শাসক দায়িত্বহীন বেচারাম  জনগণ দুঃখীরাম - এ কেমন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা

লেখক
প্রভাত খাঁ

বর্তমানে ভারতের বুকে কেন্দ্রে যে শাসন চলছে সেটা হলো বিজেপি দলের শাসন৷ অনেক আশা করেই হয়তো বোটারগন কংগ্রেস দলের শাসন পালটিয়ে এদের আনেন কেন্দ্রে৷ এবার এঁরা কেন্দ্রে এসেছেন দ্বিতীয়বার৷ প্রথম বারের শাসনেই এঁরা বেশ কিছুটা হিন্দুত্ববাদী মানসিকতাকে চাঙ্গা করে তোলে, তাতে দ্বিতীয়বারে তাঁরা পুনরায় শাসনে আসেন৷ যদিও তাঁদের শাসনে দেশ আর্থিক, সামাজিক দিক থেকে দারুণভাবে পিছিয়ে পড়ে,তাতে জনগণের বিশেষ করে কোটি কোটি হতদরিদ্র ভারতবাসীর দৈনন্দিন জীবন যাপনের পথ দুর্বিসহ হয়ে পড়ে৷ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ণের অবস্থাটা তলানিতে চলে যায়৷ চরম দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি,চরম বেকার সমস্যায় মানুষ ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে৷ বিমুদ্রাকরণটাই দেশকে পঙ্গু করে দেয় যেটা সরকার স্বীকারই করেন না৷ তাছাড়া জি.এস.টি যে কতটা হত দরিদ্র জনগণকে অদ্যাবধি দারুণভাবে শোষণ করে চলেছে সেটা কল্পনাতীত৷ সরকারের যে আর্থিক ঘাটতি সেটাকে সরকার কোটি কোটি দরিদ্র মানুষকে ছলবল কৌশলে শোষণ করে মিটিয়ে নিয়ে তাঁদের এক নাগাড়ে রক্তশূন্য করেই চলেছে৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যেমন ডিজেল, পেট্রোল, রান্নার গ্যাস যা ছাড়া জীবনযাত্রা অচল সেগুলির দাম প্রতিমাসে মাসে বাড়িয়ে যে অবস্থায় নিয়ে এসেছে সেটা অকল্পনীয়! বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ বলেই এটা সম্ভব হচ্ছে আর জনগণ যদি সচেতন হতেন তাহলেও এর প্রতিক্রিয়া হতো অন্য৷ এমন দেশের আর্থিক দুর্গতি, তাকে সামাল দিতে বর্ত্তমানকেন্দ্র সরকার আগামী চার বছরে ১০০টি সরকারি সংস্থা বেঁচে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যেটা মোটেই দেশের পক্ষে কল্যাণকর নয়৷ এই সংস্থার মূল্য হবে ৫ লক্ষ কোটি টাকা! সরকার দারুণভাবেই আর্থিক সংকটে ও ঋনগ্রস্থ, তার হাত থেকে বাঁচতে এই ব্যবস্থা৷

