বর্তমানে সমগ্র ভারতীয়দের বিশেষ করে বাঙলার বাঙালী সমাজে সর্ব প্রথম জানা উচিত অতীতের ত্রিভুজাকৃতির ভারতবর্ষের সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক রাজনৈতিক , সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গী কেমন ছিল, তার সঙ্গে দীর্ঘ কয়েক শত বছরের বাহিরের শাসকদের আমলে সেই দৃষ্টিভঙ্গী কেমন পরিবর্তন হয়েছে, আর বর্তমানে এদেশের সাধারণ জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কেমন ধরণের শাসনব্যবস্থা গ্রহণ করে দেশকে শাসন করছেন৷ যদি তুলনামূলক আলোচনা করার যায় তাহলে বর্তমান ও সামগ্রিক সমস্যাগুলির সমাধান করতে দেশীয় শাসকদের ও জনগণের অনেকখানি সুবিধা হবে৷
এই মহা মানবের সাগর তীরে অর্থাৎ ভারতবর্ষে যারা আসেন তাদের প্রায় সকল দূরদেশীয়দের একটা লক্ষ ছিল এই দেশকে যতটা পার শোষণ করে নিজেদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটান৷ তবে ইংরেজ বণিকদের আগমণের পূর্বে ইসলাম ধর্র্মম্বলম্বী সুলতান ও বাদশাহরা আসেন, তাদের লক্ষ্যই ছিল এই সমৃদ্ধশালী খাদ্য, পানীয় ও জলবায়ুযুক্ত দেশের স্থায়ী বাসিন্দা হওয়া ও ইসলাম ধর্র্মবলম্বীদের ব্যাপক জনসংখ্যা বৃদ্ধি করা৷ মুসলিম শাসকগণ মসজিদের সংখ্যা বাড়িয়ে গিয়েছেন ও নানাভাবে সিয়া সম্প্রদায়ের চেয়ে সুন্নি সম্প্রদায়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করে গেছেন৷ অনেক ক্ষেত্রে তারা মন্দির ভেঙ্গে মসজিদ তৈরী করে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করে গেছেন৷ তারা কিন্তু কৃষিভিত্তিক ভারতে অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে নজর দেওয়ার মতো কোন চিন্তা ভাবনা করেন নি৷ কারণ হল তখন ভৌতিক বিজ্ঞানের এতটা উন্নতি ঘটেনি ও শিল্প বিপ্লব হয়নি৷ তবে পাশাপাশি দীর্ঘ বছর বসবাস করা কৃষ্ট ও সাংস্কৃতিক শিল্পের একটা সমন্বয় ঘটিয়ে গেছেন৷ আর অধিকাংশ ধর্র্মন্তর মুসলমানগণ তো ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা যাদের রক্তে রয়ে গেছে এদেশের মানুষের রক্ত৷ প্রথম দিকে ভয়ঙ্করভাবে ভারতের সম্পদ লুঠ করে নিয়ে যান বহিরাগত মুসলিমরা৷ লুটেরা হিসেবে মামুদ তাদেরই এক ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত৷ কোন কোন দেশে শাসকগণ মানবতাবাদী ও সংস্কৃতি সম্পন্ন ছিলেন৷ নাসিরুদ্দিন স্মরণীয়৷ ইংরেজ কোম্পানি এদেশে ব্যবসা বাণিজ্য করতে এসে কিছু বেইমান লোভী ধনীদের হাত করে ও নবাব বংশের অন্তর্কলহের সুযোগ নিয়ে তারা এখানে শাসন ক্ষমতা কায়েম করে৷ ইংরেজ খুবই রক্ষণশীল৷ তারা এদেশে মানুষদের মূলত অনুন্নত জনগোষ্ঠী বলেই মনে করত ও তেমনি ব্যবহার করত৷ এদেশের সম্পদের ওপর প্রথম থেকেই নজর ছিল৷ লর্ড ক্লাইভই ভারতকে ভয়ঙ্করভাবে অর্থনৈতিক শোষণ করে অপরাধী ও দোষী সাব্যস্ত হন, শেষে পাগল হয়ে আত্মহত্যা করেন৷
