নারদা কাণ্ডের তদন্তের ভার সিবিআইয়ের হাতে

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

দুর্নীতি বর্তমানে সমাজের সবচেয়ে বড় সমস্যা৷ জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে যাঁরা দেশ চালান, তাঁরা যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হন, তাহলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা থাকে না৷ গত ২১শে মার্চ দেশের শীর্ষ আদালত এই মন্তব্য করে নারদ স্টিং অপারেশনের তদন্ত ভার সিবিআইয়ের ওপর ন্যস্ত করল৷ এর পূর্বে গত ১৭ই মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশিথা মাত্রেকে নিয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের আপত্তি সত্ত্বেও, নারদ কাণ্ডে প্রাথমিক তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিয়েছিল৷ রাজ্য সরকার সহ অভিযুক্ত নেতারা হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিলেন৷ ২১শে মার্চ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জেএস খেহরের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করল ও নারদা কাণ্ডের তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতেই থাকার পক্ষে রায় দিলেন৷

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য গত বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক পূর্বে নারদা ষ্টিং অপারেশনের ভিড়িও ফুটেজ টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়েছিল৷ তাতে দেখানো হয়েছিল রাজ্যের শাসক দলের কিছু কিছু নেতা একজনকার কাছ থেকে অবৈধভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা নিচ্ছেন৷ এই নিয়ে ওই সময় চারিদিকে হৈ-চৈ পড়ে যায় বিপুল অর্থবল ও পেশীবলের সাহায্যে নির্বাচনে জেতাটা এখন কোনও নতুন কথা নয়৷ বিজেপি ও কংগ্রেস বা সিপিএম সহ বামপন্থী দলক্তলিও পুঁজিপতিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা নিয়ে নির্বাচনে লড়েন---এটা সবাই জানে৷ কিন্তু এসব আইনের টানা জলে ধরা সহজ হয় না৷ কিন্তু নারদা সাংবাদিক সংস্থার পক্ষে, সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল সুকৌশলে ওই সব নেতাদের হাতে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলে দেয় ও তা অন্যের অজান্তে ভিড়িও করে রাখেন৷ ওই ভিড়িও প্রকাশ করে স্যামু সারা দেশে আলোড়ন তোলেন৷ স্বাভাবিকভাবে ওই নেতৃবৃন্দ ও রাজ্য সরকার ওই অর্থ গ্রহণের কথা স্বীকার করলেন না ও একে বিরোধী পক্ষের ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেন৷ এই বে-আইনি অর্থ লেনদেন কাণ্ডে কিছু মন্ত্রী ও এক এসপি পদের অফিসার জড়িত হলেও রাজ্য পুলিশকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এর তদন্তের আদেশ দেন ও স্যামুর এই অভিযোগকে সরাসরি ষড়যন্ত্র বলে দাবী করেন৷ অভিযুক্তরা স্যামুর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদনও করেন শেষ পর্যন্ত কলকাতা হাইকোর্ট এই ঘটনার তদন্তভার কেন্দ্রিয় সংস্থা সিবিআইয়ের হাতেই ন্যস্ত করেন৷

তখন রাজ্য সরকার হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন৷ সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কেই বহাল রাখেন ও এই কেলেঙ্কারীর তদন্তের দায়িত্ব সিবিআইয়ের হাতেই রাখেন৷

বলা বাহুল্য নির্বাচনে পুঁজিপতিদের কাছ থেকে প্রায় সমস্ত প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলক্তলি বিপুল অর্থ গ্রহণ করেন৷ পুঁজিপতিরা তাদের শোষণের সাম্রাজ্য অক্ষুণ্ণ্ রাখার জন্যে সম্ভাবনাপূর্ণ রাজনৈতিক দলক্তলিকে বিপুল অর্থ ডোনেশন দেন৷ অযোগ্য প্রতিনিধিরা এভাবেই গদীতে আসীন হয়ে পুঁজিপতিদের সেবা করেন৷

বলা বাহুল্য সাংবাদিক ম্যাথু স্যামুয়েল পুঁজিপতিদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ কালো টাকা সংগ্রহ করে যে দুর্নীতির দিকটা তুলে ধরতে চেয়েছেন, তা শুধু যে বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলের নেতারা করেন তা নয়, এটা সমস্ত বড় বড় রাজনৈতিক দলই করে থাকে৷ প্রচলিত গণতন্ত্রের এটা একটা প্রধান ব্যাধী বলা বাহুল্য, সারা দেশ জুড়ে যে দুর্নীতি ছেয়ে গেছে নির্বাচনী দুর্নীতি তার মধ্যে অন্যতম প্রধান৷