গণতন্ত্রে মৌলিক অধিকার

লেখক
প্রভাত খাঁ

এই প্রতিবেদনটি লেখার পূর্বে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতিদের একটি বিচারের সিদ্ধান্তে উল্লেখ আছে নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি ঢাল হতে পারে শুধু তাঁদেরই  কাছে যাঁরা সংবিধানের নির্দ্দেশকে মান্যতা দেন৷ এই উক্তিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অনেক বোঝার আছে৷

আজ যাঁরা নির্বাচনে জয়লাভ করে শাসনে গেছেন তাঁদের ও যাঁরা বিশেষ করে প্রশাসনের উচ্চ শিখরে বসে আছেন তাঁদের বিশেস করে এই নির্দ্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করাটা খুবই জরুরী কারণ তাঁদের পবিত্র দায়িত্বই হলো সংবিধানকে মান্যতা দিয়ে দেশের শাসন অর্থাৎ সেবা করা৷ আর নাগরিকদেরও এই মান্যতা দিতে হবে৷

যাঁরা রাজনৈতিক দলে আছেন ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁদেরও এই বিধানকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করা প্রতিবাদ আন্দোলন,শাসনও আবশ্যিক জনসেবা সবই সার্থক হবে যদি এগুলি মেনে চলা হয়৷

কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি? যখনই যাঁরা শাসনে আসেন তাঁরা সংখ্যার জোরে সেই পবিত্র সংবিধানকেই পরিবর্ত্তন করে বসেন৷ এটা কিন্তু ঠিক নয়৷ বিরোধীদের কথা শুনে অনেক ভেবে চিন্তে তবে আইন বদলাতে হয়৷ দলীয় স্বার্থে নয়৷ আর সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরেও নয় আমরা ভুরি ভুরি উদাহরণ পাচ্ছি তা হলো দলীয় স্বার্থেই সংবিধান পরিবর্তন ও পাল্টানো৷ তার যে বিষময় ফল তাও দেখছি এই দীর্ঘ ৭৫ বছরে৷ আজ সত্যই কি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি? কোটি কোটি মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি? নূ্যনতম অভাব জনগণের মেটাতে পেরেছি? মোটেই নয়৷ দলীয় সরকারগুলি কেবল মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে আর নানা ধান্দা করছে নিছক দলীয় স্বার্থে৷ যেটি বাস্তবে ভাণ্ডা ফোর হয়ে যাচ্ছে ও নানা নোতুন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে৷ আর জনগণের সামনে তাঁরা নানাধরণের এমন সব সমস্যা এনে দিচ্ছে যাতে তাঁরা  মূলতঃ বেঁচে থাকার সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু করার চিন্তা করছেন তখনই নোতুন সমস্যায় তাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে কথাটি বলতে চাই সেটাই  যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় রাজ্য সরকারগুলিই হলো জনগণের সঙ্গে সরাসরিযুক্ত৷ রাজ্য সরকার জনগণের সব ব্যাপারে দেখতে হয় ও সেবা দিতে হয়৷ এই যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় নির্বাচিত রাজ্যমন্ত্রী সবাই সেবা দেন আর কেন্দ্রের মনোনীত নির্বাচিত নন একজন গভর্নর থাকেন তাঁর নামে রাজ্য সরকার শাসন পরিচালনা করেন৷ ইনি মূলতঃ অধিকাংশ ক্ষেত্রে জনগণের বিশেষ পরিচিত নন সেই ইংরেজ আমলের ছোটলাটের মতই৷

যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থাটি চলবে সংবিধানের প্রতিটি অক্ষর পালন করে কোন দলের আর যাঁরা নিরপেক্ষ তাঁদেরও৷ যতো দিন যাচ্ছে দেখা যাচ্ছে ভারতের  মতো বিশাল দেশে সর্বক্ষেত্রে নোংরা দলবাজিটাই পদে পদে মাথা চাড়া দিয়ে চলেছে৷

অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি দেশ চলছে যেন এক ডামাডোলের মধ্য দিয়ে৷ কি কেন্দ্র আর কি রাজ্য সংবিধান মোতাবেক চলছেই না দু’একটা বাদে৷ ভারতের মতো বিরাট দেশে নানা ভাষাভাষীর জনসংখ্যা অধ্যুষিত একটি এলাকায় রাজনৈতিক সচেতন মানুষ কমবেশি পাওয়া যায় তাই এদেশের রাজনৈতিক নেতা ও নেত্রীগণ কৌশল ও ছল চাতুরী করে পার পেয়ে যায়৷ তাই দেশের কেন্দ্র রাজ্যগুলির ও ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েৎ পর্যন্ত শাসন আছে সেখানে অধিকাংশ লোক অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ বেশী না থাকলে ও অধিকাংশ রাজনৈতিক সচেতন না হলে সেই জাত পাত কুসংস্কার সাম্প্রদায়িকতাই নির্বাচনে বোট পাওয়ার পরোক্ষে প্রধান হয়ে উঠবে ও আজও উঠছে৷

সেই কারণে কেন্দ্র, রাজ্য ও প্রশাসকগণ আর খোদ গভর্ণরকে অতিমাত্রায় সংবিধানকে মর্যাদা দিয়েই চলতে হবে৷ নচেৎ  দেশ এর অবস্থা চরমতম শোচনীয় হতে বাধ্য৷ তাই সংবিধানের রক্ষক হতে হবে মূলতঃ রাজ্যপালকে৷ যদি রাজ্যপাল সেটা না মেনে যদি অন্যভাবে চলে তা হলে গণতন্ত্রের গঙ্গাযাত্রা ছাড়া অন্যপথ নেই৷ তাঁকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁকে জনগণের  স্বার্থেও অতি সচেতন হয়ে চলতে হবে৷ আগে কেন্দ্র সরকার রাজ্যের শাসকদের সঙ্গে আলোচনা করেই রাজ্যপাল পাঠাতেন৷ কিন্তু বর্তমানে সবই উল্টো হয়ে যাচ্ছে৷  রাজ্যপাল যদিও গণতন্ত্রে এই শব্দটি প্রশ্ণাতীত নয়৷ রাজতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল শব্দ চলে৷ গণতন্ত্রে বেমানান৷ অনেক রাজনৈতিক নেতা গণতন্ত্রে ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ সাধারণ সম্পাদক (জেনারেল সেক্রেটারী)৷

সেক্রেটারী জেনারেল এমনই পদ হয়৷ যেমন ইউ,এন,ওতে---সেক্রেটারী জেনারেল৷ গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি শব্দটি যেমন কাণে কাজে ঠিক তেমনই রাজ্যপাল কাণে বাজে৷ যেমন---জেলা সভাধিপতি) বড় কাণে কাজে৷

গণতন্ত্রে বিরোধী দলের সরকারকেও মান্যতা দিতে হয়৷ পদে পদে অপদস্থ করাটা শোভনীয় নয়৷ এ ব্যাপারে বেশী বাড়াবাড়ি হচ্ছে বর্তমানে৷ যদিও এটাকে চালু করেছিলেন সেই কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাত্রী ইন্দিরাজী প্রধানমন্ত্রী হয়ে বিরোধী দলের সরকারকে অপদস্থ করতো ও ফেলে দিতো৷  এটাতো  স্বৈরচারিতারই লক্ষণ৷