শাসনের দোসর শোষণ ---পরিণতি স্বৈরাচারিতা

লেখক
হরিগোপাল দেবনাথ

(পূর্বপ্রকাশিতের পর)

 অবশ্য এর চাইতেও আরও ভয়াবহ তবে মায়াবী আলোর রোশনাইয়ে--- মানবতার মহাশত্রু পুঁজিবাদ ও তারই পৃষ্ঠপোষক বর্ত্তমানের পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা ও সেই কারখানা জাত প্রহেলিকা তথাকথিত বিশ্বায়ন, যা এক কথায় মাৎসন্যায়েরই মতন বড় মাছ-কর্তৃক ছোট মৎস্য দিকে গলধঃকরণ করার প্রয়াসমাত্র৷ অন্যমাত্র বলতে হচ্ছে যে, এ যুগে রাজনৈতিক সাম্রাজ্যবাদকে আড়ালে রেখেই সেই তথাকথিত গণতন্ত্র কিংবা মুখোশ পরা সমাজবাদের ম্যাজিক দেখিয়ে অর্থনৈতিক সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ রয়েছে সারা পৃথিবীর মুষ্টিমেয় দুর্র্যেধন-দুঃসনেরা--- এযুগের ধনকুবেররা তথা করপোরেট মালিকানা বিশিষ্ট ব্যষ্টিবর্গ বা সংস্থাগুলো কিংবা মিলেনীয়ার, বিলোনীয়ার ও  ত্রিলোনীয়াগণ৷ বস্তুতঃ, তাদের দাপটে, স্পর্ধায় ও বেপরোয়া অমানবিক তথা পাশবিক শোষণ আর  অত্যাচারে গোটাপৃথিবী আজ তাদের শাসনের অছিলায় মূলতঃ শোষণের জাঁতাকলে মুষ্টিমেয় ধনিকগোষ্ঠী ছাড়া মানবজাতির বৃহদংশ নির্মমভাবে লাঞ্ছিত, শোষিত, বঞ্চিত, পদদলিত হয়ে চলেছেন৷ এ অবস্থায় ওদেরই মুখরোচক ধনিকগোষ্ঠীর উদর-পূরক ‘পুঁজিবাদী গণতন্ত্র’ শোষণ -বিগ্রহের পূজোরছলে বলির হাঁড়ির কাঠে আজ নিক্ষিপ্ত৷ অবশ্য, ভারত--- বর্তমানের ‘খণ্ডিত ভারতবর্ষ’ নিয়ে যতই প্রলুদ্ধকারক বিশেষণে তাকে রূপায়িত করার প্রয়াস চলুক না কেন, কোনমতেই কিন্তু এর ব্যতিক্রম হবার নয়৷ মানুষরূপী ছদ্মবেশী দানবদের হিংস্র করালাঘাতে ভারতাত্মার যে নাভিশ্বাস উঠেছে একথা বললেও খুব একটা অতিশয়োক্তি হবে বলে মনে করছি না৷

তবে ভরসা একটুকুই যে, দেরীতে হলেও ভারতবর্ষীয় জনমানসের বরফ এখন গলতে শুরু করেছে৷ মুখোশধারী দানবদের গর্র্বেদ্ধত স্পর্ধা, নির্লজ্জ শোষণ-প্রবৃত্তি, লোলুপতার আকাশচুম্বী উদগ্র দাপট ও ধরা-কে সরাজ্ঞান করার অনিবার্য পরিণতির ফলেই মুখোশ ওদের খুলে পড়ছে  ও ক্রমশঃ আসল বীভৎস চেহারাটা জনসমক্ষে উন্মোচিত হতে যাচ্ছে৷ বর্তমানে ভাজপা-জমানার দুর্ধর্ষ হায়েনাদের লোকভোলানো প্রতিশ্রুতি যে চিটিংবাজির কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয় তা কিন্তু বিগত ২০১৪ সাল ও ২০১৯ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিদ্বয় খেলাপকরণের  দ্বারাই জনসমক্ষে দিবালোকের  মতই উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে৷ সম্প্রতি কেন্দ্রের নয়া-শিক্ষানীতি যে প্রকারান্তরে শিক্ষা ব্যবস্থায় গেরুয়াকরণ আর হিন্দীসাম্রাজ্যবাদ বিস্তারের সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয় সেটাও বিদগ্দমহলে জানার বাকী নেই৷ পরবর্তী সময়ে করপোরেট-মালিকানার  তহবিল-বৃদ্ধির স্বার্থে মুনাফাখোর, মজুতদার ও ভূস্বামীদের মুনাফা লুটবার স্বার্থে তথা তাদের শোষণ চালাবার ফন্দি পাকাপোক্ত করতেই যে কৃষি ও কর্ষকদের স্বার্থবিরোধী কৃষি-আইন দেশবাসীর ওপর চাপিয়ে দেবার জন্যে দুর্র্যেধনেরা গোয়ার্তুমি চালাচ্ছে সে কথা ভারতবাসী ও বিশ্ববাসীদের বুঝতে আর কষ্ট হচ্ছে না৷ রান্নার গ্যাস, পেট্রল ডিজেলের মূল্যস্তর মোদী জমানায় দ্বিগুণ বা আড়াইগুণ ছাড়িয়ে গেছে তাও যে হিন্দীসাম্রাজ্যবাদীদের্ খেলার পুতুল  তাও হিন্দীসাম্রাজ্যবাদীদের্ খেলার পুতুল আর সেবাদাসদেরই জনবিরোধী চিন্তা আর কর্মের ফসল সেটাও ইদানীং আমাদের দেহাতি জনতা, নিরক্ষর বা বুভুক্ষু গণদেবতাদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না৷

