নিবেদিতার স্কুলে প্রফুল্লমুখী নামক এক ছাত্রা ছিল৷ সে ছিল বাল-বিধবা৷ নিবেদিতা বিধবাদের বিশেষ স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতেন৷ কারণ, তিনি জানতেন, হিন্দু ঘরের মেয়েদের বৈধব্য-জীবন কী সাংঘাতিক কঠোর!বিশেষত তাদের খাওয়া- দাওয়ার ব্যাপারে কত খুঁটিনাটি বাছ-বিচার৷ তাই বাল-বিধবা প্রফুল্লমুখী দেখে নিবেদিতার হৃদয় ব্যথায় ভরে উঠতো৷ তিনি জানতেন একাদশীতে বিধবাদের উপোস করতে হয়৷ তাই প্রফুল্লমুখীকে তিনি প্রতি একাদশীতে ছুটির পরে ডেকে এনে নানারকম মিষ্টি আর সরবত খাওয়াতেন৷
একবার নানা কাজে বাস্ত থাকায় নিবেদিতা তাকে খাওয়াতে ভুলে গেলেন৷ জরুরী কি এক ব্যাপারে স্কুলের ছুটির পর তিনি চলে গেলেন বিজ্ঞানী জগদীশ বসুর বাড়িতে৷ সেখানে নানারকম কথাবার্তায় তিনি মেতে উঠলেন৷ কিছুক্ষণবাদে হঠাৎ লাফিয়ে উঠে বললেন, সরি মিস্টার বোস, আমাকে এক্ষুনি চলে যেতে হবে৷
জগদীশচন্দ্র কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কেন? আজ একাদশী৷ --- বললেন নিবেদিতা, আমার এক মেয়ে প্রফুল্লমুখী আজ উপোস করে আছে৷ আমায় এক্ষুনি তাকে খাওয়াতে যেতে হবে৷
নিবেদিতা ফিরে এসে প্রফুল্লমুখীকে বাড়ি থেকে ডেকে আনলেন৷ প্রফুল্লমুখীর বাড়ি ছিল স্কুলের কাছেই৷ প্রফুল্লমুখী এলে, নিবেদিতা লজ্জায় সঙ্কুচিত হয়ে বললেন, মাই চাইল্ড কী অন্যায় করে ফেলেছি৷ আজ একাদশী৷ আমি খেয়েছি অথচ তোমায় খাওয়াইনি৷ কী অন্যায় --- ছি! ছি!--- কী অন্যায়! বলে নিবেদিতা শসব্যস্তে খাবার যোগাড় করে আনলেন৷ নিবেদিতার সেই মাতৃহৃদয়ের পরিচয় প্রফুল্লমুখী জীবনে কোনদিন ভোলেনি৷
- Log in to post comments