করোনায় দেশ আর্থিক দিক থেকে  চরমভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে৷ আবার করোনা নাকি মাথাচাড়া দিচ্ছে! স্মরণে  রাখা দরকার বর্ত্তমানে দেশের  রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংখ্যা ৩০০টি, তার মধ্যে ১০০টিকে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ মোদি সরকার নাকি সেগুলি কমিয়ে ২৪টিতে  দাঁড় করাবেন৷ সরকার  বেসরকারী করণের মাধ্যমে অন্তত ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রেখেছেন৷ সরকার এতই উদার যে কোন শিল্পসংস্থার মালিক হওয়া ও ব্যবসা করা সরকারের লক্ষ্য নয়৷ বর্তমানে জনকল্যাণমূলক উন্নয়ণমূলক প্রকল্পে গুরুত্ব দেওয়া দরকার৷ এটাই নাকি এ সরকারের লক্ষ্য৷ কিন্তু অতীতে সরকার কেন এগুলি করেছিলেন বা হাতে নিয়েছিলেন সেটা  তো অবশ্যই দেশের  অজ্ঞাত নয় বা অজানা নয়৷ দরিদ্রদেশে যে যে সংস্থাগুলি ধুঁকছিল, সেগুলির আর্থিক উন্নয়নে সরকার সেগুলি গ্রহণ করে শ্রমিকদের রক্ষা করেন ও দেশের আর্থিক উন্নয়ন করেন৷ যখন চরম বেকার সমস্যা কলকারখানা ধুঁকছে, শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত তখন এগুলির  বেসরকারীকরণ করার সিদ্ধান্ত তাতে অবশ্যই শ্রমিক ছাঁটাই, নানা পরিবর্তন করতে গেলে দেশে নোতুন নোতুন সমস্যা অবশ্যই দেখা দেবে৷ যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় বিরাট দেশে অর্থনৈতিক মহলে ও জনমানসে রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে এক দারুণ চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে৷ বেসরকারীকরণটা তো দুষ্ট ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থারই শোষণ করার মুখ্যচাবিকাঠি৷ কিন্তু গণতন্ত্র বাঁচে সামাজিকরণের মধ্য দিয়ে৷ জনকল্যাণমুখী গণতান্ত্রিক সরকারের কাজ হলো দুর্বল সংস্থাগুলির শ্রমিক সংঘটন, যাঁরা প্রশাসনে আছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে ও লোকসভায় বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া কারণ দেশ শাসনের জন্যই লোকসভায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন জনগনই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার জন্য৷ এটাতো অস্বীকার করা৷ নয় সরকার এসেছেন একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য৷ যে সমস্যাটি স্থায়ী তার সমাধান করতে জনগণের সকল প্রতিনিধির মতামত অবশ্যই দরকার৷ সরকার আর্থিক দায় এড়াতে পারেন না৷ সরকার ব্যর্থ যে বেচারামের মতো সব বিক্রি করে মুষ্টিমেয় ধনীর হাতে দেশকে তুলে দিয়ে বাৎসরিক কর আদায় করে একনায়কতন্ত্রের প্রধানের মতোই স্বৈরতান্ত্রিক  হবেন৷ গণতন্ত্র বলতো তো আর কিছু থাকবে না৷

ধর্মমত নিরপেক্ষ ভারতের সংবিধানটি যেটা বলেন? যেখানে কেন্দ্ররাজ্যের পবিত্র কর্তব্যের কথা ঘোষণা করা হয়েছে৷ সর্বভারতের  স্বার্থের কথা যেখানে জড়িত সেগুলিকে রক্ষা করতেই হবে রাজ্যকে৷ গণতন্ত্রে কোথাও বেচারাম হয়ে নাকে সরষে তেল দিয়ে ঘুমুবার অধিকার সংবিধান দিয়েছেন বলে মনে হয় না৷  সরকার দুর্বল সংস্থাগুলির সামাজিকরণের কথা ভাবুন, মুষ্টিমেয় ধনীদের হাতে তুলে দিতে নয়৷ এতে বিরাট বহুভাষাভাষীর দেশের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হবে৷ আর্থিকনীতি কিছু কেন্দ্রের, কিছু রাজ্যের আর কিছু জনগণের হাতে থাকবে বিকেন্দ্রীকভাবে৷ তবেই সুষ্ঠু অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাফল্য জনগণ পাবেন ও দেশ পাবে৷

সমাজের সার্বিক অর্থনৈতিক, সামাজিক, কৃষ্টি সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানোটাই সার্থক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র৷ তাছাড়া এটা একটা মারাত্মক বঞ্চনা৷ জনগণকে গণতন্ত্রের নামে বিশেষ করে নোংরা দলবাজিটা হলো অত্যন্ত জঘন্য অসভ্যতা গণতন্ত্রের নামাবলি গায়ে দিয়ে! জনগণই এই  ধরণের ধান্দা ও ধাপ্পাবাজি চাননি সেটা যেন স্মরণে থাকে শাসক দলের৷ বলতে বাধ্য হচ্ছি একজন বিখ্যাত ব্যষ্টি বলেছেন ব্যঙ্গ করেই সীতার দেশ নেপালে তেল সস্তা রাবণের শ্রীলঙ্কাতে ও তেলের দাম কম, শুধু রামের দেশেই তেলের দাম বেড়ে চলেছে৷ এটা তো বর্ত্তমানে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানকেই বলা কি হচ্ছে না! তেলের দাম বাড়ছে জনগণ মরছেন আর ধনী কর্র্পেরেটদের ছাড় দিচ্ছে আর কোষাগার ভরিয়ে চলেছে৷ হায় দেশ সেবক শাসক! ধনীদের তোষণ করা ও হতদরিদ্রদের শোষন করাটাকে তো আর গণতন্ত্র বলা চলে না! তাই জনগণ সচেতন হয়েই পথ চলুন৷