বিন-তুঘলকী ফর্মূলা চালিয়ে নোটবন্দী আর নোটছাপানোর পেছনে যে কালোটাকা শাদা করার ও কালোবাজারীদের হাতে মত্তকা তুলে দেবার ঘৃণ্য পরিকল্পনা ছিল তাও কিন্তু স্কটিকের ন্যায় ভেসে উঠেছে৷ বেকারদের চাকরি দেবার নামে যে মূলতঃ দেশের কর্মহীন যুবশক্তিকেই ধোঁকার শিকারে পরিণত করার এক শয়তানী-চাল ছিল তাও ভারতের কোটি কোটি  কর্মহীন ও জীবিকা প্রত্যাশীদের  প্রত্যেকেরই হস্তরেখার মতই প্রতীয়মান হয়ে চলেছে৷ দেশজুড়ে আজ জিনিসপত্রের মূল্যস্তর এমনই বেসামাল যে দেশের গরীব লোকদের পেটভর আহার-সংস্থান অধিকাংশদেরই জীবনেই আজকাল পাল পার্বণের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে৷ দু’টাকা কিলো দরে ভর্তুকীর চাল কোনটাও কিন্তু ত্রিপুরার মত ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও নিঃস্বদের কেনার ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে৷

এবারে আসি পশ্চিমবাঙলার রাজ্য বিধানসভার বোট পর্ব নিয়ে৷ পশ্চিমবাঙলার  কিঞ্চিৎ সংখ্যক উচ্ছিষ্টভোজী ক্ষমতালোভীরা হয়তো বিশ্বাস স্থাপন করলেও, পশ্চিমবাঙলা নিয়ে মোদী-শাহীদের ‘সোনার বাঙলা’ বানাবার প্রলোভন যে প্রলোভনকে ছাড়িয়ে প্রহসন--- বড়রকমের তা’ সকলেই বুঝে গেছেন৷ দ্বিতীয়তঃ ্‌ইতোপূর্বে আমফানের কিংবা রাজ্যের বাইরে থেকে পরিযায়ী শ্রমজীবীদের অসহায় অবস্থায় রাজ্যে ফিরিয়ে আনতে মোদীজীর হৃদয় চুইয়েও আশানুরূপ কৃপাজল গলেনি, সেই পাষাণ-হৃদয় এখন বাঙলার মসনদ দখল করার লক্ষ্যে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার প্রতিশ্রুতি-স্বরূপ প্রলোভন-দেখানোটায়ে দেশীয় পুঁজিপতিদেরই মাছ ধরবার বরশী পাতা কিংবা বনের হরিন আটকাবার ফাঁদ পাতা হচ্ছে , তাও নেহাৎ ক্ষমতালোভী বাদ দিয়ে আর সকলেই নিতে পারছেন  বৈকি! দুয়েকদিন আগে কোচবিহারের শীতলকুচিতে নিরীহদের বুকে গুলি করে যে গণহত্যা সংঘটিত হলো তা কিন্তু শোষক শ্রেণীর ক্রীড়ণক শাসকগোষ্ঠীর আজ্ঞাবহ দাসানুদাসদের দ্বারা অতীতের গোবরাকাণ্ডের বীভৎস নায়কদের কু-কীর্ত্তির কথাই জনসাধারণকে মনে করিয়ে দেয়৷