স্ব-নির্ভরতার বাগাড়ম্বর নয় আর্থিক স্ব-নির্ভর হতে চাই বাস্তবমুখী পরিকল্পনা

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

প্রাউটিষ্ট ইয়ূনিবার্সলের কেন্দ্রীয় সংঘটন সচিব আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত উত্তরবঙ্গ সফরকালে এক সাক্ষাৎকারে বলেন স্বনির্ভরতা নিয়ে অনেক বাগাড়ম্বর হচ্ছে, কিন্তু স্বনির্ভর হতে যে বাস্তবমুখী পরিকল্পনা প্রয়োজন সে সম্পর্কে সরকার ও অর্থনীতিবিদ সকলেই নীরব৷ তিনি বলেন দেশের বর্তমান সরকার কথায় ও কাজে বিপরীতধর্মী৷ মুখে স্ব-নির্ভরতার কথা বলছেন, কিন্তু সরকার নিয়ন্ত্রিত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি পুঁজিপতিদের হাতে তুলে দিচ্ছেন৷ পুঁজিবাদী মনস্তত্ত্ব হলো অধিক থেকে অধিকতর,অধিকতম মুনাফা৷ আর অর্থনীতির মূলকথা, স্বনির্ভরতার মূলকথা সর্বজনের সার্বিক বিকাশ৷ পুঁজিবাদী পরিকাঠামোয় যা কোনভাবেই সম্ভব নয়৷ মানুষ আর্থিকভাবে স্বনিভর হলে পুঁজিবাদী শোষণ স্ব-মূলে উৎপাটিত হয়ে যাবে৷

আচার্য প্রসূনানন্দ বলেন এই মূহূর্ত্তে যদি বাঙলার কথা ধরা হয়--- তবে প্রাউটের দৃষ্টিতে বাঙলাকে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হতে গেলে প্রথমেই দুটি জিনিসের দরকার--- এক খাদ্যে স্বনির্ভরতা, দুই অর্থকরী ফসল উৎপাদনকে ব্যাপকভাবে কার্যকর করা৷ কিন্তু মানুষের সীমাহীন লোভের শিকার বাঙলার জল হাওয়া প্রাকৃতিক পরিবেশ৷ ব্যাপকভাবে অরণ্য ধবংসের ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় কম৷ সামাজিক- রাজনৈতিক পরিবেশও বলিষ্ঠ অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অনুকূল নয়৷ ধনলোলুপ পুঁজিপতিরা তাদের শোষণ বজায় রাখতে কৌশলে এই পরিবেশ তৈরী করেছেন৷ তাই সাধারণ মানুষকে স্ব-নির্ভর করতে হলে পুঁজিবাদের বিনাশ চাই৷ কিন্তু বর্তমান সরকার মুখে স্ব-নির্ভরতার কথা বললেও অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় পুঁজিবাদের তোষণ স্পষ্ট৷

আচার্য প্রসূনানন্দ আরও বলেন---প্রাউটের অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রাথমিক লক্ষ্যই হ’ল--- মানুষের পাঁচটি প্রাথমিক চাহিদা পূরণ করা-(১) খাদ্যে স্বনির্ভরতা (২) বস্ত্রে স্ব-নির্ভরতা, (৩) ঘর-বাড়ী নির্মাণের প্রয়োজনীয় উপকরণের স্ব-নির্ভরতা, (৪) রোগ নিবারণ ও চিকিৎসার উপযুক্ত ঔষধপত্র উৎপাদন (৫) শিক্ষার উপকরণের স্ব-নির্ভরতা৷ কিন্তু মানুষ এসব বিষয়ে একেবারেই সচেতন নয়৷ তিনি বলেন বৈশ্য শোষকরা কৌশলে সমাজের মধ্যে  জাত-পাত সম্প্রদায়গত  সংকীর্ণ সেন্টিমেন্টের প্রভাব ছড়িয়ে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি করে শোষণের বিজয় রথ চালিয়ে যাচ্ছে, দুঃখের বিষয় প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলিই বৈশ্য শোষণের মূল হাতিয়ার৷ দেশকে আর্থিক স্ব-নির্ভর করতে হলে প্রথমেই মানুষকে সচেতন করতে হবে, তার বুদ্ধির মুক্তি ঘটাতে হবে, সমস্ত  প্রকার  সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করতে হবে, উদার বিশ্বভাতৃত্বের ভাবধারায় মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ তবেই শোষণের মূল উৎপাটিত করে সুদৃঢ় সামাজিক অর্থনৈতিক সংরচনা গড়ে তোলা সম্ভব হবে৷ দেশ ও দেশের মানুষ স্ব-নির্ভর হবে৷

আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত গত ৮ই নভেম্বর থেকে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি, ইসলামপুর, করণদিঘি, রায়গঞ্জ, কুসমুন্ডিতে আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করে মানুষের কাছে প্রাউটের বার্র্ত পৌঁছে দিচ্ছেন৷ আলোচনা সভাগুলির আয়োজন করেছেন আচার্য কৃষ্ণস্বরূপানন্দ অবধূত ও স্থানীয় প্রাউটিষ্ট কর্মীরা৷