প্রথম পুলিশ

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি শাহজাদা আজিমওশ্বানের সনন্দের বলে ১৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর এই তিনখানা গ্রামের জমিদারি-স্বত্ব লাভ করেন৷ অর্থাৎ ইংরেজরা উক্ত তিনখানা গ্রামের জমিদার হলেন৷ জমিদার হয়ে তাঁরা ঐ গ্রাম তিনখানা প্রজা- বিলি করে দেন৷ প্রজা-বিলির হার ছিল প্রতিবিঘা তিন টাকা৷ খাজনা আদায়, প্রজা-বিলি, জমির কর নির্ধারণ ইত্যাদি কাজের জন্য কোম্পানি একজন কলেকটর নিযুক্ত করেন৷ আদায়ীকৃত খাজনা থেকে শতকরা দশ টাকা কমিশন কেটে রেখে বাকী টাকা বাদশাহী খাজনার জন্য কোম্পানির তহবিলে জমা দিতে হত৷ এই কালেক্টর পদে যিনি প্রথম নিযুক্ত হন তাঁর নাম র‌্যালফ শেলডন৷

কলকাতায় ক্রমশ জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানির আয়ও  বাড়তে লাগল৷ নাতান (অসমর্থ) প্রজা খাজনা দিতে না পারলে ঢোল বাজিয়ে তার অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করে খাজনার টাকা আদায় করা হত৷ এর জন্য পাইক বরকন্দাজ রাখতে হত৷ ধীরে ধীরে কলেকটরদের ক্ষমতাও বাড়তে লাগল৷ কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর---এই তিনটি গ্রামছাড়া ও পাশ্ববর্তী আরো ৩৮ খানা গ্রামের খাজনা আদায় , বিলি-বন্দোবস্ত প্রভৃতির দায়িত্ব এসে পড়ে কালেক্টরের হাতে৷ এই কালেক্টর ফৌজদারি বিভাগেরও প্রধান কর্মচারী ও ম্যাজিস্ট্রেটের কাজ করতেন৷ ফলে তাঁর অধীনে তৈরি হল পুলিশ৷ ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে এই পুলিশ বাহিনীতে ছিলেন একজন পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট, পঁয়তাল্লিশজন কনস্টেবল, দুজন নকিব ও কুড়ি জন চৌকিদার৷ সেকালে গোয়ালারা ছিল বিশেষ বলবান ও লাঠি চালনায় ওস্তাদ৷ তাই গোয়ালারাই সাধারণত চৌকিদারের চাকরি পেত৷

এরপর ১৭০৬ খ্রীষ্টাব্দে কোম্পানির জমিদারির মধ্যে চুরি-ডাকাতি বাড়তে থাকে৷ এই চুরি-ডাকাতি দমন করার জন্য আরো ৩১ জন পাইক নিযুক্ত করা হয়৷ এরাই হল সেকালের প্রথম পুলিশ৷