বিশিষ্ট অসমীয়া বুদ্ধিজীবী নগেন সইকিয়ার বরাককে অসমের ক্যান্সার মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায়‘আমরা বাঙালী’ রাজ্যকমিটি৷ অসম প্রদেশ সচিব সাধন পুরকায়স্থ এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, অসম সাহিত্যসভার প্রাক্তন সভাপতি বিশিষ্ট অসমীয়া বুদ্ধিজীবী নগেন সইকিয়া বাঙালী সংখ্যাগরিষ্ঠ বরাক উপত্যকাকে অসমের ক্যান্সার, তাই বরাককে অসম থেকে পৃথক করে একটি রাজ্য তৈরির পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন৷ শুধু নগেন সইকিয়া নন, এইভাবে পালাক্রমে অনেক অসমীয়া বুদ্ধিজীবী বরাককে পৃথক করার কথা বলেছেন৷ ‘‘আমরা বাঙালী’’ মনে করে, ডঃ নগেন সইকিয়া সত্যি কথাটি বলেছেন৷ ঐতিহাসিক, ভৌগলিক, ভাষা, সংস্কৃতির দিক দিয়ে অবিভক্ত কাছাড় জেলা বর্তমান বরাক উপতক্যায় আলাদা স্বতন্ত্র বহন করে চলেছে৷ তাহা কেহ অস্বীকার করতে পারেন না৷ ১৮৭৪ সালে যখন অসম প্রদেশের জন্ম হলো,তখন অর্থনৈতিক স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে অবিভক্ত বাংলার অঞ্চল আজকের বরাক উপত্যকা ও অবিভক্ত গোয়ালপাড়া নবগঠিত অসম প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল৷ সুতরাং ঐসব অঞ্চল কোনদিন অসম রাজ্যের বা অহম শাসিত রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল না৷
বাঙালী অধ্যুষিত ঐসব অঞ্চল আজ অনেকের দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে৷ চলছে ভাষা-সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, অর্থনৈতিক বঞ্চনা৷ প্রায় প্রতিদিনই একশ্রেণীর উগ্র অসমীয়া জাতীয়তাবাদী নেতা কর্মীরা উলঙ্গভাবে বাঙালীকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বিবৃতি দিচ্ছে৷ অসম আন্দোলনের সময় নেলী, গোপুর ইত্যাদি অঞ্চলে বাঙালী গণহত্যা হয়েছে৷ গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজে বাঙালী ডাক্তার অঞ্জন চক্রবর্তীকে হত্যা করা হয়েছে৷ হত্যা করা হয়েছে রবি মিত্রকে৷ বিভিন্ন সময়ে ভাষার প্রশ্ণে বাঙালীর ঘরবাড়ীতে আগুন দেওয়া হয়েছে৷ বাংলা ভাষায় লেখা সাইনবোর্ড গুয়াহাটির পাণ্ডমালিগাঁও অঞ্চলে প্রকাশ্যে ভেঙে ফেলা হয়েছে৷ যার ফলে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত কয়েক লক্ষ বাঙালী পশ্চিমবঙ্গে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন৷ সংখ্যার নিরিখে বাঙালী দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হওয়া সত্ত্বেও স্বীকৃতি নেই৷ ভাষা আইনের ৫ নং ধারায় যেখানে বরাকে বাংলা ভাষা স্বীকৃত, সেখানেও চরম আগ্রাসন চলছে৷ ব্রহ্মপুুত্র উপত্যকার তেজপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে৷ কোথাও কোথাও চাপ সৃষ্টি করে বাংলা মাধ্যম স্কুল গুলোকে অসমীয়া মাধ্যমে রূপান্তরিত করা হয়েছে৷
এই পরিস্থিতিতে ডঃ নগেন সইকিয়ার মন্তব্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক৷ আমরা তাহার বক্তব্যকে সাধুবাদ জানাচ্ছি৷ এমনিতেই উত্তরপূর্বাঞ্চলে বসবাসকারী দুইকোটি বাঙালীর কোন বাসভূমি নেই৷ একদিকে তিপ্রাল্যাণ্ড থেকে শুরু করে সব রাজ্যেই চলছে বাঙালী বিতাড়ণের মহড়া৷ তাই বাঙালীকে তার নিজস্ব বাসভূমির লড়াই চালিয়ে যেতে হবে৷ আমরা রাজ্য পুনর্গঠন কমিশনকে আবার সক্রিয় করে বাংলার অঞ্চল থেকে কেটে নেওয়া এলাকা গুলোকে বাংলার অন্তর্ভুক্ত করে বাংলা পুনর্গঠন করার দাবী রাখছি৷