মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল আগেই৷ শুধু কোনও মতে টিমটিম করে জ্বলছিল প্রাণপ্রদীপটুকু৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলে ‘ব্রেন ডেথ’৷ তাঁদের পরিবারের সম্মতি এবং সহায়তায় দুই ‘মৃত’-ব্যক্তির শরীর থেকে একাধিক অঙ্গ দান করা হল, যাতে প্রাণ বাঁচল ৭ জনের! দিল্লির এমস হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে অঙ্গদানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে৷ উভয় পরিবারের তরফে অনুমোদন পাওয়ার পর চিকিৎসকরা দু’জনের শরীর থেকে একটি হৃদ্যন্ত্র, চারটি বৃক্ক, দু’টি যকৃৎ এবং চারটি কর্নিয়া সংগ্রহ করেন৷ মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ৭ জন রোগীর শরীরে এই অঙ্গগুলি প্রতিস্থাপন করা হয়৷ কর্নিয়াগুলি এই মুহূর্তে দান করা যায়নি, সেগুলি এমসের আরপি সেন্টারে সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ জানা গিয়েছে, রাজস্থানের ভরতপুরের বাসিন্দা বাচ্চু নামে ৫১ বছর বয়সি এক ব্যক্তি গত ১২ জানুয়ারি হরিয়ানার পালওয়ালে রেল স্টেশনে দুর্ঘটনার শিকার হন৷ তাঁকে জয়প্রকাশ নারায়ণ অ্যাপেক্স ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করানো হয়েছিল৷ কিন্তু সব রকম চেষ্টা সত্ত্বেও চিকিৎসকরা তাকে বাঁচাতে পারেননি৷ গত ২৪ জানুয়ারি বাচ্চুকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করা হয়৷ বাচ্চু পেশায় ছিলেন রাজমিস্ত্রি৷ বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ও দুই নাবালক পুত্র-কন্যা রয়েছে৷ ফরিদাবাদের বাসিন্দা মায়া নামে আর এক মহিলা গত ২৩ জানুয়ারি বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মক জখম হন৷ পরিবারের লোকজন ট্রমা সেন্টারে ভর্তি করেন তাঁকে৷ ২৫ জানুয়ারি মহিলাকে ‘ব্রেন ডেথ’ বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা৷ মায়ার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, তিনি ধার্মিক মহিলা ছিলেন৷ সব সময় মানুষকে সাহায্য করতে এগিয়ে যেতেন৷ তাই ব্রেন ডেথের পর পরিবারের সদস্যরা মায়ার অঙ্গদান করার সিদ্ধান্ত নেন৷ মায়া এবং বাচ্চুর মৃত্যুর পর জাতীয় অঙ্গ এবং টিস্যু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজেশন-এর মাধ্যমে সমস্ত অঙ্গ বরাদ্দ করা হয় গ্রহীতাদের৷ একটি লিভার এবং একটি কিডনি দিল্লির এএইচআরআর হাসপাতালে, একটি কিডনি সফদরজং হাসপাতালের গ্রহীতাদের দেওয়া হয়৷ বাকি হার্ট, লিভার এবং দু’টি কিডনিগুলি দিল্লির এমস হাসপাতালের কয়েক জন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয়েছে৷ মায়ার ত্বকও সংগ্রহ করা হয়েছে, যা এমসের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সেন্টারের সদ্য প্রতিষ্ঠিত স্কিন ব্যাঙ্কে সংরক্ষিত রয়েছে৷ এমসের অর্গান রিট্রিভাল ব্যাঙ্কিং অর্গানাইজেশনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা আরতি ভিজ মায়া এবং বাচ্চুর পরিবারের এই নিঃস্বার্থ সিদ্ধান্তের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, কাউন্সেলিং, ব্রেন ডেথ শংসাপত্র, ডোনার অর্গ্যান ম্যানেজমেন্ট দল, চিকিৎসক, ট্রান্সপ্লান্ট কোর্ডিনেটর, কাউন্সেলর, নিউরোসার্জন, অ্যানাস্থেটিস্ট, ট্রান্সপ্লান্ট টিম, প্রশাসক এবং ফরেনসিক বিভাগের সমন্বয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে৷ অঙ্গদান এবং প্রতিস্থাপনের সংখ্যার নিরিখে দিল্লির এমস হাসপাতালের সুনাম রয়েছে৷ ২০২৩ সালে সেখানে ১৪টি অঙ্গদান করা হয়েছিল৷
সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়