সরকারের আর্থিক সংস্থাগুলি বিক্রি করার পরিকল্পনা দেশের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে দাঁড়াবে

লেখক
নিরপেক্ষ

ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে অত্যন্ত সংকটের মধ্য দিয়েই  চলতে হচ্ছে নানা কারণে৷ প্রধান কারণ হলো দেশের নাগরিকদের অশিক্ষা, অসচেতনতা, দরিদ্রতা৷  দেশটি বিরাট কিন্তু  একটা বয়সে তাঁরা নাগরিক অধিকার পান অর্থাৎ একটা বোট দানের অধিকার৷ আগে দলগুলো জোর করে তাঁদের ডেকে এনে বোট দান করাতো৷ বর্ত্তমানে তাঁদের মধ্যে কিছুটা সচেতনতাবোধ জেগেছে মাত্র৷ কিন্তু দলগুলির  কারচুপী ও নির্বাচন পরিচালন কর্তৃপক্ষের নৈতিক দৃঢ়তার অভাবে অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনে প্রকৃত জনমত প্রতিফলিত হয় না৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলির কারচুপী ও যাঁরা বোটদানের ব্যবস্থা করেন তাঁদের মধ্যেও অনেক ত্রুটি থাকায় বোট দান পর্বটা বানচাল হয় আর বোট এমনভাবে পড়ে তাতে প্রকৃত প্রার্থীগণ যাঁরা উপযুক্ত তাঁরা সমর্থন না পাওয়াতে বিজয়ী হতে পারেন না৷ যারা কৌশল জানে তারাই জয়ী হয়ে শাসন ক্ষমতাকে দলীয় স্বার্থে অপব্যবহার করে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার গোটা দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করতে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছে এর বিরুদ্ধে সারাদেশে জনগণ ও বিরোধী পক্ষ কিছুটা সচেতন হয়ে তার প্রতিবাদ করছে ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে৷ বর্ত্তমানে ২০২১ এতে কয়েকটা রাজ্যে বোট হয় সেখানে বিশেষ করে পশ্চিবঙ্গকে নিজেদের কব্জায় করতে করোনাকালে ৮ দফা বোট করে ও কোটি কোটি টাকা খরচ করে ‘আর তৃণমূল কংগ্রেস দলে প্রচণ্ড ভাঙ্গন ধরিয়ে অনেকমন্ত্রীও এম.এল.এ ও সদস্যদের বিজেপিতে নিয়ে এসে নির্বাচন করেও সফল হয়নি৷ তৃণমূল দল তৃতীয়বার সরকার গড়ে ও বিজেপি হেরে যায়৷ তাতে ভারতে রাজনীতির জগতে একটা জাগরণ ঘটে৷

আর গত দেড় বছরে ভারতের আর্থিক অবস্থা তলানীতে গিয়ে পড়ে কেন্দ্র সরকার প্রায় দেউলিয়া হয়ে রাষ্ট্রায়ত্ব এল.আই.সির ব্যাঙ্ক বিক্রি করার ফতেয়া জারি করে বসেছে৷ এটা বিজেপির কেন্দ্রীয় সরকারের চরম প্রশাসনিক ব্যর্থতা৷ এটাকে জনগণ ও বিরোধী পক্ষ একেবারে মেনে নিতে পারছেন না৷

দেশে এমন চরম আর্থিক সংকট উপস্থিত যার দরুন রাজস্ব আয় প্রায় বন্ধ, দারুণ প্রাকৃতিক বিপর্য্যয়ে দেশ-এর বেশ কয়েকটি রাজ্যে দারুণ ক্ষতি হয়েছে, করোনায় ভ্যাকসিন সরবরাহের গতি শ্লথ৷ মানুস খুবই ক্ষুব্ধ৷ সরকারের তাড়া হুড়ো বেশী আগেই বলেছি এলআইসি ও ভারত পেট্রোলিয়াম নিয়ে৷ এল আই সিকে নিয়ে যাওয়া হবে শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ধীরে ধীরে বিকেন্দ্রীকরণের দিকে৷ এইসব বিক্রি করে ১লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়বেন৷ ধীরে ধীরে নাকি  সব ব্যাঙ্কই বেসরকারীকরণ হয়ে যাবে৷ ভারত পেট্রোলিয়াম বিক্রি করে ৬০ হাজার কোটি টাকা সরকারের হাতে আসবে৷ বেচারামের এছাড়া অন্যগতি নেই৷ বিজেপির রাজ্যসভার এমপি সুব্রমন্যম স্বামী কটাক্ষ করেই বলেছেন যে আর কয়েকমাসের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্র ঘোষণা করছেন৷ সেটা অর্জন করতে হলে ১৪ শতাংশ জি.ডি.পি বৃদ্ধি হার হতে হবে৷ এটাকি সম্ভব! অর্থনীতির হাল থেকে স্পষ্ট---সম্ভব নয়৷

আমরা তো প্রথম থেকেই দেখে আসছি যে সরকারই এসেছে৷ দেশকে ঋণের জালে জড়িয়ে বিদায় হয়েছে৷ এরা তো পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাটাই বন্ধ করে দিয়েছে৷ দেশের গরীব মানুষের উপর ট্যাক্স চাপিয়ে শাসনের নামে মজা মেরেই বিদায় নেবে৷ কোথাও কিছু নেই এই সরকার নোতুন লোকসভা গড়ায় হাত দিয়েছে৷ মানুষের বাঁচার দিকে নজরই নেই৷ ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বেসরকারী ব্যাঙ্কগুলো ডুবতে বসেছিল বলে৷ সেটা দেশের ভালোর জন্য৷ এরা এসে ধনীদের হাতে সব তুলে দিয়ে রাজস্ব আদায় করে দেশ-এর শাসক হয়ে দেশটাকে সেই অতীতের বাদশাহদের মত শাসনের নামে শোষণ করে৷ মানুষের চোখের জল ফেলতে এরা ওস্তাদ৷

