১লা মে স্মরণে---ভারতে হতদরিদ্র শ্রমিকগণ চরম শোষণের শিকার! শিল্পে এদের---মালিকানাসত্ত্ব দেওয়াটা প্রয়োজন

লেখক
প্রভাত খাঁ

আমরা ১লা মে দিনটিকে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসাবে পালন করি৷ আমরা ২০২১শে মে দিবস পালন করছি৷ কিন্তু এই দিনটি ১৮৮৬ সালের একটি মর্মান্তিক ঘটনায় স্মরণীয় হয়ে আছে এই পৃথিবীর মাটিতে৷ ঘটনাটি ঘটে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরী ও ৮ ঘন্টা কাজের দাবীতে কর্ম বিরতি অর্থাৎ ধর্মঘট করে৷ এটি ছিল মাংসের কারখানা যেখানে প্রাণী হত্যা করা হতো৷ এর পরিবেশ ছিল অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর৷ এই অসহনীয়  পরিবেশে শ্রমিকদের প্রায় ১৬ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য করা হতো কিন্তু মজুরী যৎসামান্য৷ শ্রমিকরা তাদের লাল ঝাণ্ডা উড়িয়ে মিছিল করে৷ যাদের সংখ্যা ছিল প্রায় তিন লক্ষ৷ সরকারের পক্ষ থেকে পুলিশ গুলি  চালিয়ে একাধিক শ্রমিককে হত্যা করে৷ এই দিনটিকে শ্রমিকশ্রেণীর সংগ্রাম ও সংহতির দিন হিসাবে স্বীকার করা হয়৷ কারখানায় শ্রমিক মারা গেলে  সেই মৃতদেহ ফেলে দেবার জন্য ‘ডেথ প্যান’ মৃত শরীর ফেলার ব্যবস্থা থাকতো৷ এতটা নিষ্ঠুর, নির্মম ব্যবস্থাকে প্রশ্রয় দেওয়া হতো! মিথ্যা মামলায় সরকার একাধিক শ্রমিককেই ফাঁসী দেয়৷ এদিকে শিল্প বিপ্লবের জন্য ইউরোপে ও আমেরিকায় কারখানা গড়ে ওঠে৷ অধিকাংশ শিল্প অঞ্চলে শ্রমিক নিয়ে মালিকরা এই ধরনের শ্রমিক শোষন করতে, বিশেষ করে শিশু শ্রমিক বেশী নিয়োগ করা হতো৷ তাদের সব দিক থেকে বঞ্চিত করে নিজের আর্থিক শোষণের পথ কায়েম করতেন৷ তাদের ১৬ঘন্টা কাজ করতে হতো মজুরী নিতান্ত কম৷ গ্রামের পরিবারগুলি থেকে ছোট ছোট ছেলেরা শহরে এই কাজে  যোগ দিত৷ তারা কঙ্কালসার হয়ে অকালে মারা পড়তো৷ জীবনে নিরাপত্তার অভাব ছিল দারুণ৷ সমাজে চরম আর্থিক বৈষম্য দেখা দেয় শিল্পোন্নত দেশগুলিতে৷ একটি শ্লোগান জোরদার হয়, ‘‘শোষণের উপর সমৃদ্ধি৷’’ এটাই পৃথিবীতে ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় মানবসমাজকে চরম ধবংসের পথে টেনে নিয়ে যায়৷ অবৈজ্ঞানিক কৃষিব্যবস্থায় মার্কিন ও ইউরোপের দেশগুলি পিছিয়ে পড়ে৷ তাই দেখা যায় বড়ো বড়ো জমিদারগণ শিল্প বিপ্লবে অন্য মহাদেশগুলিতে উপনিবেশ স্থাপন করে শিল্প গড়ে তোলে ও কাঁচামাল ও কম পারিশ্রমিকের শ্রমিক পেয়ে তাঁরা সারা পৃথিবীতে প্রভাতশালী হয়ে ওঠে৷ আর যে যে স্থানে উপনিবেশ গড়ে ওঠে সেই দেশগুলো শোষিত হতে থাকে৷ ধীরে ধীরে দেখা যায় শ্রমিকশ্রেণী শোষিত হচ্ছে৷ তাই সারা পৃথিবীতে ধীরে ধীরে শোষণ বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিক ও কর্ষকশ্রেণী সচেতন হয়৷ ফলে শোষক ও শোষিত দুই শ্রেণী সচেতন হয়৷ ফলে শ্রমিকগণ সে শিল্পে হোক আর কৃষিতে হোক তারা সচেতন হয়ে ওঠে৷ তাদের নিয়ন্ত্রন করে কিন্তু সেই বুদ্ধিজীবীগণই৷ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় শ্রমিক উৎপাদনে নামমাত্র ফ্যাক্টর হয়, তারা অধিকার পায় না শিল্প ও কৃষি উৎপাদনে৷ তারা শুধু মালিকের কৃপা লাভ করে শ্রমদানে কিছু মজুরী! তাই দেখা দেয় উভয়ক্ষেত্রেই শ্রমিকদের আন্দোলন বৃদ্ধি পায় যাকে বাঁচার লড়াই বলে৷ ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে শ্রমিক ইয়ূনিয়ন হয়েছে৷ তার নিয়ন্ত্রক হয়েছে এক ধরনের বুদ্ধিজীবীরা, যারা শ্রমিকদের হয়ে কথা বলে নামে মাত্র, কিন্তু তাঁদের নিয়ে  ব্যবসায় মেতে শ্রমিক আন্দোলন করে নেতারা কিন্তু শ্রমিকরা নয়৷ শ্রমিক নেতাদের সেই ব্যবসার শিকার হতে হয় বুদ্ধিজীবীদেরও৷ সব রাজনৈতিক শ্রমিক ও কর্ষক ইয়ূনিয়ন করে ও তাদের নিয়েই দল চলে তবে শ্রমিক আন্দোলনে কৃষি ও শিল্পে শ্রমিকগণ লাভবান হয়নি তা বলাটা ন্যায় সঙ্গত নয়৷ অবশ্যই হয়েছে কিন্তু আজও তারা বঞ্চিত ও শোষিত৷ শ্রমিক কর্ষকগণকে ইয়ূনিয়নের নেতৃত্ব দেবার ব্যবস্থা করতে হবে৷ বাহিরের রাজনৈতিক দলের নেতাদের কর্তৃত্ব চলবে না৷ বিক্ষুদ্ধ শ্রমিক কর্ষকশ্রেণীই ক্ষুব্ধ হয়ে রাশিয়ার কমিউনিষ্ট শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন এনেছে৷ আর এধরনেক কিছুটা পরিবর্ত্তন  হয়েছে শাসকদের মধ্যে৷ এখন দেখা যাক, এই যে ১লা মে দিবস তাতে আমাদের দেশে তার সাড়া কবে আসে আর এই ১লা মে দিবসে ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি কতটা কি করেছে তাদের জন্য৷ বর্তমানে তার কিছু আলোচনা জরুরী,কারণ এই দেশে হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটি তিন কোটি ধনীদের বাদ দিয়ে৷

