আনন্দমার্গ আদর্শে অটল শ্রদ্ধেয় শান্তি দা স্মরণে দু’চার কথা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে ---যিনি আসেন তাঁকে তো যেতেই হয়৷ তবে এক এক জন চলে গেলে তাঁর শূন্যস্থান পূরণ করার কেউ থাকে না৷ শান্তি ছিলেন সেইরকমই একজন আনন্দমার্গের নীরব কর্মী৷ সংঘের বহু গুরু দায়িত্ব তিনি বহন করেছেন৷ বহু ঘাত-প্রতিঘাত বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে৷ শান্তি দা কখনো বিচলিত হতেন না৷ কেউ কখনও তাঁকে রেগে যেতেও দেখেন নি৷ যেকোনো পরিস্থিতিতে শান্ত চিত্তে সবকিছু সামলে নিতেন৷ বড় রসিক আর মজার মানুষ ছিলেন শান্তি দা৷ নামের সঙ্গে আচার আচরণ আর ব্যবহারের এমন সার্থক মিল সচরাচর দেখা যায় না৷

তাঁর গুরুভক্তির মধ্যে ছিল না কোন বাহ্যিক বিহ্বলতা---‘‘দাও ভক্তি শান্তিরস স্নিগ্দ সুধা পূর্ণ করি মঙ্গল কলস সংসার ভবন দ্বারে৷’’ এ সংসারে ভক্ত হিসেবেও শান্তিদা ছিলেন সার্থক নামা৷ গত ২৩শে আগষ্ট সকাল ৭টায় শাশ্বত শান্তি ধামে চলে গেলেন শান্তিদা পার্থিব জগতের কর্ম সমাধা করে৷ ২৯শে আগষ্ট আনন্দমার্গের কলিকাতা কেন্দ্রীয় আশ্রমে শান্তিদার পুত্র কন্যা আত্মীয় পরিজন আশ্রমের বহু সহকর্মীদের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয় শান্তিদার স্মরণে শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠান৷

