গত ১৫ই ফেব্রুয়ারী কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী শিবসাগরে এসে বলে গেলেন, অসমচুক্তি অসম রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে এনেছে ও তারা ক্ষমতায় এলে অসমে নাগরিকত্ত্ব আইন প্রয়োগ করা হবে না৷ ‘‘আমরা বাঙালী’’ অসম রাজ্য কমিটির সচিব সাধন পুরকায়স্থ রাহুল গান্ধীর এই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে বলেন--- ‘‘অসম চুক্তি’’ শুধু অসম নয়, সারা উত্তরপূর্বাঞ্চলকে বাঙালী বিদ্বেষী করে তুলেছে৷ নাগরিকপঞ্জী থেকে শুরু করে ডি-ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্প সবকিছু এই কালা চুক্তির ফসল৷
রাহুল গান্ধীর জানা উচিত ছিল দক্ষিণ অসমের বরাক উপতক্যায় ১৯৭৯ সাল থেকে পাঁচ বছরে অসম আন্দোলনের কোন প্রভাব পড়েনি৷ সারা অসম ছাত্র সংস্থা (আসু)র ডাকে ১৯৮০ সালের লোকসভা নির্বাচন বয়কটের কোন প্রভাব শিলচর, করিমগঞ্জে পড়ে নি৷ প্রয়াত সন্তোষ মোহনদেব ৮০ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শিলচর থেকে সাংসদ হয়েছিলেন৷ সুতরাং অসম আন্দোলন সমগ্র অসমবাসীর আন্দোলন ছিল না৷ ব্রহ্মপুত্র উপতক্যায় ও নাগরিক অধিকার রক্ষা কমিটির নেতৃত্বে বিদেশী খেদাও আন্দোলনের নামে বাঙালী খেদাও আন্দোলনের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হয়েছিল৷ নেলী, সহপুরে বাঙালী গণহত্যা হল৷ ড.অঞ্জন চক্রবর্তী সহ কত বাঙালীর প্রাণ ঝরল৷ অসম আন্দোলনের নিহত লোকদের অসম সরকার শহীদ ঘোষণা করে অর্থ সাহায্য করলেও বাঙালীরা নূ্যনতম সন্মান ও সাহায্য পেল না৷
সাধন পুরকায়স্থ বলেন--- রাহুল গান্ধীর জানা উচিত নাগরিকপঞ্জী উন্নীত করার কথা অসম চুক্তিতে ছিল৷ তাই নাগরিকপঞ্জী তৈরীর নামে বাঙালীরা যে চরম হেনস্থার শিকার হচ্ছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আজও নাগরিকপঞ্জীর ব্যাপারটা ঝুলিয়ে রেখে বাঙালী সমাজকে উৎকন্ঠার মধ্যে রাখা হচ্ছে৷ ৭০ জনের অধিক বাঙালী আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছে৷
দেশভাগের বলি লোকদের নাগরিকত্বের প্রতিশ্রুতি জাতীয়স্তরের নেতা জহরলাল নেহেরু থেকে শুরু করে সর্দার প্যাটেল, মহাত্মা গান্ধী সবাই দিয়েছিলেন৷ সেই কথাটি একটিবারও উচ্চারণ করতে দেখা গেল না রাহুল গান্ধী কে, দেখা গেল শুধু নাগরিকত্ব আইনের বিরোধীতা করতে৷ নেহেরু থেকে শুরু করে তৎকালীন জাতীয় নেতাদের নাগরিকত্ব প্রদানের প্রতিশ্রুতিতেই লক্ষ লক্ষ বাঙালীকে দেশভাগের বলি হতে হয়েছে, কিন্তু স্বাধীনতার ৭৪ বছর হতে চলল দেশভাগের বলি অজস্র বাঙালীদের আজও রেল লাইনের ধারে ফুটপাথে নানা দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে, এর জবাবে রাহুল গান্ধী বা ওই স্তরের নেতারা কি দেবেন?
আর বিজেপি....সে তো বাঙালীদের নিয়ে পুতুল খেলা খেলছে, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে বাঙালীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া, বাঙালীদের খুন করা ইত্যাদি তো চলছে৷
‘‘আমরা বাঙালী’’ এই আইনের সংশোধন চায় ও বিনাশর্তে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলে আসছে৷
তাই রাহুল গান্ধী সহ যে সমস্ত দল বাঙালী জাতটাকে ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে রেখে ভোটের রাজনীতি করতে চাইছে,তাদের চিহ্ণিত করে যোগ্য জবাব দিতে শ্রী সাধন পুরকায়স্থ বাঙালী জনগোষ্ঠীর কাছে দাবী রাখেন৷