই বিবাহ করেছিলেন৷ তাই আমরা নির্দ্ধিধায় বলতে পারি এই বিশ্বের প্রথম বিবাহ শিবই করেছিলেন৷ (নারীর মর্যাদা)... এই বিশ্বে শিবই ছিলেন প্রথম বিবাহিত পুরুষ৷ তাঁর আগে কোন বিবাহিত পুরুষ ছিল না৷ তাই কোন পুরুষই পারিবারিক দায়িত্ব বলতে যা বোঝায় তা বড় একটা নিত না৷ হয়তো বা পশুদের মতই খুব অল্পসল্প দায়িত্ব নিত৷’’ (নমঃ শিবায় শান্তায়-শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি)৷ তাই আনন্দমূর্ত্তিজী একথাও বলেছেন শিবই প্রথম বিবাহের মধ্যে দিয়ে নারী জাতিকে সংসারে সমাজে সম্মানের আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ তাই প্রত্যেক নারীরই উচিত শিবের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা৷

বৃহদাষেণা

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

আমরা দেবশিশু,

বসুধা জননীর কোলে লালিত,

হাতে হাত ধরে চলেছি পথ,

বৃহদভাবে হয়েছি ভাবিত,

ছন্দিত জীবনে এল প্লাবন,

হর্ষ আহ্লাদ ঘিরে চারিধার,

জেগেছে স্পন্দন দেহ মনে

ক্ষণে ক্ষণে শুনছি কিবা ধবনি

যেন হাতছানিতে কেহ ডাকছে

মেতেছে মন অনাবিল আনন্দে...!

মহতি প্রয়াসে হয়েছি ধন্য

ক্ষুদ্রত্ব গেছে সব সরে,

দুঃখ বেদন যেন নাহি আর

চারিধারে আনন্দ পারাবার,

কাণ্ডারী হয়েছে নিজে দ্বারি

শরণাগত মোরা তাঁরই৷

আহা মরি কী আনন্দ!...

এত সুখ রাখি কোথা বলো,

দিই বিলায়ে সব আপন জনে,

মথিত হৃদয় আসে ছুটি

দিতে আর নিতে মিলাতে মিলিতে

আপনার সবে মানি!

তুমি পৃথিবীর শক্তি

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

তুমি প্রকৃতি, তুমি জননী,

তুমি কন্যা, তুমি ভগিনী,

মোর অথৈ জলের তরনী,

তুমি দেখায়েছো মোরে অবনী৷

 

জীবনে প্রথম শিক্ষাদাত্রী

স্নেহ ঢালিছো দিবস রাত্রি৷

 

জগতে যত বড় সাফল্য

নারীর ভূমিকা সেথা অতুল্য৷

কখনো সামনে অথবা আড়ালে,

প্রেরনা যোগাও কর্মের তালে৷

আগামী দিনে গড়িতে সমাজ

চাই সমানাধিকারের মূল্য বোধ,

অগ্রগতির ইন্ধন ইহা,

ধবংস হইবে করিলে রোধ৷

পঞ্চ দধীচি স্মরণে

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

সেদিনও হয়েছিল সূর্যোদয়,

নির্মেঘ বসন্তের গগন৷

ঈশান কোণে অপ্রত্যাশিত মেঘ

বুঝতে পারেনি আসন্ন মহারণ৷

পাঁচই মার্চ, মহাবেদনার স্মৃতি,

বিক্ষত করে নিবিড় ভ্রাতৃ-প্রীতি৷

ধর্মের তরে পঞ্চ দধীচি যারা

আজও অম্লান প্রাতঃস্মরনীয় তারা৷

 

দূরাচারীর অস্ত্র যখন

নিঠুর খেলায় মাতে,

সাধুজনের পরিত্রাণে আসেন পরমপিতা সাথে৷

জড়বাদী মন মানেনা কখনো তাই পাপাচারে লিপ্ত,

কোন বিরোধীতা শুনিতে নারাজ

শুনিলেই হয় ক্ষিপ্ত৷

নিজ সঙ্কল্প রূপায়ণে দধীচিরা আসে ভূবনে,

হাসিমুখে তাঁদের মরণ বরণ

আপন কর্তব্য সাধনে৷

ক্ষমতাবৃত্তে দিশাহারা হয়েদুঃশাসনের বংশ,

অত্যাচারের অস্ত্র বানায় শিশুপাল আর কংস!