এই আলোচনার পূর্বে ১লা মে ১৮৮৬ সালের পর দেখা যায় ১৮৮৯ ফরাসী বিপ্লবের দ্বিতীয় শতবৎসর পূর্ত্তি উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কংগ্রেসে ঘোষিত হয় শ্রমিকরা দিনে ৮ঘন্টার বেশী আর শ্রমদান করবে না৷ এইদাবী আইনী স্বীকৃত পায়৷ ১৮৯০ সালে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ঘোষিত হয় হে মার্কেটে শহিদ শ্রমিকদের সম্মানে পালিত হবে ১লা মে দিবস৷

একদিনের কর্মবিরতি সাম্মানিক স্বীকৃতি পায় শ্রমিক সমাজে  এবার বলি ভারতে এর স্বীকৃতি কখন আসে ১লা মে দিবসের সেটা হলো ‘‘লেবার কিষান বিকাশ পার্টির নেতা সিঙ্গারা ভেলুচেট্টিয়া,১৯২৩ সালে ভারতে মে দিবসের সূচনা করেন৷ শ্রমিকদের অধিকার ঘোষিত হয়৷ এদেশের মাটিতে মাদ্রাজে প্রথম শ্রমিকদের লাল পতাকা উড়েছিল৷

আজ কিন্তু দেখা যায় রাজনৈতিক দলগুলি দলীয় স্বার্থেই মূলতঃ জীবনের প্রায় সবক্ষেত্রেই ইয়ূনিয়ন করেছে৷ তাতে দেখা গেছে যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষকদের ইয়ূনিয়ন প্রয়োজন কিন্তু শিক্ষায় ব্যাঘাত ঘটে৷ তাদের জীবনে নেমে আসে অনেক অঘটন৷ তবে ছাত্র-ছাত্রা যারা কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তারা তাদের শিক্ষালাভে অবশ্যই ইয়ূনিয়ন করতে পারে শিক্ষার কল্যাণে অরাজনৈতিক ৷ আর শ্রমিক ইয়ূনিয়নকে রাজনৈতিক দলের স্বার্থে যখন তখন দলীয় স্বার্থে উৎপাদন বন্ধ করে ধর্মঘটে টেনে আনাটা কাজের কাজ নয়৷ তাতে আর্থিক উন্নয়নে উৎপাদনে ক্ষতি হয়৷ ফলে দেশ আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে যায়৷

কলকারখানা বন্ধ হয়ে যায় বেকার সমস্যা বাড়ে৷ যেটা দেখা যায় ভারতে৷ অনেক সময় অসাধু আঁতাত মালিক ও ইয়ূনিয়নের নেতাদের মধ্যে ঘটে তাতে ক্ষতি হয় শ্রমিকদেরই৷

শ্রমিকদের ইয়ূনিয়ন হবে শ্রমিক নেতৃত্ব তাতে শ্রমিকরা মালিকের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ বাহিরে নাকগলানোটা কাম্য নয়৷ তাই এদেশে এটার অভাব দারুণ৷ শ্রমিকই হবেন শ্রমিক নেতা৷ সেটা দেখাই যায় না৷ রাজনৈতিকগুলো এ ব্যাপারে বড়ো বাড়াবাড়ি করে ফলে দেশ আর্থিক সংকটে পড়ে দারুণভাবে৷ ভারত ক্ষতিগ্রস্থ এদিক থেকে৷

শ্রমিকদের উৎপাদনে নিছক ফ্যাক্টর না করে তাদের উৎপাদনে অংশিদার করে তাদের আপন করে নেওয়াটাই হলো মানবতার লক্ষণ কারণ শ্রমিক হলো অত্যন্ত জীবন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ নিজের মনে করে তারা কাজ করবে ও দুখের দুখী ও সুখের সুখী হয়ে কারখানা বাঁচাবে৷ এটার দিকে নজর দেওয়াটা গণতান্ত্রিক সরকারের দায়৷  কিন্তু ভারতের গণতন্ত্রটাই চলে ধনীর আঙুল হেলনে৷ তাই শোষণের  উপর দাঁড়িয়ে আছে এদেশের অর্থনৈতিক জগৎটা৷ এদেশের সরকার শ্রমিকদের পরিযায়ী শ্রমিক করে তাদের অসম্মান করেছেন৷ তাঁদের রুজিরোজগার বর্ত্তমানে বন্ধ প্রায়৷