করোনা বাইরাস সংক্রমনের প্রেক্ষীতে মাইক্রোবাইটাম তত্ত্ব

লেখক
সত্যসন্ধ দেব

করোনার উর্দ্ধগতি অনেকটাই কমে এসেছিল৷ জীবন যাত্রাও স্বাভাবিক৷ টিকাকরণের কাজও শুরু হয়েছে৷ ঠিক এই সময় করোনার গতি আবার উর্দ্ধমুখী হচ্ছে৷

এই প্রসঙ্গে বলি কেবল করোনা বাইরাস নয়,  ইদানিংকালে নানান্‌ ধরণের  মারাত্মক বাইরাস  জনিত মারণ রোগ বৈজ্ঞানিকদের ভাবিয়ে তুলেছে৷ কেননা এই ভাইরাস বাহিত  নানান্‌ ধরণের  মারণরোগের  মাঝে মাঝেই প্রাদুর্ভাব  হচ্ছে৷ চিকিৎসা  বিজ্ঞানী এইসব বাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছেন৷ এই ভয়ঙ্কর বাইরাসকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় বৈজ্ঞানিকদের কাছে এটাই এখন বড় সমস্যা৷

এই বাইরাসের প্রকৃত স্বরূপ, গতি প্রকৃতি সবই বৈজ্ঞানিকদের  অজানা৷ বাইরাস কি জীবিতসত্তা? বাইরাসের সঙ্গে ব্যাক্টিরিয়ার পার্থক্য কী?

বাইরাস ব্যাক্টিরিয়ার চেয়ে ক্ষুদ্র  সূক্ষ্ম অণুবীক্ষণযন্ত্র দিয়ে দুইকেই দেখতে হয়৷  ব্যাক্টিরিয়া অপেক্ষাকৃতভাবে বড়৷ সবচেয়ে ক্ষুদ্র  যে ব্যক্টিরিয়া তার চেয়েও ক্ষুদ্রতর হ’ল বাইরাস৷ ব্যক্টিরিয়াতে রয়েছে জীবিত কোষ যা প্রোটোপ্লাজম দিয়ে তৈরী৷ এই প্রোটোপ্লাজম্‌কেই জীবনের  আদি উৎস বলে মনে করা হয়৷ বৈজ্ঞানিকদের  অভিমত তা-ই৷ কিন্তু  বাইরাস  তো প্রোটোপ্লাজম দিয়ে তৈরী নয়৷ তবে কি বাইরাস একেবারে জড়বস্তু (পার্টিকল)? তা-ও নয়৷ কারণ বাইরাসের জন্ম, বংশবৃদ্ধি ও মৃত্যু রয়েছে৷  বলা হয়, এই বাইরাস নাকি  অন্য কোনো জীবকোষের  সাহায্য নিজেদের বংশবিস্তার করে৷ তাহলে একে জড়বস্তু (পার্টিকল্‌) বলা যাবে কীভাবে? তাই ‘বাইরাস’কে বৈজ্ঞানিকরা পুরোপুরি জড়ও বলতে পারছেন না, আবার  যেহেতু এতে প্রোটোপ্লাজম নেই, তাই ব্যক্টিরিয়াও (ক্ষুদ্র-জীবিত সত্তা) বলতে পারছেন না৷

এই পরিস্থিতিতে  প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা মহান দার্শনিক  শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারের যুগান্তকারী ‘মাইবাইটাম’ তত্ত্ব অত্যন্ত  প্রাসঙ্গিক৷ এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিকরা কার্বন Carbon) অণু বা কার্বন পরমাণুর সংযোগে সৃষ্ট প্রোটোপ্লাজমকে (জীবপঙ্ক) প্রাণের  প্রাথমিক  অবস্থা বলে মনে করেন৷ কিন্তু মহান্‌ দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন, না প্রোটোপ্লাজম বা কার্বন পরমাণু সঞ্জাত যৌগ নয়, মাইক্রোবাইটামই (অণুজীবৎ) প্রাণের উৎস৷  মাইক্রোবাইটাম বা  বাংলায় ‘অণুজীবৎ’ নাম শ্রী সরকারেরই দেওয়া৷ আর এই মাইক্রোবাইটামে প্রোটোপ্লাজমে নেই, কার্বন পরমাণুর সম্পর্ক নেই৷ বরং তিনি বলেছেন, অজস্র মাইক্রোবাইটাম্‌ দিয়ে এই কার্বন  পরমাণুর  সৃষ্টি হয়েছে৷ তাঁর নিজের ভাষায়---‘প্রাণের মূল কারণ এককৌষিক প্রোটোজোয়া বা অণুজীবপঙ্ক  নয়৷ প্রাণের উৎস হ’ল এই মাইক্রোবাইটাম৷ এই মাইক্রোবাইটাম নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার৷ কাজটা অবশ্যই বিরাট৷  তবু বলা, অবিলম্বে এই বিষয়ে  গবেষণার  সূত্রপাত হওয়া দরকার নইলে  আজকের সমাজের  বহুবিধ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা যাবে না৷’ ত্রিকালদর্শী মহান্‌ দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার (যিনি ধর্মজগতে শ্রীশ্রী আনন্দ মূর্ত্তিরূপে সমধিক পরিচিত) তাঁর প্রজ্ঞা-দৃষ্টির সাহায্যে বলেছেন, এই মাইক্রোবাইটামের রহস্য যখন মানুষ উদঘাটিত করতে পারবে, তখন  চিকিৎসা শাস্ত্রে, রসায়ন শাস্ত্রে প্রভূত উন্নতি ঘটাতে পারবে৷ মানব সমাজ  নৈতিক, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রেও এর সাহায্যে উন্নতি ঘটাতে পারবে৷  তিনি তাঁর  মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বে বলেছেন, এই মাইক্রোবাইটামকে প্রাথমিকভাবে তিন শ্রেণীতে  ভাগ করা যায় ---(১) যে সমস্ত স্থূল crude)  মাইক্রোবাইটাগুম অণুবীক্ষণ যন্ত্রের আওতায় আসবে৷ (২) যারা অণুবীক্ষণের যাওতায়  আসবে না, কিন্তু তাদের ক্রিয়াগত অভিব্যক্তির  দরুণ বা ক্রিয়াগত স্পন্দনের  দরুণ ইন্দ্রিয়াণুভূতির আওতায় আসবে, (৩) যা সাধারণ ইন্দ্রিয়ানুভূতির আওতায় আসবে না, কিন্তু  যারা মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্তরে যথেষ্ট উন্নত অবস্থাপ্রাপ্ত তারা ইন্দ্রিয়াণুভূতির আওতায় আসবে৷

