রাজ্যে কি আরো একবার রাষ্ট্রপতি শাসন জারী হবে! বিরোধী নেতাদের দাবীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসনের পক্ষে রাজ্যপালের সওয়াল মিলে যাচ্ছে৷ নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি রাজ্য সরকার কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, এ যেমন সত্য, ক্ষমতা দখলের গন্ধ পাওয়া রাজ্যের এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী দলও নানা অছিলায়, রাজ্যে অশান্তি বাধিয়ে রাখতে চাইছে৷ সন্দেশখালি , লালবাজার অভিযান এমনকি এন.আর.এস.-এর ঘটনাতেও রাজনীতির রং দিয়ে সব কিছুই রাজনীতির জটিল অঙ্কে হিসেব করা হচ্ছে৷ এতে কোন দলের কতটা লাভ হবে সেই হিসাব পরে কিন্তু এখন ক্ষমতার কুর্সী দখল করা ও ক্ষমতা বজায় রাখার লড়াইতে বাঙলার জনগণের প্রাণ ওষ্ঠাগত৷
ভারতীয় গণতন্ত্রের লজ্জাকর দিক এই যে এখানে কোন রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারী করা শুধুমাত্র আইন-শৃঙ্কলা অবনতির কারণে হয় না৷ আইন শৃঙ্খলাকে অজুহাত করে করা হয়৷ কিন্তু আসল কারণটা নির্ভর করে কেন্দ্র ও শাসক দলের সম্পর্ক ও লাভ-ক্ষতির হিসাবের ওপর৷ বাম আমলেও একসময় রাজ্যের বর্তমান অবস্থার চেয়েও খারাপ ছিল৷ তখনও কেন্দ্র ও রাজ্যে ভিন্ন দলের শাসন থাকলেও পরস্পরের মধ্যে একটা স্বার্থের সম্পর্ক ছিল৷ বিজন সেতুতে আনন্দমার্গের সন্ন্যাসী হত্যা ধর্মতলায় পুলিশের গুলি চালনা---সব কিছু তখনকার কেন্দ্রীয় সরকার হজম করেছে রাজ্যের শাসকদলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায়৷ বামফ্রণ্ট জমানার শেষ দশকে রাজ্যে চরম বিশৃঙ্খলা ছিল৷ মানুষ ভয়ে সিঁটিয়ে থাকত৷ অনেক জায়গায় মানুষ ভোট দিতে যাওয়ার সাহসও পেত না৷ তবু রাজ্যে শাসক দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকায়নি৷
আজ কিন্তু একেবারে ভিন্ন অবস্থা৷ কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক আদায়-কাঁচকলায়৷ তার ওপর শাসক দল একক ক্ষমতায় দিল্লী দখল করেছে৷ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে সে যে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ অন্য কোন দলের ওপর তাঁকে নির্ভর করতে হবে না৷ নিজের খেয়াল খুশী মত সে সব সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷ তবু কেন্দ্র রাজ্য সম্পর্ক বা আইন-শৃঙ্খলা জনিত কারণে রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন হওয়ার সম্ভাবনা কম৷ অনেক জটিল অঙ্কের হিসাব করে অনেক লাভ ক্ষতির চিন্তাভাবনা করে কেন্দ্র রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে এগোবে৷
লোকসভা নির্বাচনে বিপুর পরিমাণে অর্থ সাংঘটনিক শক্তি সোস্যাল মিডিয়া ও প্রধানমন্ত্রী নিজে বার বার ছুটে এসেও আসন সংখ্যা ও ভোটের শতকরা হিসেবে শাসকদলকে ছাড়িয়ে যেতে পারেনি৷ এই অবস্থায় রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারী হলে মমতা ব্যানার্জী শহীদের মর্যাদা পেতে পারেন৷ তার ফল বিজেপির পক্ষে ভাল নাও হতে পারে৷ তার ওপর আরো একটা ব্যাপার হ’ল বিজেপির প্রাপ্ত বোটের অনেকটাই বাম কংগ্রেসের নেগেটিভ ভোট৷ এই মুহূর্ত্তে রাষ্ট্রপতি শাসন জারী করে ভোটের দিকে এগোলে দিল্লীর শাসক দলের পক্ষে হিতে বিপরীত হতে পারে৷ তৃণমূল যদি লোকসভার প্রাপ্ত ভোট ধরে রাখতে পারে, বাম কংগ্রেস জোট বেঁধে তাদের হারানো ভোটের কিছুটা বিজেপির কাছ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে, তাহলে বিজেপির পক্ষে লোকসভার সাফল্য ধরে রাখাই মুশকিল হবে৷
তাই এই মুহূর্ত্তে বিজেপির রাজ্য নেতারা রাষ্ট্রপতি শাসনের জন্য লাফালেও দিল্লীর শাসক দলের নেতাদের মাথায় অন্য ভাবনা৷ তাঁরা হয়ত চাইছেন রাজ্যে অশান্তি বজায় রেখে, উন্নয়নের কাজকর্ম ব্যাহত করে রাজ্য সরকারকে বিব্রত করে রাখা যাতে মমতা ব্যানার্জীর জনপ্রিয়তা ক্রমশঃ হ্রাস পায়৷ তারপর সুযোগ বুঝে রাষ্ট্রপতি শাসনের দিকে যাওয়া যাবে৷