অহংবোধের উন্মাদনায়

লঙ্ঘিত মহামানবের বাণী,

ষড়যন্ত্রীর চক্র রচিছে

নিভৃতে চক্রপাণি৷

আজ সেই কুখ্যাত দিন----

ব্যাথিত হদয়ে স্মরণ করি

কেমনে শুধিব ঋণ!

তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণে

সুদৃঢ় করি মন,

মানবিক কাজ পূরণে

করি সম্মান প্রদর্শন৷   

দধীচি দিবস

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

দধীচি দধীচি দধীচি দধীচি

দধীচি---পঞ্চবীর,

মার্চের আজ পঞ্চম দিনে

শ্রদ্ধায় নত শির৷

মানব-সেবার মহানযজ্ঞে

তোমরা হয়েছো সমিধ,

ধর্মসংস্থাপনার্থে

রক্ত-সিক্ত শহীদ৷

নরাধম যত দানবের দল

নৃশংস নির্মম,

কেড়ে নিয়েছিল কল্যাণকাজে

সকল উদ্যম৷

তোমাদের সেই প্রাণের প্রদীপ

আজও অনির্বাণ,

সেই আনন্দনগর যে আজ

মোদের তীর্থস্থান৷

প্রপঞ্চময় জগতে তোমরা

পঞ্চপ্রদীপ সম,

গুরুর চরণে জীবনাঞ্জলি---

তোমাদের নমো নমো৷

তোমার প্রতীক্ষা

লেখক
কেয়া সরকার

সূর্য থেকে যে আলো আসে পৃথিবীতে---

তার প্রতিটি কিরণে আছো তুমি,

চাঁদ যে জ্যোৎস্না ঢালে আমার ধরণীতে---

তার প্রতিটি পরতে আছো তুমি,

 

তোমার ভাবনায় দিন হয় রাত,

কালচক্র বয়ে চলে---

আঁধার রাত্রি আবার প্রভাত হবে,

বলে সে বলে চলে---

 

মনে মনে খুঁজেছি তাকে,

মনের মাঝে পেয়েছি,

মনের বাগানের ফুল দিয়ে

তাঁর তরে মালা আমি গেঁথেছি৷

 

পূজার বেলা সাঙ্গ হলে,

মন আমার একলা রবে

হৃদয়েরই সাধন আমার---

আবার দেখা হবেই হবে৷

 

