বাঙালীর জীবন থেকে চলে গেল মূল্যবান একটা বছর৷ ১৪২৮ এর নববর্ষকে বরণ করার কত আয়োজন৷ সূর্যটা কিন্তু আর পাঁচটা দিনের মতই উদয় হয়েছে৷ দিনের শেষে অস্ত যাবে প্রকৃতির চিরকালীন নিয়মে৷ চির নোতুন প্রকৃতির বিশেষ কোন নববর্ষ নেই৷
কিন্তু মানুষের জীবনে নববর্ষের বিশেষ তাৎপর্য আছে৷ বড় অল্প সময়ের জন্যে মানুষ পৃথিবীতে আসে৷ মানব আধারে জন্ম নিলেও মনুষ্যত্ব অর্জন সহজে হয় না৷ দুঃসাধ্য সাধনায় মানুষকে মনুষ্যত্ব অর্জন করতে হয়৷ তাই মানুষের জীবনে প্রতিটি মুহূর্ত অতিব মূল্যবান৷ সেই মূল্যবান মুহূর্তের একটি বছর চলে গেল৷ কি হারালাম,কি পেলাম---সেই হিসাব মেলাবার দিন আজ৷ বাঙালীর জীবনে সময়টা মোটেই ভালো নয়৷ নির্বাচনের নামে বাঙলায় এখন চলছে গণতন্ত্রের প্রহসন৷ ফ্যাসিষ্ট শক্তির ফোঁস ফোঁস হুংকারে বিষাক্ত বাতাস, বুলেটে বিধবস্ত গণতন্ত্র, প্রিয়জন হারানোর বেদনায় আকাশ ভারাক্রান্ত৷
৮০ বছর আগে রবীন্দ্রনাথ সুভাষচন্দ্রকে একপত্রে লিখেছিলেন--- হিংস্র দুঃসময়ের পিঠের ওপর চড়ে বাঙালীকে বিভীষিকার পথ অতিক্রম করতে হবে৷’’ সেই হিংস্র দুঃসময় বাঙলার দুয়ারে এসেছে গণতন্ত্রের মুখোসে৷ বাঙলাকে গ্রাস করেছে পশ্চিমি অসংস্কৃতি৷ ফ্যাসিষ্ট শক্তির হাত ধরে জালিয়ানওয়ালাবাগের ইতিহাস জেগে উঠলো শীতলকুচিতে৷ মদগর্বী শাসকের হুংকার---‘আরো হবে শীতলকুচি!’ আতঙ্ক বেদনা-বিষাদে আচ্ছাদিত এবারের নববর্ষ৷ সুভাষচন্দ্রকে ওইপত্রে আশার বাণী শুণিয়েছেন বিশ্বকবি---‘‘অদৃষ্ট কর্তৃক অপমানিত হয়ে বাঙালী মরবে না৷ প্রচণ্ড মার খেয়েও মারের ওপর মাথা তুলে দাঁড়াবে বাঙালী৷’’
মাথা তুলে দাঁড়াবার এটাই উপযুক্ত সময়---বিশ্বকবির ভাষায় বলি---‘‘মানুষের নববর্ষ আরামের নববর্ষ নয়, সে এমন শান্তির নববর্ষ নয়--- পাখির গান তার গান নয়, অরুণের আলো তার আলো নয়৷ তার নববর্ষ সংগ্রাম করে আপন অধিকার লাভ করে৷ আজ শান্তি নয়, আরাম নয়, সংগ্রাম---আপন অধিকার অর্জনের সংগ্রাম৷ এই দুঃসময়ে বাঙালীর মহৎকাজ দুটি---মনুষ্যত্ব লাভের দুঃসাধ্য সাধনা, সংগ্রাম করে আপন অধিকার অর্জন৷ অনেকটা সময়---অনেক বছর হারিয়ে গেছে৷ এবার তো বাঙালী নিজেই হারিয়ে যাবে যদি ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে!
তাই আসুন নববর্ষের সুপ্রভাতে ঐক্যবদ্ধ বাঙালীর শপথ ---
‘‘মুষ্টি বদ্ধ হাত আকাশে তুলে
হিন্দু-মুসলমান বিভেদ ভুলে
লক্ষ কন্ঠে তোল একটি আওয়াজ
এ মাটি আমার, এ দেশ আমার
আমি বাঙলার, বাঙলা আমার৷’’