প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ কৃষি বিষয়ের এক আলোচনায় বলেন--- কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ের আসল সমস্যা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাচ্ছে না৷ কৃষি আইন নিয়ে সরকার ও বিরোধীপক্ষ হইচই করছে৷ কিন্তু সাধারণ স্বার্থের কথা কেউ ভাবছে না৷ রাষ্ট্র চালাতে, কৃষি পণ্যের লাভ কর্ষকদের হাতে তুলে দিতে আইনের অবশ্যই প্রয়োজন৷ কিন্তু কর্ষক যদি না বাঁচে আইন কার জন্য! বর্তমান পুঁজীবাদী সরকার কর্ষকদের স্বার্থে নয়, ধনকুবেরদের স্বার্থেই আইন তৈরী করেছে৷ তবে এই মুহূর্তে কৃষি আইন অপেক্ষা কৃষিব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে হবে৷ প্রয়োজন কৃষিব্যবস্থাকে ঢেলে সাজান৷ যাতের দেশের প্রতিটি মানুষ জীবন ধারণের প্রাথমিক প্রয়োজনটুকু (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা) যোগাড় করতে পারে৷
শ্রী খাঁ বলেন কৃষি আইন তৈরীর আগে সরকারকে চিন্তা করতে হবে প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমির সর্বাধিক উপযোগের কথা৷ ফসল ফললে তবেই না আইন৷ দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে কৃষি জমির পরিমান কমছে৷ অথচ মানুষের খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে৷ এই পরিস্থিতিতে একই সঙ্গে একাধিক ফসলের চাষ ও অধিক ফলনের চিন্তা করতে হবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে৷ শ্রী খাঁর কথায় প্রাউটের দৃষ্টিতে তিন পদ্ধতিতে চাষ করে প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমির সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ করতে হবে৷
প্রাউটের কৃষিব্যবস্থায় এই তিন পদ্ধতি হলো---মিশ্র চাষ, অতিরিক্ত বা অনুপূরক চাষ ও পর্যায়ক্রমিক চাষ৷ এই তিন পদ্ধতিতে চাষ করলে যেমন মাটির সর্বাধিক উপযোগ পাওয়া যাবে তেমনি ভূমির উর্বরতাও বজায় থাকবে৷ তাই অবিলম্বে দেশের সরকার ও কর্ষকদের প্রাউট পরিকল্পিত কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগের কথা ভাবা উচিত৷ শ্রী খাঁ উদাহরণ দিয়ে বলেন একই সঙ্গে একই মাটিতে আলু, মশলা, বেগুন, লাউ কুমড়ো ইত্যাদি চাষ করলে যেমন কৃষি জমির সর্বাধিক উপযোগ গ্রহণ করা যাবে, ভূমি ক্ষয়রোধ হবে ও জমির উর্বরতা বজায় থাকবে৷ ভূট্টা বা বাজরা মাটির নাইট্রেজেন গ্রহণ করে, আবার ডাল জাতীয় শস্যের শিকড় থেকে মাটি নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে৷ তাই এই ধরণের মিশ্র চাষে ভূমির গঠন ও উর্বরতা বজায় থাকে৷
অনুপূরক পদ্ধতিতে এক সঙ্গে একাধিক ফসলের চাষ হলেও মিশ্র চাষ থেকে কিছুটা পৃথক৷ মিশ্রচাষে একাধিক প্রধান শস্য এক সঙ্গে চাষ হয়, কিন্তু অনুপূরক পদ্ধতিতে একটি মূল শস্য ও একটা সহায়ক শস্যের চাষ করা হয়৷ শ্রী খাঁ অভিযোগ করেন আজও পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু জেলায় বহু জমিতে বছরে একটা মাত্র চাষ হয়৷
স্বাধীনতার ৭৪ বছর পরেও কোন সরকার এ নিয়ে কোন চিন্তা-ভাবনা করেনি৷ আজ কৃষি আইন নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে হল্লা হচ্ছে৷
পর্যায়ক্রমিক চাষে একই জমিতে বছরে চারটি ফসল ফলাতে পারে৷ শ্রী খাঁ দাবী করে অবিলম্বে প্রাউট পরিকল্পিত কৃষি পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ করতে হবে৷ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে৷ এতে যেমন বেকার সমস্যার সমাধান হবে তেমনি খাদ্যের যোগানও বজায় থাকবে৷ মানুষকে অনাহারে মরতে হবে না৷