মোসাহেৰ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

কথায় বলা হয়, খোসামদে পাহাড়ও গলে মাখন হয়ে যায়৷ খোসামদে দুর্বাসা মুনিও গলে যান৷ সেই খোসামদের জন্যে ‘কাণ্ড’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ ‘খোসামদ’ শব্দটি এসেছে ফার্সী ‘খুসামদ’ থেকে৷ অনেকে ‘খুসামদ’–কে মার্জিত রূপ দেবার জন্যে ‘তোষামোদ’ ৰলে থাকেন৷ না, ‘তোষামোদ’ ৰলে কোনো শব্দ নেই৷ শাস্ত্রে ৰলেছে, খোসামদকারী প্রতি মুহূর্তেই প্রতি পদবিক্ষেপেই অধোগতি হয়, কারণ সে প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদবিক্ষেপে কেবল স্বার্থচেতনায় অস্বাভাবিক কাজ করে থাকে৷ আগেকার দিনে রাজাদের বা অবস্থাপন্ন লোকেদের বেতনভুক খোসামদকারী থাকত৷ তাদের ৰলা হত মোসাহেৰ–যারা সৰ সময় নিজেদের কর্ত্তাকে ‘সাহেৰ’, ‘সাহেৰ’ ৰলে তুষ্ট রাখবার চেষ্টা করে৷ আরৰী ব্যাকরণ অনুযায়ী ওই ‘সাহিৰ’ শব্দটির আদিতে ‘মু’ সংযুক্ত করে তাদের ৰলা হয় মুসাহিৰ বা মোসাহেৰ৷ এইভাবে বিভিন্ন গুণের সঙ্গে ব্যষ্টির সংযোগ সাধন করে ক্রিয়া বা বিশেষ্যের আদিতে ‘মু’ যোগ করে আরৰীতে বিভিন্ন শব্দ সৃষ্ট হয়ে থাকে৷ যেমন মুয়াল্লিন, মুয়াজ্জিন (যিনি আজান দেন), মুজাহিদ (যিনি জেহাদ বা ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেন), মুহাজির (যিনি অন্য দেশ থেকে এসে হাজির হয়েছেন অর্থাৎ রেফিউজী), মুসাফির (যিনি সফর বা ভ্রমণ করে চলেছেন) প্রভৃতি৷ সেই যে মোসাহেৰের একটা গল্প আছে না!

রাজামশায়ের একজন মোসাহেৰ চাই৷ তিনি খৰরের কাগজে যথাৰিধি কর্মখালির বিজ্ঞাপন দিলেন৷ জানিয়েও দিলেন, ‘‘আবেদনকারীকে দরখাস্তের সঙ্গে ৫০০ টাকার ক্রশ চেক দিতে হৰে যা প্রত্যর্পণযোগ্য নহে৷ হাজারে হাজারে দরখাস্ত এল৷ লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষা চলছে৷ রাজামশায় বসে রয়েছেন৷ তাঁর সিংহাসনের বাঁ হাতলটা ধরে ঘাড় বেঁকিয়ে মন্ত্রীমশায় একটু কেতরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ এক একজন কর্মপ্রার্থী আসছেন ইন্টারভিউ (সংজ্ঞ–প্রতীতি) দিতে৷

রাজামশায় প্রথম জনকে জিজ্ঞেস করলেন–‘‘তুমি কি মোসাহেৰের কাজ পারৰে’’

সে ৰললে–‘‘নিশ্চয় পারব, জাঁহাপনা৷’’

রাজামশায় তার নাম খারিজ করে দিলেন৷ দ্বিতীয় কর্মপ্রার্থী এলেন–একজন চালাক–চতুর যুবক.......চোখে মুখে খই ফুটছে৷

রাজামশায় তাকে ৰললেন–‘‘মোসাহেৰের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরু দায়িত্ব! তুমি কি এ কাজ পারৰে’’

কর্মপ্রার্থী ৰললে–‘‘একবার চান্স দিয়ে দেখুন শাহানশাহ্, আমি নিশ্চয় পারৰ৷’’ রাজা তাকেও না–পসীন্দ*(*শব্দটা ফার্সী৷ তাই ‘না–পছন্দ’ না ৰলে ‘না–পসীন্দ’ ৰলাই ৰেশী ভাল৷ তবে এর ৰাংলা রূপ হিসেৰে ‘না–পছন্দ’ও চলতে পারে’৷) করলেন৷ ৰলা বাহুল্য, এরও চাকরী হল না৷

পরের কর্মপ্রার্থীটি খুৰই শিক্ষিত কিন্তু ইন্টারভিউ কেমন হৰে তাই ভেৰে সে পৌষের শীতেও ঘেমে গেছল........রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সে রাজার সামনে এসে দাঁড়াল৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘মোসাহেৰের এই মহান কর্ত্তব্যে তুমি কি সমর্থ’’

