রামলীলা ময়দানে কর্ষক সমাবেশ ঐতিহাসিক ঃ তাদের দাবী --- রামমন্দির নয় কৃষিঋণ মুকুব চাই

লেখক
মুশাফির

ভারত কৃষিপ্রধান দেশ৷ দীর্ঘ ৭১ বছরে এদেশের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি কৃষির উন্নতি কতটুকু করেছে? --- যার জন্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি গর্ববোধ করতে পারে? অদ্যাবধি উর্বর কৃষিজমির অধিকাংশ রাস্তা তৈরী করতে, শিল্প গড়তে ব্যবহার করেছে৷ বাড়ীঘর হয়েছে৷ ভূমি সংস্কার তেমন করেছে বলে মনে হয় না৷ চাষের উন্নতির জন্যে নূ্যনতম কাজগুলি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার করেনি৷ অদ্যাবধি চাষাবাদের জন্যে যে জলটুকু প্রয়োজন তা অধিকাংশ চাষীই পায় না৷ আজও দেশের নদনদীগুলি, খাল-বিলের তেমন সংস্কার হয়নি৷ কিন্তু খরচ হয়েছে অনেক৷ গঙ্গা নাকি জাতীয় নদী? সেই নদী নাব্যতা হারিয়েছে৷ তাই এই নদীর শেষাংশে পশ্চিমবাঙলার নদী তীরবর্তী জেলাগুলির জনপদে যেখানে লক্ষ লক্ষ মানুষের বাস তারা বাস্তুহারা হচ্ছে৷ কলকাতা বন্দর তার গুরুত্ব হারিয়েছে৷ ভারতের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি ক্ষমতায় আছে নিছক শাসন করতে, সেবা করতে নয়৷ প্রান্তিক চাষীরা আজ এদেশে সবচেয়ে শোষিত ও অত্যাচারিত হচ্ছে৷ তাদের সংসার চালাতে যেটুক জমির দরকার সেটা নেই৷ বাড়ীর অধিকাংশ ছেলেমেয়ে শিক্ষিত হয়ে ওঠার সুযোগ পায় না৷ তাই সামান্য জমিতে চাষ করে তাদের দিন গুজরান করতে হয়৷ জমির ফসল তাদের বাধ্য হয়ে ফসল ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কম দামে বিক্রি করতে হয় সেই ফড়েদের কাছেই যাদের কাছে তারা ঋণ দিতে বাধ্য হয়েছে আর্থিক সংকটের কারণে৷ কারণ চাষের সময়ে ঋণ নিতে হয়েছে নিছক সংসার বাঁচাতে৷ অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাষ মার খাওয়ার দরুণ তারা প্রচণ্ড আর্থিক সংকটে পড়ে৷ তখন অন্য কোন আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় তারা আত্মহত্যা করে৷ সরকারী ঋণ গরীব চাষীদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব হয় না৷

এটা যেমন অপ্রিয় সত্য ঠিক তেমনই নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক দলগুলি কৃষিঋণ নিয়ে হইচই করে৷ তাই দেখা যায় আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই কৃষিঋণের কথা উঠছে৷ যখন যারা বিরোধী দলে থাকে তখন তারা হইচই করে৷ কিন্তু যখন শাসনে থাকে তখন কিন্তু চুপচাপ থাকে৷ কেন্দ্রে বর্তমান বিজেপিই সাড়ে চার বছর শাসনে রয়েছে৷ যাতেই তারা হাত দিয়েছে তাতেই ব্যর্থ হয়েছে৷ শুধু তাই নয় এই শাসনে ধনী ব্যবসাদার গণের বেশ কয়েকজন কোটি কোটি টাকা ব্যাঙ্ক থেকে নিয়ে দেশের বাহিরে পলায়ন করেছেন৷

সম্প্রতি দিল্লির রামলীলা ময়দানে ভারতের প্রায় ২০০টি সংঘটন কর্ষকদের নিয়ে আন্দোলনে হাজির হয়েছিল৷ তাঁরা যাঁদের নিয়ে হাজির হয়েছেন তাঁদের অনেকেই দরিদ্র চাষী যাঁদের পরিবারের অনেকে ঋণের দায়ে আত্মহত্যা করেছে৷

এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ভারতের পক্ষে মোটেই গর্বের নয়৷ সারা পৃথিবী জানছে যে কৃষি প্রধান ভারতে কর্ষক দের কতটা করুণ আর্থিক অবস্থা৷ অত্যন্ত কষ্ট করে ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এঁরা এসেছেন৷ অনেকের খালি পা৷ শীতে রামলীলা ময়দানে তাঁরা রাত কাটিয়েছেন৷ দিল্লির কয়েকটি ছাত্র সংঘটন এঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে৷ এই ছাত্ররা অধিকাংশ মানবতাবাদে বিশ্বাসী৷ সরকারের ছাত্র সংঘটন অবশ্য তাদের সঙ্গে ছিল না৷ চরম শীতে সারা ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে দিল্লিতে আসাটা যে কতটা কষ্টকর তা তারাই বুঝেছেন যাঁরা প্রাণের দায়ে হাজির হয়েছেন৷

এদিকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারত৷ সেখানে বিজেপি ও তার শাখা সংঘটনগুলি দাবী তুলছে রামমন্দিরের জন্যে৷ কিন্তু কর্ষকরা সমবেত হয়ে দাবী তুলছেন ‘রামমন্দির নয় আগে কৃষিঋণ মকুব করা হোক৷’’

মনে রাখতে হবে সরকার জনগণের সেবক৷ ক্ষুধায় কাতর দরিদ্র চাষীরা এসেছেন কেন্দ্রীয় সরকারের দরবারে তাঁদের ক্ষুধা নিয়ে৷ তাই সারা ভারতের জনগণ আশা করেন এঁদের সামান্য তম দাবীটুকু রাখা হোক কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে৷ আমরা বেঁচে আছি কর্ষকদের (চাষীদের) কঠোর পরিশ্রমে উৎপাদিত খাদ্যগ্রহণ করেই৷ তাই চাষীদের দাবীকে অগ্রাধিকায দেওয়া সরকারের প্রাথমিক কর্তব্য৷

তাই হতদরিদ্র কর্ষকদের দাবীগুলি পূর্ণ করে আশা করি কেন্দ্র সরকার তাঁদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করে দেশ সেবকের ভূমিকা পালন করবেন৷

তাঁরা যে অদ্যাবধি বঞ্চিত শোষিত হয়ে আসছেন সেটা  রূঢ় বাস্তব৷ তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই৷