কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছেন---দেশের অর্থনীতির ভিত শক্তিশালী হচ্ছে৷ করোনার প্রভাবেই এটা হয়েছে৷ তিনি হয়তো করোনার প্রভাবে বিশ্ববাজারে তেলের দামে ধস নামায় একথা বলেছেন৷ করোনা পরিস্থিতি আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তেলের দাম ৪৫ শতাংশ কমেছে৷ এর ফলে ভারতের অর্থনীতির হাল কিছুটা হলেও ফিরবে৷ বিশেষ করে মূল্যবৃদ্ধির হার কমতে পারে, আমদানির খরচ কমবে, ভোগ্যপণ্যের দাম প্রভৃতিও কমবে৷ কিন্তু গত কয়েক মাসে বিদেশে তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও তার সুফল সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছয়নি৷ বিরোধী নেতাদের অভিযোগ সরকার দেশের মানুষকে সেই সুযোগ দিচ্ছে না৷
প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সালের কেন্দ্রীয় সংঘটন সচিব আচার্য প্রসূণানন্দ অবধূত বলেন সরকারের হাত-পা বাঁধা আছে পুঁজিবাদের কাছে৷ পুঁজিবাদের স্বার্থ রক্ষা করাই সরকারের ধ্যান-জ্ঞান৷ তাই অর্থনীতির সুফল সাধরাণ মানুষের কাছে পৌঁছবে কেমন করে? অর্থমন্ত্রী যতই আশ্বস্ত করুন ভ্রান্ত অর্থনীতির কুফল ভারতকে ভোগ করতেই হবে৷
অর্থমন্ত্রী আশ্বস্ত করলেও শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের কথায় সেই আশঙ্কাই ব্যক্ত হয়েছে৷ গত ১১ই মার্চ লোকসভায় প্রশ্ণোত্তর পর্বে শ্রীগোয়েল জানান চীনে করোনা ভাইরাসের প্রকোপের বিরূপ প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতে পড়বে৷ বিশেষ করে শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে এর প্রভাব যথেষ্ট পড়বে৷ ওষুধ, বৈদ্যুতিন গাড়ী, যন্ত্রাংশ প্রভৃতির কাঁচামালের জন্যে ভারত চীনের ওপর নির্ভরশীল৷ করোনা ভাইরাসের জন্যে চীনের বহু সংস্থা বন্ধ৷ তার প্রভাব ভারতের আমদানি বাণিজ্যেও পড়েছে৷ ফলে চীনের কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল শিল্প-বাণিজ্যে সমস্যা দেখা দেবে৷ শ্রীগোয়েল বলেন ভারত এখন বিকল্প পথের সন্ধান করছে৷
আচার্য প্রসূণানন্দ অবধূত বলেন---বিকল্প পথ আর কী? চীন ছেড়ে অন্য দেশের পেছনে ছুটছে অর্থাৎ সেই বিদেশজাত কাঁচামালের ওপরেই তাকে নির্ভর করতে হচ্ছে৷ সেই দেশেও অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ অর্থাৎ অর্থনীতির সহজ কথাটা এরা বোঝে না বা বুঝলেও পুঁজিবাদের ওপর নির্ভরশীল দল ও সরকারের কিছু করার থাকে না৷ প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর তত্ত্বে অনেক আগেই দেখিয়েছেন বহিরাগত কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল শিল্প-বাণিজ্যে অনেক ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে৷ আমদানি বন্ধ হলেই শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে৷ ভারত আজ সেই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে৷ অথচ বিদ্যুৎ প্রভৃতি যে সব শিল্পের কাঁচামালের জন্য ভারত চীনের ওপর নির্ভরশীল তা ভারতেও পাওয়া সম্ভব৷ প্রাউট-প্রবক্তার ভাষায় স্থানীয় কাঁচামালের ভিত্তিতে ও স্থানীয় মানুষের নিয়ন্ত্রণে শিল্প গড়ে তুলতে হবে৷ বিশেষ করে সাধারণ মানুষের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার নূ্যনতম প্রয়োজনের রসদগুলির জন্যে৷ এতে শিল্প-বাণিজ্যে সমস্যা সৃষ্টি হলেও সাধারণের ওপর তার প্রভাব খুব একটা পড়বে না৷ তাই বিকল্প পথ মানে এক দেশে ছেড়ে আর দেশে ছোটা নয়, বিকল্প পথ একটাই প্রাউটের পথে স্থানীয় কাঁচামাল নির্ভর শিল্প গড়ে তুলতে হবে৷ এর জন্যে প্রয়োজনে একই রাষ্ট্রের ভেতর একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলতে হবে যেখানে শিল্প ও বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ থাকবে স্থানীয় মানুষের হাতে৷ এই বিকেন্দ্রীত অর্থনৈতিক পরিকল্পনাই বিকল্প পথ৷