অন্ধবিশ্বাসের জাল ছিন্ন করে যুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক  প্রকৃত  ধর্মের প্রতিষ্ঠার জন্যে আনন্দমার্গের আহ্বান

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

সেমিনার ১রঘুনাথবাড়ী ঃ  আজ সমস্ত  সমাজ জুড়ে  ধর্মের নামে  অজস্র  অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের জাল  ছড়ানো রয়েছে৷ আর তার মাধ্যমে  সাধারণ  মানুষকে  শোষণ  করা হচ্ছে৷  এই সমস্ত  কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের  জাল ছিন্নভিন্ন করে মানব সমাজকে  প্রকৃত ধর্মের পথ--- যার মাধ্যমে  মানুষের  কল্যাণ সম্ভব হবে--- সেইপথ  দেখাতে হবে৷  আনন্দমার্গের  শত শত  প্রচারক সারা বিশ্বজুড়ে  প্রকৃত ধর্মের  এই মহান বাণী প্রচার  করে  চলেছেন৷ আর  এই কারণে  দেশে বিদেশে  সর্বত্র  ব্যাপকভাবে  আনন্দমার্গের  সেমিনারের মাধ্যমে  গণসচেতনতা সৃষ্টির  কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে৷

আনন্দমার্গের  রঘুনাথবাড়ীতে আয়োজিত  আনন্দমার্গের ত্রিদিবসীয়  সেমিনারে  মুখ্য প্রশিক্ষক হিসেবে এসে এক সাক্ষাৎকারে  আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় ধর্মপ্রচার সচিব আচার্য বিকাশানন্দ অবধূত এই কথাগুলি বলেন৷

গত ২৯,৩০শে জুন ও ১লা জুলাই  পূর্বমেদিনীপুরের রঘুনাথবাড়ীতে আনন্দমার্গের  সেমিনার অনুষ্ঠিত হল৷ স্থানীয় আনন্দমার্গের স্কুলে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারে পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া  জেলা থেকে  দুই শতাধিক  আনন্দমার্গের  সক্রিয় কর্মী  যোগদান  করেন৷  এটি  ছিল আনন্দমার্গের  সেমিনার  কর্মসূচী অনুসারে  এই বছরের  দ্বিতীয় পর্যায়ের ফার্ষ্ট ডায়োসিস  সেমিনার৷  মূলতঃ মার্গগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর  আধ্যাত্মিক  ও সামাজিক-অর্থনৈতিক দর্শনের  ওপরই এই সেমিনার হয়৷  সেমিনারের আলোচ্য বিষয় ছিল ‘ব্রহ্মসদ্ভাব’,‘সংগ্রাম বৈপরীত্যম’, ‘সুসংবদ্ধ কৃষি’ ও ‘সামাজিক সুবিচার’৷  এই সেমিনার  মুখ্য প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আচার্য বিকাশানন্দ অবধূত ও আচার্য সন্দৃপ্তানন্দ অবধূত৷

‘ব্রহ্মসদ্ভাব’ বিষয়ের  ওপর  আলোচনা করতে গিয়ে  আচার্য বিকাশানন্দ অবধূত  বলেন, চর্র্চর দ্বারা কোনো বিদ্যায়  প্রতিষ্ঠিত  হওয়াকে  বলে সাধনা৷ আর যত রকমের  সাধনা  রয়েছে  তার মধ্যে ‘ব্রহ্মসদ্ভাব’ হচ্ছে  সর্র্বেত্তম সাধনা৷ পরমব্রহ্মকে  পাওয়ার  আকুতি নিয়ে  যে সাধনা--- যে ধ্যান তা-ই হল ব্রহ্মসদ্ভাব৷ এখানে  ছড়ানো মনকে একত্রিত করে অন্তর্মুখী করে ব্রহ্মের  দিকে চালনা  করতে হয়৷  মানুষের  অন্তরের  অন্তস্তলেই  ঈশ্বরের  অবস্থান৷   তাই মনকে একাগ্র  করে --- অন্তর্মুখী করাটাই প্রথম কথা৷ আনন্দমার্গে এই সাধনাই শেখানো হয়৷

মনকে অন্তর্মুখী করে ব্রহ্মের ধ্যান করতে হয়৷  মনের ক্ষেত্রে নিয়ম হচ্ছে, ‘যাদৃশী ভাবনা যস্য সিদ্ধির্ভবতি তাদৃশী’৷ অর্থাৎ মন একান্তভাবে যে চিন্তা করে মন তা-ই  হয়ে  যায়৷  ব্রহ্মচিন্তা করতে করতে  মন ব্রহ্ম হয়ে যায়৷  ব্রহ্মের সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয় যায়৷  এটাই ব্রহ্ম বিজ্ঞানের মূল কথা৷

