(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
গৌতম বুদ্ধ মানুষের দুঃখ নিবারণ তথা নির্বাণ লাভের উপায় হিসাবে অষ্টপন্থা বা মার্গের নির্দেশ দিয়েছিলেন--- সম্যক দৃষ্টি, সম্যক চিন্তা, সম্যক সঙ্কল্প, সম্যক প্রচেষ্টা ইত্যাদি৷ সেই রকম বাঙালীকেও যদি ওই সাম্রাজ্যবাদীদের চক্রান্তটা ধরতে হয়--- বুঝতে হয়, যোগ্য জবাব দিতে হয় তথা সার্বিক মুক্তি পেতে হয়--- তবে বাঙালীকেও বাঙালীর অষ্টমার্গ বা পন্থা কঠোরভাবে অনুসরণ করতেই হবে (নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায়)
১) বাঙালীর চিরন্তন বাসভূমির (বাঙালীস্তানের) ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক এলাকাকে সম্যক জান,---অর্থাৎ ভূতাত্ত্বিক বিচারে যাকে বলে, বিভিন্ন যাকে বলে ‘বিভিন্ন গিরিবেষ্টিত---নদীমেখলা অঞ্চল, প্রাচীন সংস্কৃতে যাকে বলে--- মহাসংস্থান বা মহাভূমি--- তা কী ? কেমন? কোথায়? তা হাতের তালুর মত জানতে হবে৷ ২) বাঙালীর জাতিসত্তার (এথ্নিসিটির) সম্যক পরিচয় জানা ও বোঝা ও একে সম্যক বোধিতে উন্নীত করা৷ ৩) বাঙলা ভাষাকে সম্যক চেনা-জানা, ভাষার গুরুত্ব বুঝা ও তা ব্যবহারের বা প্রয়োগ-ভূমির সম্যক জ্ঞান অর্জন৷ ৪) সম্যক সাংবেদনিক উত্তরাধিকার ভাবনা৷ অর্থাৎ বাঙালীর এক স্বতন্ত্র জীবনধর্ম আছে, সংস্কৃতি আছে, সামাজিক ঐতিহ্য আছে--- সেটাকে সম্যক জানা ও আত্মস্থ করা৷ ৫) সম্যক মাতৃভাষার মর্যাদাবোধ--- ব্যষ্টি ও সমষ্টি উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহারিক জীবনে সরকারী বেসরকারী সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে আবশ্যিক ও বাধ্যতামূলক করা (অনেক দিন ধরে--- স্থায়ীভাবে বসবাসকারী দেশী বিদেশী বহিরাগতদের বাংলা ভাষা শিক্ষা ও তার সর্বস্তরে প্রয়োগ করতে হ’বে ও বাঙলার ভাষা-সংস্কৃতি-অর্থনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে একাত্ম হতে হবে৷ নইলে দখলদারী মানসিকীদের বাঙলা ছেড়ে চলে যেতে হবে৷)
৬) সম্যক অর্থনীতিবোধ---প্রকৃতির অকৃপণ দান বাঙালীর বাসভূমি---আর প্রকৃতিগত ভাবেই এটা একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল, কিন্তু এখন তা চূর্ণীকৃত৷ ভারতীয় সংবিধান মোতাবেক ওই খণ্ডগুলোর পুনরায় সংযুক্তিকরণ, পুনর্মিলন তথা সাবেক বাঙলা--- বাঙালীস্তান ঘটন বা সাবেক স্বয়ম্ভর অর্থনৈতিক-বাঙলা পুনর্গঘটন যেকোনো মূল্যে৷ ব্যাপারটা অন্যভাবে বললে--- বাঙালীর স্বয়ম্ভর অর্থনীতির স্বার্থে, ভাষা-সংস্কৃতি-সামাজিক ঐতিহ্যের সুরক্ষার ও উদ্বর্তনার স্বার্থে, ও জাতিসত্তার (এথ্নিসিটি) সুরক্ষার-মর্যাদার ও পুষ্টির নিয়ামক বাঙালীস্তান৷ কেননা বাঙলার অর্থনীতির সঙ্গে ওপরের শর্ত গুলো অনিবার্য অঙ্গ হিসাবে জড়িয়ে আছে৷ ৭) সম্যক ক্ষমতায়নে শক্তি মন্ত্রে দীক্ষা৷ এ শক্তি জাতিসত্তার ঐক্যশক্তি, ভাষা শক্তি---ভাষার ক্ষমতায়ন, অর্থশক্তি---অর্থের ক্ষমতায়ন, রাজ নৈতিকশক্তি--- রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন, আর সামরিক শক্তি হল ভারতীয় সেনাবাহিনীতে বাঙালী রেজিমেন্ট ঘটন, তার জন্য গ্রামে গ্রামে পাড়ায় পাড়ায় শক্তি সাধনের, ‘শক্তি-মন্দির’ গড়ে তোলা৷ ৮) নব্যমানবতাকে মূলধন করে সামগ্রিক বা সংশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গীর চর্চ্চার সম্যক শিক্ষা৷ এর ব্যবহারিক রূপটা হল--- বাঙলার পথ ধরে বিশ্বের আঙিনায়, বিশ্বৈকতাবাদে উত্তরণ বা প্রতিষ্ঠা৷ এবার এ সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক্--- প্রথম পর্বে বাঙালী জনগোষ্ঠীর পরিচয়, বাংলা ভাষা ও সোনার বাঙলার ভৌগোলিক বা প্রাকৃতিক পরিচয় জেনে নেয়া যাক নইলে ষড়যন্ত্রও যে কত গভীর, প্রকৃত সমস্যাটাই বা কী, সমাধানই বা কোন পথে?--- তা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে৷ (ক্রমশঃ)
- Log in to post comments