ইংল্যাণ্ডে আয়োজিত জুডো কমনওয়েলথ গেমসে যোগ দিতে চলেছে পূর্ব মেদিনীপুরের এক দৃষ্টিহীন ছাত্র

সংবাদদাতা
ক্রীড়াপ্রতিনিধি
সময়

পূর্বমেদিনীপুরের এক দৃষ্টিহীন পড়ুয়া বুদ্ধদেব জানা চলতি মাসেই যোগ দিতে চলেছেন ইংল্যাণ্ডে অনুষ্ঠিত প্যারা জুডো কমনওয়েলথ গেমসে৷

বুদ্ধদেবের ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি  ক্ষীণ হতে লাগছিল  পড়তে অসুবিধা হত, বাধ্য হয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে আসতে হয় কলকাতায়৷ ভর্তি হতে  হয় দৃষ্টিহীনদের সুকলে৷ শুরু হয় এক আঁধারাচ্ছন্ন জীবনের লড়াই৷ সেই যুদ্ধ জয়ের পথে এখন বুদ্ধ৷

ইংল্যাণ্ডে যাওয়া বুদ্ধদেবের পক্ষে মোটেও সহজ ছিল না৷ হেঁড়িয়ার নয়াচরা গ্রামের বাসিন্দা৷ নিজের জীবনে বুদ্ধদেব ছোট তিনি৷ সাত জনের সংসার চালাতে তার মা-বাবা হিমশিম খেয়েছে৷ এদিকে বুদ্ধদেবের চোখের সমস্যা ছোটবেলা থেকেই৷ মা জ্যোৎস্না জানা বললেন, ‘‘মাত্র তিন মাস বয়সে  সমস্যা ধরা পড়ে ৷ গ্রামের প্রাথমিক সুকলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে৷ কিন্তু চোখের সমস্যা বাড়ছিল৷’’ বাবা-মা চিন্তায় পড়লেন৷

সমস্যার সমাধান হল প্রাথমিক সুকলের শিক্ষিকার পরামর্শে৷ তিনি বুদ্ধদেব নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ  মিশনের ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করতে বলেন৷ বুদ্ধদেবদের এক আত্মীয় নরেন্দ্রপুর কলেজের কর্মী৷ তিনিই খোঁজখবর এনে দেন৷ ২০১০ সালে নরেন্দ্রপুর  রামকৃষ্ণ মিশন থেকেই৷ এ বার  উচ্চ মাধ্যমিক দেবে৷’’ মাধ্যমিকে ভাল ফল করেছিলেন বুদ্ধদেব৷  কলাবিভাগে পড়েন এখন৷ তার সুকলের প্রিন্সিপ্যাল  জানিয়েছেন খেলাধূলোতেও বেশ ভাল বুদ্ধদেব৷ আগে ক্রিকেট খেলতেন৷  সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন৷ বুদ্ধদেব বললেন, ‘‘আগে সুইমিং করতাম৷ দু বছর আগে সুইমিং এ সোনাও পেয়েছি৷ ন্যাশনাল প্রতিযোগিতায় আটটি সোনা আছে৷’’ বছর তিনেক আগে নরেন্দ্রপুরে শুরু হওয়া জুডো শেখার ব্যবস্থা হয় তার৷ বেঙ্গল প্যারা জুডো অ্যাসোশিয়েশনের থেকে দিব্যেন্দু হাটুয়াকে প্রশিক্ষক হিসেবে পাঠানো হয়৷ বুদ্ধদেব জুডো শিখতে শুরু করেন এর সাফল্যের পর সাফল্য আসতে শুরু করে, এরপর  ইংল্যাণ্ডের প্রতিযোগিতায় নির্বাচনের জন্য মহড়ায় ডাকা হয়েছিল চেন্নাইয়ে৷ নির্বাচিত হন বুদ্ধদেব৷

কিন্তু নির্বাচনের পরে দেখা গেল সমস্যা৷ ইংল্যাণ্ডে যাওয়ার জন্য অর্থ লাগবে৷ প্রিন্সিপ্যাল বিশ্বজিৎ জানালেন, জাতীয় প্যারা জুডো সংস্থার সম্পাদক মনোহর আনজার জানিয়েছিলেন, এক লক্ষ ১৩ হাজার টাকা জোগাড় করতে হবে৷ পাসপোর্ট-সহ নানা খরচের জন্যও তো অর্থের প্রয়োজন৷ কিন্তু এত টাকা বুদ্ধদেবের পরিবারের পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিল না৷ বাবার অসুস্থ শরীর৷ বেশি কাজ করতে পারেন না৷ বুদ্ধদেবের এক কাকা সাহায্য করেন৷ আরও  কয়েকজনের সহায়তায় পড়াশোনা ও সংসার চলে তাদের৷ এই সমস্ত সমস্যা পর্যবেক্ষণ করে একটি বেসরকারি সংস্থা বুদ্ধদেবের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়  ও আগামী ২৩শে সেপ্ঢেম্বর  ইংল্যাণ্ডে যাবেন বুদ্ধদেব৷ কারণ আগামী ২৫ তারিখ থেকে চ্যাম্পিয়ানশিপ শুরু৷

বিদেশে পাড়ি দেওয়ার আগে বুদ্ধদেব জানিয়েছেন---‘‘সবাই এত কষ্ট করে আমাকে বিদেশে পাঠাচ্ছেন৷ তাতে যদি কোনও পদক পেতে পারি ভাল হবে৷ চেষ্টা করতে কোনভাবেই পিছপা হবো না৷ এটাই মনের দৃঢ় লক্ষ্য আমার’’৷