মধ্যযুগীয় হাম্বা কারা?

সংবাদদাতা
তপোময় বিশ্বাস
সময়

বাঙলা ও বাঙালীর সংস্কৃতি রক্ষায় এগিয়ে এসেছে বাঙালী মহিলা সমাজ৷ তাদের একটি ব্যানার নিয়ে সম্প্রতি বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ বাঙালী মহিলা সমাজ একটি ব্যানারে লিখেছে---‘নারীদেহ প্রদর্শনকারী উত্তেজক পোষাকের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করতে হবে৷’ ওই ব্যানারের পাশে অতি আধুনিক অজ্ঞাত পরিচয় কেউ বা কারা পাল্টা একটি ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় যাতে লেখা--- ‘মধ্যযুগীয় হাম্বা, পোষাক ধর্ষণের কারণ নয়৷’ আমি প্রথমেই বলতে চাই বাঙালী মহিলা সমাজের ওই ব্যানারে কোথাও লেখা নেই---‘পোষাক ধর্ষণের কারণ৷’ অনেকে মনে করছেন, এই ব্যানারের বক্তব্য ব্যষ্টি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ৷ তাদের উদ্দেশ্যে বলি এখানে ব্যবসাদারদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে এই ধরণের পোষাকের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধ করতে হবে৷ দাবীটি অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত৷ তাই ব্যষ্টি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রশ্ণ ওঠে না৷ এই মুহূর্ত্তে ভারত তথা সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে পুঁজিবাদী অর্থনীতি৷ পুঁজিবাদ তার অথনৈতিক শোষণ বজায় রাখতে সাংসৃকতিক শোষণকে হাতিয়ার করে৷ সাংসৃকতিক শোষণ হ’ল সমস্ত আঞ্চলিক জীবনচর্চার প্রতি সেই অঞ্চলের জনগোষ্ঠী মনের মধ্যে হীনন্মন্যতাবোধ তৈরী করা৷ একটি অঞ্চলের রীতিনীতি খাদ্যাভ্যাস, পোষাক পরিচ্ছদ, ভাষা -সংস্কৃতি ইত্যাদিকে ধবংস করে নিম্নমানের ভাষা-সংস্কৃতিকে ওই অঞ্চলে আমদানি করা হয়৷  এসবই শোষণের ছলাকলা৷ পুঁজিবাদীরা চায় সমগ্র বিশ্বকে একটি বাজারে পরিণত করতে৷ দ্রব্য উৎপাদন হয় এক জায়গায় অথচ উৎপাদিত জিনিসটি ক্রয় করতে হয় অন্য জায়ায় গিয়ে৷ এর ফলে অর্থনীতি কেন্দ্রীভূত হয়ে যায়৷ অর্থনৈতিক মন্দার এটা একটা প্রধান কারণ৷ বাঙালী মহিলা সমাজের পক্ষ থেকে এটাই বলতে চাওয়া হয়েছে যে---পোষাক পরিধান করা হয় শুধুমাত্র লজ্জা নিবারণের জন্যে নয়৷ পোষাক অঙ্গের আবরণ ও আভরণ দুই-ই৷ আজকাল এমন এমন পোষাক অনেকে পরিধান করে যা না আবরণ না আভরণ৷

তথাপি বাঙালী মহিলা সমাজ কারো ব্যষ্টি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি৷ তারা বাঙলার যে উন্নত সংস্কৃতি তার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করে শুভ পথে চলার  প্রেরণা যোগায়৷ তাদের এই প্রচেষ্টা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য৷ কারণ আজকের সামাজিক অবক্ষয়ের একটা অন্যতম কারণ উশৃঙ্খল জীবন-যাপন ও রুচিহীন পোষাক৷ পুঁজিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ছাত্র ও যুব সমাজকে সস্তা ও চটুল রসের আমোদ-প্রমোদে মাতিয়ে রেখে শোষণ চালিয়ে যাওয়াই পুঁজিবাদের লক্ষ্য৷

বাঙালী মহিলা সমাজের ব্যানারটি তাদেরই আঁতে ঘা দিয়েছে যারা পুঁজিবাদী শোষকদের তল্পিবাহক৷ তাই এই ধরণের একটি মার্জিত ও রুচিশীল আবেদন রাখা ব্যানারের মধ্যে তারা মধ্যযুগীয় হাম্বারব শুণতে পেল৷ হাম্বা যারা করে তাদের মধ্যে শালিনতা, অশালীনতা বোধ নেই৷ কিন্তু মহিলা সমাজের ব্যানারটি সমাজের শালীনতা ও শুচিতা বজায় রাখার একটি প্রয়াস৷ এর মধ্যে হাম্বা রব তারাই শুণতে পায় যাদের মধ্যে কোনরূপ  শালিনতা বোধ নেই৷ তারা পুঁজিবাদের বিকৃত সংস্কৃতির শিকার৷ এখন পাঠকের ওপর বিচারের ভার কারা মধ্যযুগীয় হাম্বা ও কারা উন্নত রুচীশীল সংস্কৃতির ধারক ও বাহক৷