আগরতলা, ২রা জুলাই ঃ এন.আর.সি (জাতীয় নাগরিক পঞ্জীকরণ) সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিস্মিত অসমের বাঙালিরা৷ তাদের অভিযোগ, শুনানির আগেই চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের নির্দেশ দেওয়ায় বিঘ্নিত হবে বাঙালীদের স্বার্থ৷ শুধু তাই নয় , প্রথম তালিকায় নাম থাকা সত্ত্বেও ‘বিদেশি বা ভোটার তালিকার ‘সন্দেহভাজন’দের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশেও অখুশী অনেকেই৷ প্রসঙ্গত , এন.আর.সি-র প্রথম তালিকা প্রকাশিত হয় গত বছর ৩১শে ডিসেম্বর গভীর রাতে৷ অসমের ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ১কোটি ১০ লাখ মানুষের নাগরিকত্ব নিশ্চিত হয়েছিল প্রথম দফায়৷ বাদ পড়ে যায় বহু বিশিষ্ট জনের নাম মন্ত্রী-সাংসদ থেকে শুরু কয়েক পুরুষ ধরে অসমে বসবাসকারীবাঙালীর রহস্যজনক ভাবে নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের চাপে পড়েন৷ যাঁদের নাম ছিল তাঁরাও অনেকে এখন বিপাকে পড়তে চলেছেন৷
এদিন গুয়াহাটিতে বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন এ.আই.ডি. ইউ.এফ নেতা আমিনুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ‘প্রথম দফার তালিকার অন্ততঃ দেড় লাখ লোক হারাবেন তাঁদের নাগরিকত্ব৷’ কারণ অসমে ৪,৫০০ ‘বিদেশি’ ও ৬৪ হাজার ‘সন্দেহভাজন’ ভোটার রয়েছেন৷ এন.আর.সি-র আবেদনের কারণে তাঁদের পরিজনদের নামও সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশে বাদ যাবে৷’
এন.আর.সি -র চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশের কথা ছিল ৩০শে জুন৷ কিন্তু বন্যার কারণ দেখিয়ে সেটি পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করেছিলেন এন.আর সি-এর অসম সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা৷ সুপ্রিমকোর্টে বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ও আর.নরি ফলিম্যানের বেঞ্চ এদিন চূড়ান্ত খসড়া প্রকাশের দিন ৩০শে জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়েছে৷ সেই সঙ্গে জানিয়েছে, চূড়ান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশের পরদিন হবে আপত্তি সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি৷ এখানেও আপত্তি রাজ্যের সংখ্যালঘুদের৷ অসম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায় অসমের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থের বিরোধী৷ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর শুনানির আর কোনও অর্থ থাকে না৷’ তাঁর মতে, দেশভাগের পর বাঙালির জীবনে এত বড় বিপর্যয় আর আসেনি৷ তিনি বলেন, ‘বাঙালির সর্বনাশ করবেই জহ্লাদেরা৷’ বহু বৈধ ভারতীয় নাগরিকের নামই তালিকা থেকে বাদ যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অসমের নাগরিক সুরক্ষা আন্দোলনের নেতা সাধন পুরকায়স্থ৷ সর্বোচ্চ আদালতের রায় নিয়ে মন্তব্য না করলেও এন আর সি কর্তৃপক্ষের আচরণকে অভিসন্ধি মূলক বলে বর্ণনা করেন তিনি৷ রাজনৈতিক দলগুলি আদালতের রায় নিয়ে এখনই মন্তব্য করতে নারাজ৷ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল আশ্বাস দিয়েছেন, কোনও বৈধ নাগরিকের নাম বাদ পড়বে না৷ তবে অসমের হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের বাঙালির আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে৷ ক্ষোভের আঁচ পেয়েই এদিন সুপ্রিম কোর্ট এদিন প্রতীক হাজেলা ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনদের নিরাপত্তা বাড়াতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে৷