কশ্মীরে ওমর আবদুল্লার উক্তি সংবিধান বিরোধী ও মারাত্মক

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় প্রতিটি নাগরিকের কর্তব্য দেশের সংবিধানকে মেনে চলা৷ সেটি যদি কেউ না করে সেটা হবে সংবিধানবিরোধী কাজ৷ বিশেষ করে যখন যে ব্যষ্টি নির্বাচনে জয়লাভ করে রাজ্যে বা কেন্দ্রে শাসন ক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব পান তাকে অবশ্যই সংবিধানকে মান্যতা দিতে হবে৷

অত্যন্ত লজ্জা ও দুখের কথার প্রায় দেখা যায় ভারতের অন্তর্গত জম্মু ও কশ্মীর রাজ্যে কোন কোন শাসক ইচ্ছাকৃতভাবে সংবিধানকে অগ্রাহ্য করে ও একটা দেশবিরোধী বাতাবরণ তৈরী করে৷ সম্প্রতি দেখা গেল, জম্মু কশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা দাবী করেছেন ওই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী আখ্যা দিতে হবে৷ ভারতবর্ষের সংবিধান অনুযায়ী আমরা জানি ভারতবর্ষ কতকগুলি অঙ্গরাজ্য নিয়ে একটা যুক্ত রাষ্ট্র৷ অঙ্গরাজ্যগুলির জনগণের দ্বারা নির্বাচিত প্রধান শাসককে মুখ্যমন্ত্রী বলা হয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী বলা হয়৷ জম্মু-কশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ওমর আবদুল্লা ঠিক কি কারণে এমন মন্তব্য করলেন সেটা স্পষ্ট নয়৷ বর্তমান লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে ন্যাশনাল কনফারেন্স লড়ছে৷ এই অবস্থায় তাঁর এই উক্তি সম্পূর্ণ সংবিধানবিরোধী ও দেশবিরোধী৷ কারণ আমাদের দেশের সংবিধান অনুযায়ী দুইজন প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন না৷ তাই একটি অঙ্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী দাবী করার অর্থ ঘুরিয়ে পৃথক রাষ্ট্রের দাবী৷ তাই আবদুল্লার এই দাবী জম্মু-কশ্মীরে বিদেশী জঙ্গী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে মদত জোগাবে৷

সুপ্রিম কোর্টের প্রখ্যাত আইনজীবী মাননীয় জয়দীপ মুখোপাধ্যায় ওমর আবদুল্লার দেশবিরোধী মন্তব্যের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলেছেন৷ তিনি দাবী করেন ওমর আবদুল্লার বিরুদ্ধে এফ.আই.আর করাটা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অবশ্য কর্তব্য৷ দেশভাগের যে মারাত্মক অভিশাপ আজও প্রতিদিন প্রতিটি ভারতবাসীকে ভোগ করতে হচ্ছে সেই সময় একটি অঙ্গরাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও দায়িত্বশীল রাজনীতিকের পক্ষে এই ধরণের উক্তি দেশের সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক৷ কশ্মীরের মত রাজ্যে,যেখানে দেশের ঐক্যকে বিপন্ন করতে বিদেশী শক্তি প্রতিনিয়ত সক্রিয়, সেখানে একজন দায়িত্বশীল নেতার এই উক্তি দেশের ঐক্যের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক৷

স্মরণে আছে জম্মু-কশ্মীরের মহারাজা হরি সিং জম্মু-কশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে যুক্ত করার পর পর শেখ আবদুল্লা কশ্মীরে অশান্তির আগুন জ্বালান৷ এটা যে জহরলাল উপলব্ধি করেননি তা নয়, কিন্তু যেহেতু আবদুল্লা কশ্মীরেরই বাসিন্দা তাই তাঁর অনেক আবদারও নেহেরু মেনে নেন৷ তিনি লোকসভাকে পাশ কাটিয়ে কশ্মীরকে অনেক সুযোগ-সুবিধা দান করেন, যা আজ সারা ভারতের গলার কাঁটা হয়ে আছে৷ এই সুযোগ-সুবিধার ফলেই ভারতবর্ষের অন্য রাজ্যের বাসিন্দারা কশ্মীরিদের কাছে ভিন দেশের বাসিন্দাদের মত৷ কশ্মীরি জনগণ সারা ভারতের যে কোনও স্থানে জমি কিনে বাস করতে পারবে৷ কিন্তু ভারতেরই অন্য রাজ্যের বাসিন্দাদের কশ্মীরে সেই সুযোগ নেই৷ এই ধরণের সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ফলেই আজ কশ্মীরের নেতা-নেত্রীরা ভারতবিরোধী ও সংবিধানবিরোধী কথাবার্তা বলার সাহস পায়৷

নেহেরুর সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে দেশভাগ ছিল ক্ষতিকারক, যার ফল আজও ভারতবাসীকে মর্মে মর্মে ভোগ করতে হচ্ছে৷ এই কশ্মীরের বুকে পাকিস্তান যে সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে সেখানেও কশ্মীরের স্থানীয় কিছু নেতানেত্রীদের ইন্ধন আছে৷ এই অবস্থায় দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সরকারকে আরও বেশী সজাগ হতে হবে৷ এই ধরণের দেশবিরোধী উক্তিকে কোনওভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া উচিত হবে না৷