ইংরেজ ধীরে ধীরে বাংলার অর্থে সারা ভারতে রাজত্ব প্রতিষ্টা করে৷ তারা ভারতের কৃষিজাত, পাট তুলা প্রভৃতিকে কেন্দ্র করে ও এদেশের সস্তায় শ্রমিক পেয়ে বড়ো বড়ো পাটকল ও সূতাকল করে, গ্রামের কুটির শিল্প ধবংস করে পাটজাত দ্রব্য চট, কলে পাট সিল্কের বস্ত্র ও তুলা থেকে সস্তায় কাপড় তৈরী করে ভারতের বাজার দখল করে, এদেশীয় শিল্প ধবংস করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করে৷ কারণ বড়ো বড়ো দানবের মতো যন্ত্রের সাহায্য ঐসব উৎপাদন করে বাজার মাত করে দেয়৷ এতে দেশীয় কুটির শিল্প মার খায়৷ তাছাড়া বিশেষ সস্তা মাল ও তারা অত্যধিক লাভ করে ধনী হয় আর দেশীয় শিল্প ধবংস হয়৷ নীল চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়৷ তাই এদেশে চাষীরা বিদ্রোহ করে৷
এইভাবে ইংরেজ সরাসরি প্রাচীন ভারতের কৃষিজাত কুটির শিল্পকে ধবংস করে ভারতকে আর্থিক দিক থেকে একেবারে ধবংস করে৷ সেই পদ্ধতিতেই দেশ শাসিত হচ্ছে আজও৷ ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় ভোগ্যপন্য উৎপাদিত হতে থাকে ধনীদের দ্বারা৷ আর ধনীরাই আজ হয়ে উঠেছে ভারতের ভাগ্যবিধাতা৷ যাঁরা শাসক তাঁরা কর আদায় করে দেশ চালায়৷ ধনীরাই বেশী কর দিয়ে থাকে৷ তাই তাঁদের স্বার্থই সরকারের স্বার্থ৷ আজ দেশের কর্মক্ষম ও শিক্ষিত যুবক-যুবতীরা কাজে পায় না৷ কলকারখানা বন্ধ মন্দার কারণে ৷ বেকার এর জ্বালায় দেশ জ্বলছে ৷ কোটি কোটি মানুষ আর্থিক সংকটে ভুগছে ৷ কারণ আজ এদেশে কেন্দ্রীকৃত অর্থনৈতিক ব্যবস্থা পুঁজিবাদের নিয়ন্ত্রণে৷ তাই বিকেন্দ্রীকৃত সামাজিকিকরণের দ্বারা চালিত নয় এই দেশের শিল্প, অর্থনীতি৷ বর্তমান মন্দার হাত থেকে বাঁচতে ব্লকভিত্তিক ছোট ছোট কুটির শিল্প বিকেন্দ্রিত অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গড়ে দেশকে বাঁচাতে হবে৷
তাই প্রগতিশীল সমাজতন্ত্রের পথে বিকেন্দ্রীকৃত ভাবে ভারতের কুটির শিল্পকে বাঁচিয়ে তুলতেই হবে৷ আর এই কুটির শিল্প হবে কৃষিভিত্তিক ও কৃষি সহায়ক শিল্প৷ গণর্থনীতির পথে দেশকে এগুতে হবে৷
এতে প্রতিটি গ্রামের কর্মক্ষমরা কাজ পাবে ও স্বনির্ভর হয়ে দেশের সার্থক নাগরিক হবে৷ এই অর্থনৈতিক স্বনির্ভরশীল নাগরিকগণ হয়ে উঠবে সার্থক নাগরিক৷ দেশ এগিয়ে যাবে৷ গ্রামে গ্রামে আর্থিক বিকাশের জন্য সমবায় ব্যাঙ্ক গড়ে উঠবে৷ বাজার হাট গড়ে উঠবে৷ এতে আমরা নোতুন ভারতকে দেখতে পাবো৷ আজ ধনীদের চক্রে পড়ে ব্যাঙ্কগুলি, মার যাচ্ছে৷ দেশকে নোতুন আর্থিক দীশা দেখাতে হবে তাই সেই ইংরেজ আমলের পুরাতন অর্থনীতির ফাঁদে আটকে থেকে পুঁজিবাদের তোষণ করে অর্থনীতির হাল ফেরানো যাবে না৷ প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব ‘প্রাউট’ সেই পথ দেখাবে৷ আর এই অর্থনীতিই সারা দেশকে রক্ষা করবে৷
*** মনে রাখতে হবে পশ্চিমী ধাঁচের অর্থনৈতিক তত্ত্ব যা কেন্দ্রীভূত () অর্থনীতি সেটা বিশাল জনবহুল দেশে অচল৷ এখানে বিকেন্দ্রীকৃত () অর্থনীতি দেশকে বাঁচাবে৷
- Log in to post comments