নির্বাচনের আসরে তো নানা কায়দা কানুন করে দলগুলো সংখ্যাধিক্য দেখিয়ে শাসনে যায় কেন্দ্রে ও রাজ্যে৷ এটা আমরা তো দেখে আসছি সেই ১৯৫২ সাল থেকে৷ সংবিধানে বলা হয়েছে এদেশ নাকি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র৷ কিন্তু বর্ত্তমানে দেখা যাচ্ছে নির্বাচনের কয়েকমাস আগে থেকে সেই ‘রথযাত্রা’, কীর্ত্তন পরিক্রমা ইত্যাদি করে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন সম্প্রদায়কে প্রলুব্ধ করে বোটে জেতার ফন্দি ফিকির করার চেষ্টা চালাচ্ছে৷ এতে বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অশান্তি পাকাচ্ছে৷ তাছাড়া দলে দলে বিরোধ সৃষ্টি হচ্ছে৷ তাছাড়া সব ব্যাপারে দলগুলো কোর্টে হাজির হয়ে আইনের রক্ষক বিচার বিভাগকে ব্যতিব্যস্ত করছে৷ যেটা বিচার বিভাগও মেনে নিতে পারছেন না৷
এদ্দিন তো এসব ছিল না৷ বিজেপি এই রথ যাত্রার প্রবর্ত্তন করে৷ নির্র্বচনের লক্ষ্য হলো নাগরিকগণ প্রার্থীদের বোট দানে নির্বাচিত করবেন৷ সেখানে এইসব যাত্রার কি অর্থ আছে? নির্বাচনে দলগুলি যে যে প্রতিশ্রুতি পালন করেছে ও যা সফল করতে পারে নি সেই সবগুলি জনগণের কাছে ব্যক্ত করবে এটাই উচিত৷ তা না করে জনগণকে ভড়ং দেখাবার কি অর্থ আছে?
এদেশের নানা ধর্মমতের নাগরিকদের বাসস্থান ৷ নির্বাচনে অংশ নিয়ে নাগরিকগণ যে দলকে বা যে প্রার্থীকে বোট দিতে ইচ্ছুক তাঁরা দেবেন৷ জনগণের সেবা করাটাই হলো প্রার্থীদের কর্ত্তব্য৷ তাই তাঁরা কী করবেন জয়লাভ করে সেটা জানানোটাই আসল কাজ৷ তা না করে অন্যদলের কুৎসা রটিয়ে কটূক্তি করে উত্তেজনা ছড়িয়ে জেতবার মতোমানসিকতাটা আসে কি করে? ‘রাম না জন্মাতেই রামায়ণে’র মতোই কোনো দল বলছে ‘‘সব আসন চাই’’, কোনো দল বলছে ‘‘২২টা আসন চাই৷’’
৭১ বছর তো হলো দলীয় শাসনের৷ সেবা এদেশে কে কতটা দিয়েছে? অদ্যাবধি কতটা সেবা দলগুলো দেশকে দিতে পেরেছে সে কথাটাতো কেউই বলছে না৷ মিথ্যাচারিতা দুর্নীতিতে তো দেশ পঙ্গু! দেশের কোন্ দলটা ভালো করেছে? হ্যাঁ মাঝে মাঝে দল পাল্টাচ্ছে আর শাসনের গঙ্গা যাত্রা ঘটছে৷ যে আসছে সে প্রথম প্রথম কিছু করার চেষ্টা করছে৷ কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছে সবাই আপন স্বার্থসিদ্ধিতে ব্যস্ত৷ প্রায় সব দলেরই একই অবস্থা৷
যারা শাসনে আছে সেই দলের ও দলগুলির পায়াভারি৷ পরাজিত দলের ধান্দাবাজ নেতা -নেত্রীরা শাসকদলে হুডমুড় করে ঢুকছে নোতুন করে বিশেষ সুবিধা পেতে৷ অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো দলগুলো ও নেতা-নেত্রীদের অনেকেই গণতন্ত্রের এই নোংরা পথে হেঁটে রাজনীতিটাকে একটা মেছো বাজরে পরিণত করে ফেলেছে!
অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে বলতেই হয় ভারতের মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য রাজ্য হলো এই সমস্যা সংকুল জনসংখ্যা বহুল ক্ষুদ্র রাজ্য পশ্চিমবাংলা৷ এই রাজ্য সব দিক থেকে বঞ্চিত, শোষিত৷
এখন নির্বাচনটাই সাধারণ মানুষের জীবনে হয়ে দাঁড়িয়েছে এক আতঙ্ক৷ কার যে কখন প্রাণ যাবে কেউ জানে না৷ নাগরিকরাযাতে শান্তিতে মতামত দান করতে পারে সেদিকে শাসকদলের নজর নেই৷
নির্বাচনে দলগুলো কোটি কোটি টাকার খেলা খেলছে৷ এ যেন রাজসূয় যজ্ঞ! হতভাগ্য গরিব দেশ এতে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে৷ এতে হতভাগ্য নাগরিক জনগণের কী লাভ? লাভ হয় দলগুলোর যারা জেতে৷ তারা রোজগারের পথ পায়৷
সৎনীতিবাদী, ন্যায়পরায়ণ দেশ সেবকগণ আজ রাজনীতি থেকে বহুদূরে ৷ আজ যারা আছে তাদের অধিকাংশই নিজেদের ভাগ্য ফেরাতে এই পথকে বেছে নিয়েছে৷ এতে জনগণের কল্যাণ সুদূর পরাহত৷ বর্ত্তমান গণতন্ত্র ধনীদের নিয়ন্ত্রণে!