প্রভাত খাঁর সংযোজন ঃ আজ সকালে ২৩/৮/২১-এর দিনটি আমার জীবনে এক মর্মান্তিক দুঃখের দিন কারণ বজ্রপাতের মত দুঃসংবাদ কানে এলো যে আমাদের অতি প্রিয় মার্গীভাই শান্তিদা আর আমাদের মধ্যে নেই! আমি বিছানায় শয্যা শায়ী মেরুদণ্ডের  ক খানা হাড় নষ্ট হওয়াতে৷ আমরা একসঙ্গেই কাজ করেছি আনন্দ মার্গের পতাকাতলে দীর্ঘদিন৷ সেটা হবে সম্ভবত ১৯৬২ সাল থেকে৷ প্রপার নাম হলো না কনোটেটিভ কিন্তু শান্তি দার নাম হলো কনোটেটিভ সার্থক নাম৷ তাঁর মধ্যে সবচেয়ে যেটা ভালো গুণ তা হলো শান্তি দা কোন অবস্থাতে রাগ করতেন না৷ সব সময়েই তিনি শান্ত৷ যে সময়ের কথ বলছি সেটা আনন্দমার্গের ইতিহাসের  প্রায় কৈশরকাল৷ সেদিন আমাদের সাক্ষ্যাতে ও আলোচনার স্থান ছিল কলকাতার শান্তিদার অফিস ম্যাগলিন বেরী কোম্পানীর এ্যাডমিন কার্য্যালয়ের একটি ঘরে৷ সেখানে তিনি কাজ করতেন আর ইষ্টার্ন রেলওয়ের মেন কার্য্যালয়ের একটি ঘরে যেখানে কার্র্য্যলয়ের লিগ্যাল সেকসনের এক ঘরে কাজ করতেন৷ হাওড়ার আন্দুলের মাননীয় কানাই মাঝি৷ আমরা মিলিত হতাম৷ আজীবন তাঁরা আনন্দমার্গের  জন্য প্রাণপাত করেছেন৷ তাঁদের ভোলার নয় আনন্দমার্গের ইতিহাসে৷ শান্তি দা ছিলেন পর্বতের মতো অচল ও অটল৷ আজ শূন্য হলো সেই দু’টি মানুষ! কানাই দা  আগেই ছেড়ে চলে গেছেন৷ আজ ছেড়ে গেলেন শান্তি দা৷  আমি আজও  রয়ে গেলাম৷ শান্তি দা বিপদে আপদে সংঘটনের পাশে ছিলেন৷ আমাকে বার বার জেলে যেতে হয়েছে৷ শান্তি দা আমার পরিবারের পাশে ছিলেন৷ তাদের শান্তনা দিয়ে গেছেন এমনকি আর্থিক সাহায্যও করেছেন৷ ১৯৭৫ সালের ভয়ঙ্কর অভ্যন্তরীণ ইমারজেন্সিতে আমি মিশায় বন্দী হই৷ তখন দীর্ঘ প্রায় দু’বছর কারাগারে আটক থাকি হুগলী জেলে৷ তখন শান্তি দা আমার বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন৷ তিনি নোতুন পৃথিবীর প্রাণ পুরুষ বিশেষ৷ তাঁর নামে নোতুন পৃথিবীর কার্র্যলয়ে  লিজে কেনা হয়৷ এই বাড়ি কেনা হয় শান্তিদার নামে৷ তিনি অত্যন্ত সাহসী ব্যষ্টি ছিলেন৷ তাঁর ভাড়া বাড়িতে সংঘটনের অনেক কাজই হতো বিভিন্ন শাখার৷  তিনি কখনো ভয় পাননি৷ দায়িত্ব নিয়ে ভয়ে অস্বীকার করেন নি৷ শান্তিদা বলতে কলকাতায় আনন্দমার্গের একজন সক্রীয় দায়িত্বশীল, গৃহী পরমারাধ্য ৰাৰার কথায় সদ্‌বিপ্র৷ শেষ জীবনে তিনি প্রায়  অক্ষম হয় হয়ে পড়েছিলেন  তবুও তিনি প্রায় নিয়মিত নোতুন পৃথিবী কার্য্যালয়ে আসতেন৷ এই শান্তি দা ছাড়া একদণ্ড  চলতো না৷ তিনি চলে গেলেন, তাতে আমি মনে করি নোতুন পৃথিবী তাঁর অভিভাবককে হারালো৷ কারণ আমি নোতুন পৃথিবীর সোসাইটির ও নোতুন পৃথিবী পত্রিকার একজন সদস্য হিসেবে  আজ এই দুর্দিনে অত্যন্ত অভাববোধ করছি যেমন আচার্য সত্যশিবানন্দের প্রয়াণে আঘাত পাই৷ পরমারাধ্য ৰাৰা তাঁকে কোলে স্থান দেবেন প্রার্থনা করি৷

বর্ত্তমানে শান্তিদা একপুত্র নিয়ে থাকতেন৷ তাঁর সংসারে ছিল ২ পুত্র এক কন্যা ও তাঁর ভক্তিমতী মা৷ তাঁর স্ত্রী ও মা কয়েক বছর হলো মারা গেছেন৷ এক পুত্র বিদেশে থাকে৷ তাঁর কন্যার বিবাহ হয়ে গেছে৷

একটি বিশেষ কথা না বললে অসম্পূর্ণ থাকে তাঁর কথা৷ তিনি মার্গের দর্শনে উল্লিখিত প্রাউট-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন৷ কারণ এই মহান দর্শন আর্থিক তথা সামাজিক দর্শন সারা বিশ্বের সার্বিক কল্যাণে নব্যমানবতাবাদকে অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ তাই সমাজ আন্দোলনে সার্বিক শোষণ মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন সারা জীবন৷ এই শোষণ এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমিও প্রথম থেকেই যুক্ত৷

স্মার্ত্ত্য এই দর্শনভিত্তিক যে ‘আমরা বাঙালী’ সমাজ আন্দোলন, সেই আন্দোলনে কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সচিবের দায়িত্ব তিনি পালন করেছেন৷ তাঁর বিদেহী আত্মার চিরশান্তি কামনা করি পরম পুরুষের শ্রীচরণ কমলে৷