এদের মধ্যে এই যারা  একটু  স্থূল ও যাদের অণবীক্ষণের  মাধ্যমে দেখা যাবে,  তাদেরই বর্তমানে বলা হচ্ছে ‘বাইরাস’৷ এদের বেশিরভাগই বিভিন্ন মারাত্মক রোগের বাহক৷ অন্যান্য সূক্ষ্ম মাইক্রোবাইটামেও পজিটিব্‌ (যা মানুষের দেহ ও মনের পক্ষে শুভ ফলদায়ক) ও নেগেটিং (যা মানুষের দেহ ও মনের পক্ষে অস্বস্তিকর বা অহিতকর) মাইক্রোবাইটাম  রয়েছে৷

মাইক্রোবাইটাম তত্ত্বের প্রবক্তা এও বলেছেন  সাত্ত্বিক খাদ্যাভ্যাস , নিয়মিত যোগাসন ও ধ্যানানুশীলন,ভজন, কীর্ত্তন প্রভৃতি শরীরে ইম্যুনিটি পাওয়ার ও মনের মধ্যে মানসিক শক্তি বৃদ্ধি করে ও তা পজিটিব্‌ মাইক্রোবাইটামকে আকর্ষণ করে ও নেগেটিব্‌ মাইক্রোবাইটামকে প্রতিহত করে৷ এইভাবে তথাকথিত বাইরাসের  আক্রমণ থেকে মানুষ রেহাই পাবার শক্তি অর্জন করবে৷

বিভিন্ন বাইরাস জনিত ও সাইকো-সোমাটিক (মেন্টাল ষ্ট্রেস থেকে সৃষ্ট) রোগ থেকে  মুক্ত হবার এটাই সর্বশ্রেষ্ঠ দাওয়াই৷

মানুষের  শরীরের মধ্যেই একটা হাসপাতাল রয়েছে৷ বাইরের যে কোন  রোগজীবাণুর সঙ্গে যুঝতে  শরীরে ভেতরে বিশেষ শক্তি বা সৈন্যদল --- ‘এ্যান্টিবডি’ রয়েছে৷ এটা মানুষের অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা৷

মানুষ উচ্ছৃঙ্খল খাদ্যাভ্যাস ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে  এই অভ্যন্তরীণ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে যায়৷ খাদ্যাভ্যাসের ব্যাপারে বললে বলতে হয়,প্রাকৃতিক নিয়মে নিরামিষ আহারই মানুষের পক্ষে উপযুক্ত৷ প্রকৃতিতে যে সমস্ত প্রাণী আমিষাশী তাদের সরু ধারালো ক্যানাইন টিথ থাকে, মানুষের  তা নেই৷ বরং প্রকৃতিতে যে সমস্ত প্রাণী ফল, পাতা বা শস্য আহার করে তাদের মতই মানুষের  দাঁতের গঠন, অন্ত্রের গঠনও তাদের মত৷

বিভিন্ন বৈজ্ঞানিকরাও  তাই বলেছেন, নিরামিষ ভোজন, যোগাসন,ধ্যানভ্যাস প্রভৃতি ক্যানসার, হার্টের রোগ  প্রভৃতি বিভিন্ন মারণরোগের  সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়৷

আন্তর্জাতিক সমীক্ষাতে দেখা গেছে, বিভিন্ন জীবজন্তু, পোকা মাকড়, মাছ, (টাটকা বা শুটকি) এসব  থেকে বেশীরভাগ বাইরাস জনিত রোগের সৃষ্টি হয়৷ কারণ, ওই সমস্ত জীব-জন্তু বা প্রাণীদেহে বাইরাস সহজে বাসা বাঁধে ও পরে তা সহজে মানুষের শরীরে চলে আসে৷ তাই খাদ্য হিসেবে নিরামিষ  ও সাত্ত্বিক আহার গ্রহণ করাই শ্রেয়৷ তবে যে কোনোভাবে রোগাক্রমণ শুরু হয়ে গেলে অবশ্যই বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত চিকিৎসা বা ব্যবস্থা গ্রহণ  করা উচিত--- সে ব্যাপারে আমাদের কোনো দ্বিমত নেই৷ কিন্তু রোগের সম্ভাবনাকে প্রতিহত করতে, শরীরস্থ প্রতিরিক্ষা ব্যবস্থা বৃদ্ধি করতে,শরীরের গ্রন্থি সমূহের হরমোন সিক্রেশন প্রয়োজনীয় মাত্রায় রাখতে, সঙ্গে সঙ্গে মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখতে, সাত্ত্বিক জীবন জীবনচর্চা ও নিয়মিত যোগাভ্যাস যে প্রয়োজন, এতে কারুর দ্বিমতের অবকাশ থাকা উচিত বলে মনে করি না৷