আগরতলা, ২০শে অক্টোবর ঃ আমরা বাঙালীর তরফ থেকে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সংঘটনের ত্রিপুরা রাজ্যসচিব শ্রীহরিগোপাল দেবনাথ অসমে এন আর সি নাম দিয়ে প্রায় ৪০ লক্ষ বাঙালীকে বিদেশী ঘোষণা করার চক্রান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেন৷ তিনি ওই প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, আজ বাঙালী জাতির অস্তিত্ব বড়ই সংকটপূর্ণ হয়ে উঠেছে৷ এক শ্রেণীর স্বার্থান্ধ ও কুচক্রান্তকারী বাঙালী বিদ্বেষী রাজনৈতিক অশুভ শক্তিসমূহের ভিন্ন ষড়যন্ত্র ও অমানবিক দৌরাত্ম্যের কারণে অতীতের সেই মুঘল যুগ ও ব্রিটিশ শাসনের অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলোর কথা আজও আমাদের ভুলতে দিচ্ছে না৷ বর্তমানে স্বাধীনোত্তর ভারতে হিন্দী সাম্রাজ্যবাদী আর বাঙালী বিদ্বেষী বিচ্ছিন্নতাবাদী কায়েমী স্বার্থান্ধ অশুভ শক্তির কবল থেকে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করাটাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ আমাদের সহ্যের সীমাও ছাড়িয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে৷ তাই আর মুখ বুজে কিংবা নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে ঝিমোবার অবসর নেই৷ মনে রাখতে হবে আমাদের নিশ্চেষ্টতাই আমাদের জাতীয় জীবনের এক চরম সর্বনাশ ডেকে আনবে৷ সুতরাং আসুন, সকলে মিলে যত রকমের অন্যায় অত্যাচার জুলুম আর উপেক্ষার বিরুদ্ধে আমরা জেগে উঠি৷ দিক্বিদিক আলোড়িত করে আমরা সিংহবিক্রমে এগিয়ে যাই ও যাবতীয় বাঙালী বিরোধী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গর্জন তুলি---এন আর সি কিংবা ভিত্তি সালের অজুহাতে কোনো বাঙালীকেই বিদেশী বলা চলবে না৷
মূলতঃ ত্রিপুরার মাটি আর অসমের মাটিও সাবেক বাঙলারই মাটি৷ আর ভারতের বুকে কোনও বাঙালীই বিদেশী হতে পারেন না৷ শুধু বিভেদকামী ও কায়েমী স্বার্থ লোলুপ গোষ্ঠীসমূহের বদ্ খেয়াল ও অযৌক্তিক চক্রান্ত সার্থক করে তুলতেই বিভিন্ন অজুহাত খাড়া করে বাঙালীকে হেনস্থা করা হচ্ছে৷ আপনারা সবাই জানেন, ইতোপূর্বে অসমে এন আর সি-ণ অজুহাতে প্রায় দেড়কোটি বাঙালীকে ডি-ভোটার বানিয়ে ডিটেনশন ক্যাম্পে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে ও বাঙালী-র মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে’’
ত্রিপুরায়ও রাজ্যভাগের চক্রান্তকে সুড়সুড়ি দেওয়া হচ্ছে তাই এসব ঘৃণ্য চক্রান্তকে তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানাই৷ ‘আমরা বাঙালী’র আহুত আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে আমাদের কয়েকটি দাবী---
(১) এন আর সি কিংবা ভিত্তি সাল দেখিয়ে একজন বাঙালীকেও ‘বিদেশী’ চিহ্ণিত করা চলবে না৷
(২) ভারতে বসবাসরত একজন বাঙালীকেও উৎখাত করা চলবে না৷
(৩) বাঙালী জাতি স্বার্থবিরোধী এন আর সি আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে৷
(৪) বাঙালীর নাগরিকত্বের ব্যাপারে কোনও ভিত্তিসাল রাখা চলবে না৷
(৫) ত্রিপুরা রাজ্য ভাগ করা চলবে না৷ বরং ত্রিপুরাকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ং সম্পূর্ণভাবে গড়ে তুলতেই হবে৷
(৬) ত্রিপুরায় বিভেদকামী শক্তিকে বাড়তে দেওয়া চলবে না ও পাহাড়বাসী বাঙালী ও সমতলবাসী বাঙালীর মধ্যে শান্তি-সম্প্রীতির বাতাবরণ গড়ে তুলতেই হবে৷
(৭) ত্রিপুরার মূল সমস্যা যেহেতু অর্থনৈতিক, তাই রাজনৈতিক ভাগাভাগি দুষ্টচক্রের ঘৃণ্য খেলা বলে নস্যাৎ করতে হবে৷
(৮) অসমে কোন বাঙালীকেই আর ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা চলবে না৷