ব্রহ্মসাধনায়, কোনোপ্রকার কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাসকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না৷  কোনো প্রকার জাত-পাত সম্প্রদায় ভেদকে প্রশ্রয় দেওয়া হয় না৷  তাই আনন্দমার্গে জাত-পাত সম্প্রদায় ভেদ মানা হয় না৷  এখানে বলা হয় ‘‘মানুষ মানুষ ভাই-ভাই, উঁচু কিংবা নীচু নাই৷’’

ব্রহ্মসাধক যেমন অন্তর্জগতে ব্রহ্মের সাধনা করবে, তেমনি বহির্জগতে  সমস্ত কিছুকে ব্রহ্মের বিকাশ হিসেবে ভেবে ঈশ্বর সেবার ভাবনা নিয়ে সমাজ সেবা করে যাবে৷ ব্রহ্ম সাধক সমস্ত মানুষ, পশু-পক্ষী তরুলতা সবাইকে ভালোবাসবে৷ শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী একে বলেছেন ‘নব্যমানবতাবাদ৷’ এই নব্যমানবতাবাদের মধ্যেই আছে আজকের যুগের সমস্ত প্রকার সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি৷ অন্তরে সবার প্রতি প্রকৃত ভালোবাসা না থাকলে জগতের প্রকৃত কল্যাণ করা যায় না৷

এই সেমিনারে তিন দিন  ধরে ক্লাস ছাড়াও  সারাদিন প্রভাত সঙ্গীত,কীর্ত্তন ,মিলিত সাধনা  প্রভৃতির মাধ্যমে এক অপূর্ব আধ্যাত্মিক পরিবেশ রচিত হয়েছিল৷

শনিবার অর্থাৎ ৩০শে জুন বিকেলে আনন্দমার্গের তরফ থেকে এক বর্র্ণঢ্য শোভাযাত্রা রঘুনাথবাড়ী, বটতলা, পুরুষোত্তমপুর পরিক্রমা করে৷  রঘুনাথবাড়ী হাইস্কুল সংলগ্ণ বাজারে  এক পথসভাও অনুষ্ঠিত হয়৷  এই পথসভায় বক্তব্য রাখেন  আচার্য ত্রিগুণাতীতানন্দ অবধূত, অবধূতিকা  আনন্দনিরুক্তা আচার্যা, অবধূতিকা আনন্দ অন্বেষা আচার্যা, রাজু মান্না প্রমুখ৷ আচার্য ত্রিগুণাতীতানন্দ অবধূত তার বক্তব্যে বলেন ‘আজকের সমাজের সর্বক্ষেত্রে যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে মার্গগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী তাঁর সর্বানুস্যুত দর্শনের মাধ্যমে  সমাজের সমস্ত প্রকার সমস্যার সমাধানের পথ দেখিয়েছেন ৷

অবধূতিকা আনন্দনিরুক্তা আচার্যা বলেন---‘একটা পাখীর যেমন দুটি ডানা তেমনি সমাজে নারী ও পুরুষ  সমাজরূপ পক্ষীর দুটি ডানা৷  সমাজের প্রকৃত কল্যাণের জন্য  পুরুষের পাশাপাশি নারীরও অগ্রগতি চাই৷  কেউ পিছিয়ে থাকলে চলবে না৷  ধর্ম সাধনা---শিক্ষা সমাজ সেবা  সবকাজেই সমানাধিকার নিয়ে নারী ও পুরুষ এগিয়ে যাক এটাই আনন্দমার্গের আদর্শ৷

অবধূতিকা আনন্দ অন্বেষা আচার্যা আনন্দমার্গের সর্বোতোমুখীর আদর্শের ওপর আলোকপাত করেন৷

রাজু মান্না বলেন--- খালিপেটে ধর্ম সাধনা হয়না৷ মানুষ যদি জীবনের যুগপোযোগী নূ্যনতম চাহিদার গ্যারান্টি না পায়  তাহলে কোন ক্ষেত্রে তার বিকাশ সম্ভব নয়৷ এজন্যে মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার  যিনি ধর্মগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী রূপেই  সারা বিশ্বে পরিচিত---তিনি যুগোপযোগী সামাজিক অর্থনৈতিক দর্শন ‘প্রাউট’ দিয়েছেন৷ এই প্রাউট দর্শনেই  সমাজের প্রতিটি মানুষের যুগোপযোগী নূ্যনতম চাহিদা পূরণের  তথা তাদের সর্বাত্মক প্রগতির গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে৷ এই সেমিনার পরিচালনার মূখ্য দায়িত্বে ছিলেন আচার্য  চিরাগতানন্দ অবধূত ও ভুক্তিপ্রধান সুভাষপ্রকাশ পাল ও স্থানীয় বিশিষ্ট আনন্দমার্গী বৃন্দ৷