ভারত ত্যাগ, আদর্শ ও অধ্যাত্মবাদের মহান দেশ৷ এটা আমেরিকা নয়৷ এদেশের তপোবনের মুনি ঋষিগণ জীবনাদর্শের কথা বলে গেছেন৷ তার মূলকথা হলো আত্মোমোক্ষার্থং জগৎ দ্বিধায় চ৷ মানুষ আধ্যাত্মিক জীব তাঁকে আত্মীক সাধনায় নিজেকে জানতে হবে আর জগতের কল্যাণ করতে হবে৷ কই যারা শাসনে এলো তারা সে কথাতো একবারও উচ্চারণ করলো না৷ সাম্প্রদায়িকতাকেই বড়ো করে দেখা হয়৷ মানবতাকে চরমভাবে অবহেলা করা হয়৷ ধনীদের তোষণ করা আর সেই ঈশ্বরের সন্তানদের শোষণ করা হয় যতটা পারা যায়৷ এ কেমন গণতন্ত্র? সরকার হলো জনগণের সেবক তাদের শোষক নয় এই সত্যটা এখনও রাজনৈতিক দলগুলি উপলদ্ধি করলো না৷ এখানে দলবাজিটা যেন মুখ্য আর জনসেবাই হলো গৌন৷ নেতারা সবাই গরীব ঘরের কিন্তু অনেকেরই কোটি কোটি টাকা ব্যাঙ্কে৷ এর পরিবর্ত্তন হওয়াটা জরুরী৷

মানবতার বাণী ভারতবর্ষের তপোবণের ঋষিমুনিগণ অমৃতের সন্তানদের উদ্দেশ্য ঘোষণা করে গেছেন৷ এদেশে মহান অশোকের দেশ৷ এদেশ সেই মহান সদাশিবের, শ্রীকৃষ্ণের দেশ, এদেশ মহান শ্রী চৈতন্যের দেশ, এদেশ পরবর্তীকালের অনেক মহামানবের দেশ৷ এ দেশের একি দুর্দশা! তাই সরকারকে অবশ্যই ভাবনা চিন্তার পরিবর্ত্তন ঘটাতে হবে৷ কথায় কথায় স্বামী বিবেকানন্দের কথা তো নেতারা উচ্চারণ করে থাকেন কিন্তু তার সেই মহান বাণী--- জীবসেবাই  হলো  শিবসেবা  সেটাকে কি মানা হয়? না৷

অন্যকিছু মনে আর মুখে শুধু লোক ঠকানো  বাণী! তাই সরকারকে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে৷ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের দিকে নজর দেওয়াটা জরুরী৷ নাগরিকগণ কাজ পেলে কলকারখানায় উৎপাদন বাড়লে তবে তো সরকারের আয় বাড়বে৷   দেশে--- দেড় বছর রোগে মানুষ অকালে মারা যাচ্ছে ওষুধেপ অভাবে৷ সবই যখন এলোমেলো তখন সবাইকে  ডেকে কেমন করে বাঁচা যাবে তার সন্ধান তো শাসককে  খুঁজতে হবে৷   তা না করে সবই বেচে দেবার কথা ভাবাটাতো বুদ্ধিমানের কাজ কী খুবই দুঃখের  কথা লকডাউনে ঘরবন্দী মানুষ উৎপাদন বন্ধ তখন এমন পথ খুঁজতে হবে যাতে এই চরম বিপদে সবাই এক হয়ে বাঁচতে পারে৷ এদেশের মানুষ অতিশান্ত ও সৎ৷ তারাই তো ত্যাগ নিষ্ঠার দ্বারাই দেশকে  বাঁচাবেন৷ এই দুর্দিনে যাঁরা টাকার পাহাড়ে বসে আছেন তাঁরাই তো কিছু ত্যাগ সেবা করে দেশকে বাঁচাতে পারেন৷ সরকার বাজারে জনগণের কাছে প্রয়োজনে অন্য পথ খুঁজে সুরাহা করুন৷ অবশ্যই পথ একটা পাওয়া যাবে৷ বিপদের দিনে সরকার দায় এড়িয়ে গেলে দেশের ক্ষতি হবে৷ এই চরম পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থায় রাজ্যসরকারগুলি রাজ্যগুলিকে স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে নিজ নিজ রাজ্যে ব্লকভিত্তিক সমবায় আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করে আর্থিক স্বচ্ছলতাকে বাড়িয়ে তোলায় ব্যবস্থা করুক৷ প্রয়োজনে রাজ্য সরকার বেসরকারী ব্যাঙ্ক খোলার চিন্তা করুক৷ ব্যাঙ্ককে রাজ্যসরকারের আর্থিক উন্নয়ণে প্রয়োজনে কাজে লাগান৷ কেন্দ্র সরকারের উপর নির্ভর না করে সব বিরোধী দল এক হয়ে এমন কিছু করুক যাতে মহান দেশ নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে ও পৃথিবীকে দেখাতে পারে ভারত সারা বিশ্বকে নোতুন করে বাঁচার পথ দেখাতে পারে মানবতাবাদের পথ ধরেই৷