সিবিআই-পুলিশ কমিশনারের লড়াই -  কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে অশনি সংকেত

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

গত কয়েকদিন ধরে কলকাতায় সারদাকাণ্ডের তদন্তকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই ও কলকাতার  পুলিশ কমিশনারের মধ্যে দ্বৈরথ যুদ্ধ হয়ে গেল, তাতে পুলিশ কমিশনারকে সমর্থন করে রাজ্যের  মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সেভ ইণ্ডিয়া’ ব্যানারের তলায়  মেট্রো চ্যানেলে ধর্র্ণয় বসে পড়লেন৷ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোয়  একে অশনি সংকেত বলা যায়৷

কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের  ক্ষেত্রে এ ধরণের চিড় আগে দেখা যায় নি৷ আর এই ঘটনা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় ভিতকে  নাড়িয়ে দিয়েছে৷

গত ৩রা ফেব্রুয়ারী, রবিবার ছুটির সন্ধ্যায় সিবি আই-এর জয়েন্ট ডাইরেক্টর পঞ্চজ শ্রীবাস্তব ৩টি গাড়ীতে  করে প্রায় ২০জন  সিবিআই অফিসারকে  সঙ্গে নিয়ে লউডন ষ্ট্রীটে কলকাতার  পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের বাসভবনের  সামনে পৌঁছে যান৷  উদ্দেশ্য সারদা তদন্ত মামলার  ব্যাপারে  পুলিশ  কমিশনার  কে জেরা  করা৷

বলা বাহুল্য আগের দিন থেকে রটে গেছল, চিট কাণ্ড মামলায় রাজীব কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেফতার করার সম্ভাবনা আছে৷ এই পরিস্থিতিতে রাজীব কুমারের বাড়ীর সামনে আগে থেকেই বেশ কিছু  পুলিশ মোতায়েন ছিল৷ রবিবার  সন্ধ্যায়  সিবিআই অফিসাররা  রাজীব কুমারের বাসভবনের সামনে পৌঁছলেই কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে  সিবিআই অফিসারদের চ্যালেঞ্জ করা হয়৷

জিজ্ঞাসা করা হয়, এখানে তারা কেন এসেছেন? সিবিআই থেকে বলা হয়৷ চিট ফাণ্ড মামলা  নিয়ে রাজীব  কুমারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসেছি৷ আবার প্রশ্ণ, ওয়ারেন্ট আছে কি? সিবি আই অফিসাররা জানান, এভাবে জিজ্ঞাসাবাদ  করার জন্যে কোনো ওয়ারেন্ট লাগে না৷ এরপর শুরু হয়ে যায় ধবস্তাধস্তি৷ কলকাতার পুলিশ  অফিসাররা সিবিআই অফিসারদের জোর করে কলকাতা  পুলিশের গাড়ীতে তুলে সেকসপীয়ার সরণী থানায়  নিয়ে আসেন৷

ইতোমধ্যে  বিশাল পুলিশ বাহিনী সিজিও কমপ্লেক্স ও নিজাম প্যালেসের সিবিআই অফিসও  ঘিরে  ফেলেন৷

এদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজীব কুমারের বাড়ীতে  পৌঁছে যান৷ তিনি রাজ্য পুলিশের  আধিকারিকদের সঙ্গে  বৈঠক করার পর আধিকারিকদের সঙ্গে  বৈঠক করার পর সাংবাদিকদের সামনে কেন্দ্রের  বিজেপি  সরকারের প্রতিহিংসার  রাজনীতির তীব্র সমালোচনা করেন ও ‘সংবিধান  বাঁচাতে ও দেশের  একতার  স্বার্থে মেট্রো চ্যানেলে ধরণায় বসার কথাও ঘোষণা করেন৷ তড়িঘড়ি মেট্রোর, সামনে ধরণা মঞ্চও তৈরী হয়ে যায়৷ ‘সেভ ইন্ডিয়া’ দাবী নিয়ে  তিনি কেন্দ্রের  বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেন৷

এদিকে গোটা রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের কর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষোভ আন্দোলন  শুরু করেন ও বিভিন্নস্থানে  রাস্তা অবরোধ বিশেষ করে ট্রেন অবরোধ শুরু করেন৷

বিভিন্ন রাজ্যের বিজেপি বিরোধী নেতৃবৃন্দ তাঁকে সমর্থন জানিয়ে কেন্দ্রের স্বৈরাচারী ও প্রতিহিংসার  রাজনীতির বিরুদ্ধে সরব হন ও এর প্রতিবাদে ৮দিন ধরে  ধর্র্ণ চালিয়ে  যাওয়ার  কথা ঘোষণা করেন৷  ধরণা মঞ্চে যোগ  দিতে ছুটে আসেন তামিলনাড়ুর কাণিমোঝি, বিহারের তেজস্বী যাদব প্রমুখ৷ অন্ধ্রপ্রদেশের  মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুও কলকাতায়  ধরণায় যোগ  দিতে আসেন৷

এদিকে সুপ্রিমকোর্টে সিবিআই-এর  তদন্তে রাজীব কুমারের অসহযোগিতার বিরুদ্ধে আনা মামলায়  শীর্ষ আদালত  রায় দেন, কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে  আপাততঃ গ্রেফতার  করা যাবে না বা তার ওপর দমনমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া যাবে না৷ কোনও  নিরপেক্ষ স্থানে, দিল্লি ও কলকাতা ছাড়া, রাজীব কুমারকে সিবি আই-এর সামনে হাজিরা দিয়ে তদন্ত  মামলায় সহযোগিতা করতে হবে৷  পরে সুপ্রিমকোর্ট  এজন্যে  শিলংকে  উপযুক্ত  স্থান বলেও নির্বাচন করে দেন৷

সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সিবিআই ও মমতা উভয়পক্ষই তাঁদের জয় বলে দাবী করেন৷

চন্দ্রবাবু  নাইডু সহ বিভিন্ন রাজ্যের  অন্যান্য নেতৃছন্দের অনুরোধে ৪৬ ঘন্টা পরে মমতা ৫ই ফেব্রুয়ারী ধরণা প্রত্যাহার করে নেন৷

তবে এই ঘটনাকে অবশ্যই কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি অশনি সংকেত বলা যায়৷