লক্ষ্মী যখন আসবে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

কোজাগরী পূর্ণিমায় অনুষ্ঠিত হয় লক্ষ্মীপূজা৷ লক্ষ্মীপূজার ইতিহাস খুব বেশী প্রাচীন নয়৷ দ্বাদশ শতকের পর থেকেই লক্ষ্মীপূজার প্রচলন ঘটে৷ তার আগে শুধু কোজাগরী পূর্ণিমা পালিত হত৷

লক্ষ্মীপূজার মত বাঙালীর আর কোন পূজায় এমন অঙ্কন-শিল্পের অবকাশ নেই৷ যদিও আঁকা-আঁকির ব্যাপারটা প্রায় সব মেয়েলি ব্রতেই অল্প-বিস্তর আছে৷ লক্ষ্মীপূজা মেয়েদেরই পূজা৷ তাই এর সজ্জার দায়িত্বও প্রধানত মেয়েরাই পালন করে৷ পূজায় অঙ্কন-শিল্পের বেশিরভাগই জুড়ে থাকে আল্পনা৷ সকাল থেকে ঘরে ঘরে মেয়েরা আল্পনা দেয়৷ বিভিন্ন ব্রতের বিভিন্ন আল্পনা লক্ষ্মীপূজার আল্পনায় থাকে পদ্মলতা,                লক্ষ্মীর পদ-চিহ্ণ, লক্ষ্মী পেঁচা ও ধানছড়া৷ নিয়ম ছিল যেখানে সেখানে আল্পনা৷ আঁকার রীতি নেই৷ যে-ঘরে ধান চাল বা অন্যান্য জিনিসপত্র থাকে সেই বড়ঘরের মেঝেতে  আল্পনা এঁকে তার ওপর লক্ষ্মীর চৌকি পাততে হয়৷ আল্পনায় থাকবে নানারকম অলংকার৷ চৌকিতে  লক্ষ্মীর মুকুট আর পদদ্বয় অথবা পদ্মের ওপর পদযুগল৷ খুঁটি বা দেওয়ালের গায়ে আঁকতে হয় লক্ষ্মীনারায়ণ,                লক্ষ্মীর পা৷ রচনার ভাঁড়ের গায়ে আঁকতে হয় ধানছড়া ও লক্ষ্মীর পা৷

আল্পনায় রঙের কাজও আছে৷ বেশিরভাগ আল্পনাই সাদা চালের গুঁড়ো বা চাল ভিজিয়ে বেটে তার গোলা দিয়ে আঁকা হয়৷ রচনার পাতিলের ওপর যে-লক্ষ্মীর সরা থাকে সেই সরার পিঠে লাল নীল সবুজ হলদে কালো এই কয়টি রঙ দিয়ে লক্ষ্মীনারায়ণ লক্ষ্মী পেঁচা ইত্যাদি আঁকতে হয়৷ লক্ষ্মীর কাপড়ের রঙ হবে সবুজ৷ পদযুগল ঠোঁট ও করতল লাল৷ গাত্র হলুদ৷ বিচিত্র কারুকার্য সমন্বিত নীল বর্ণ পটভূমিকায় হয় মা লক্ষ্মীর স্থাপনা৷

আল্পনার চালের গোলা রঙিন করার জন্য হলুদ বাটা,শিমপাতার রস ও আলতা ব্যবহার করা হয়৷