উৎসাহের অগ্ণিতে প্রদীপ্ত হয়ে কর্মপ্রার্থীটি ৰললে–‘‘নিশ্চয়ই পারৰ৷ একশ’ বার পারৰ, স্যার......কথা দিচ্ছি স্যার....কেবল একবার একটা চান্স দিন স্যার....ন্দব্ভব্দব্ধ ন্তুড়্ত্রুন্তুন্দ্ব হ্মপ্তন্দ্ব্ত্রব্দন্দ্ব৷’’

রাজামশায় তাকেও বাতিল করে দিলেন৷ এবার যে ছেলেটি এল তার চোখে–মুখে বুদ্ধির ঝলক ছিল কিন্তু প্রজ্ঞার গভীরতা ছিল না৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘খোসামদের কাজটা তুমি কি পারৰে’’

সে বললে–‘‘সত্যিই রাজাসাহেৰ, খোসামদের কাজটা আমি কি পারৰ!’’

রাজামশায় ৰললেন–‘‘হ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো৷’’

সে ৰললে–‘‘হঁ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি৷’’

রাজামশায় আড়চোখে মন্ত্রীর দিকে চাইলেন৷ মন্ত্রী ৰললেন–‘‘মহারাজ, ইনিই সর্ৰগুণান্বিত, এঁকেই ৰহাল করুন৷ আজকের দিনে ইনিই বিশ্বমানবতার প্রতিভূ......জয়মাল্য পাবার ইনিই অধিকারী৷’’

রাজামশায় প্রার্থীকে ৰললেন–‘‘ৰুঝলে হে, আজ থেকে তোমার চাকরী হল৷’’

তাহলে ৰুঝলে ‘কাণ্ড’ ৰলতে এই খোসামদকে ৰোঝায়৷ সংস্কৃতে কিন্তু মোসাহেৰকে ৰলা হয় ‘বিদুষক’৷ ‘মোসাহেৰ’ অর্থে সীমিত ক্ষেত্রে সংস্কৃতে ‘ভাণ্ড’ শব্দটিও চলত যার থেকে ৰাংলার ‘ভাঁড়’ শব্দটি এসেছে (যেমন–গোপাল ভাঁড়)৷ তবে ‘ভাঁড়’ ৰলতে ক্লাউনকেও ৰোঝায়৷ ‘‘আর ‘ভাঁড়ামি’ করতে হবে না’’–এমন কথা যখন আমরা বলে থাকি তখন কিন্তু সেটা ‘ভাণ্ড’ বা ‘ভাঁড়’ থেকে আসছে না, আসছে ‘ভণ্ড’ থেকে অর্থাৎ ভণ্ডামি অর্থে ‘ভাঁড়ামি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷

জাতীয় পতাকা দেশে দেশে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

সবুজ, সাদা, গেরুয়া আর মাঝখানে চরকা--- এই হচ্ছে আমাদের জাতীয় পতাকা৷ অন্যান্য দেশে ও জাতীয় পতাকা আছে৷

ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ ডেনমার্ক৷ এর আয়তন ষোল হাজার ছয়শো ঊনত্রিশ বর্গমাইল৷ লোক সংখ্যা আটচল্লিশ লক্ষ তের হাজার আটশো বিরানববই (১৯৬৭ খ্রীষ্টাব্দের হিসাব)৷ রাজধানী কোপেন হেগেন৷ এর জাতীয় পতাকা হচ্ছে রক্ত পতাকার মধ্যে সাদা ক্রুশ চিহ্ণ৷ ইউরোপের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় জাতীয় পতাকা৷

ফ্রান্স পশ্চিম ইউরোপের একটি শক্তিশালী সাধারণতন্ত্র৷ আয়তন দুইকোটি বারো লক্ষ নয়শো ঊনিশ বর্গমাইল৷ লোকসংখ্যা পঞ্চাশ কোটি ছয় লক্ষ বাষট্টি হাজার (১৯৬৮ খ্রীষ্টাব্দের হিসাব)৷ রাজধানী প্যারিস৷ এর পতাকায় কালো, সাদা আর লাল পাশাপাশি থাকে৷ এই পতাকার প্রচলন হয় ১৭৮৯খ্রীষ্টাব্দে ফরাসী বিপ্লবের সময় থেকে৷

দক্ষিণ ইউরোপের একটি রাজ্য ইটালি৷ আয়তন এক লক্ষ ষোল হাজার দুইশো আশি বর্গমাইল৷ লোকসংখ্যা পাঁচকোটি পঁচিশ লক্ষ কুড়িহাজার (১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দের হিসাব) রাজধানী রোম৷ এর জাতীয় পতাকায় আছে পাশাপাশি সবুজ, সাদা ও নীল৷

আফ্রিকার একটি দেশ মিশর৷ মিশরের পতাকা সবুজ৷ তাতে আছে ছয়টি সাদা অর্ধচন্দ্র আর পাঁচটি সাদা তারা৷

পাকিস্তানের পতাকা গাঢ় সবুজ৷ তার মাঝে আছে সাদা অর্দ্ধচন্দ্র আর পাঁচটি তারা৷

পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ দেশ সোভিয়েৎ যুক্তরাষ্ট্র (খণ্ডিত হওয়া আগে)৷ পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ১/৬ অংশ এর অন্তর্ভুক্ত৷ আয়তন ছিয়াশি লক্ষ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার বর্গমাইল৷ লোক সংখ্যা তেইশ কোটি সত্তরলক্ষ (১৯৫৮ খ্রীষ্টাব্দের হিসাব)৷ রাজধানী মস্কো৷ এর পতাকা লাল-তাতে কাস্তে ও হাতুড়ি৷ হাতুড়ির ওপর তারা৷

সাতটি লাল,ছয়টি সাদা লাইন ও আট চল্লিশটি তারা যোগে তৈরি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা৷

রাষ্ট্র সংঘের নীল পতাকায় রাষ্ট্রসংঘের চিহ্ণ আঁকা থাকে৷

 

অভিমান

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

 আমি তোমায় জানিতাম না

 তুমিতো জানিতে মোরে,

তবে কেন আমি না বুঝিয়া ছিনু

  গহন অন্ধকারে?

অনেক আশায় খুঁজি চারিধার

   অরূপরতন সন্ধানে,

নিত্য লীলায় কেন লুকোচুরি

   চিরস্থায়ী বন্ধনে?

তোমারে ঘিরিয়া নাচিয়া ছন্দে

    অযুত জনম ধরে,

কত শত খেলা লীলাছলে কর

    সরস মানস তরে!

পারস্পরিক পরিচিতি তবে

   এত দেরি কেন বল,

যবে জানিলাম কাছেতে গেলাম

   ভাব বিনিময় হল৷

বিশ্বের মাঝে সর্বত্র তব অবাধ বিচরণ,

আমি কেন ছিনু নিদ্রামগ্ণ

হয়নি তো জাগরণ!

মনে জমে ছিল শতেক ব্যাথা,

হৃদয়ে আনিলে প্রেমের বারতা৷

সজল নয়নে প্রথম দেখায়৷

তোমারে করেছি বরণ৷

যত থাক শোক, দেহ ভরা রোগ,

তবুও আমার নাই অনুযোগ,

তুমি সদা সাথে প্রভাতে নিশিথে

লীলার আনন্দ করি উপভোগ৷

তুমি ছিলে কাছে বিগত জনমে,

এখনো রয়েছো, রবে চিরকাল,

পিতা-পুত্রের মধুর মিলন

অনন্তকাল রহিবে বহাল৷

মুক্তি-মোক্ষ, পুনর্জন্ম

তব বিবেচনা, তব বিচার্য,

আনন্দটুকু থাকে যেন মনে

মঙ্গলময়, যা’ কর ধার্য৷

পরিস্থিতিতে তুমি চির সাথী

ভক্তি ও প্রেমে স্বাগত বরণে,

হাসি-কান্নায় রচিত জীবন

যেন ঠাঁই পাই তব শ্রীচরণে৷