ত্রিপুরায় তৃণমূল ফোবিয়া

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

অতিমারী যখন গোটা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল সেই সময় অতিমারীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বঙ্গজয়ের নেশায়পশ্চিমবঙ্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সারাদেশের বিজেপির নেতা মন্ত্রীরা৷ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবও সেই দলে ছিলেন৷ তখন কিন্তু  কারো মনে অতিমারী আতঙ্ক ছিল না৷ যদিও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে সেই সময় পশ্চিমবঙ্গে কোভিড সংক্রমণ মহামারীতে রূপ নেওয়ার অন্যতম কারণ ছিল ম্যারাথন নির্বাচন৷

তবে বিজেপির বঙ্গ জয়ের আশায় ছাই ঢেলে আরও বেশী ভোট ও আসন পেয়ে তৃতীয়বারের জন্যে পশ্চিমবঙ্গ দখলে রাখে তৃণমূল৷ বিজেপির প্রচারে সব থেকে বেশী বিদ্ধ হয়েছিলেন পিসি-ভাইপো (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়)৷ তবে পশ্চিমবাঙলার মানুষ যে সেই প্রচারকে আমল দেয়নি৷ বরং পিসি ভাইপোকেই বেছে নিয়েছে নির্বাচনী ফলাফলে তা স্পষ্ট৷ সেইসঙ্গে গোটা দেশবাসীর কাছে বার্র্ত গেছে বিজেপি আর অপ্রতিরোধ্য নয়৷ নরেন্দ্র মোদিকেও হারানো যায় দেশবাসী এখন সেটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে৷ যা বিজেপি নেতা মন্ত্রীদের মনে আতঙ্ক ধরিয়েছে৷

তৃণমূল বঙ্গ দখলে রেখে আর এক বাঙালী অধ্যুষিত রাজ্য ত্রিপুরার দিকে নজর দিয়েছে৷ ইতিমধ্যে তৃণমূলের বঙ্গের নেতা নেত্রীরাও ত্রিপুরায় আসা যাওয়া শুরু করেছেন৷ ত্রিপুরার বিজেপি বিরোধী মানুষ এতদিন ছন্নছাড়া হয়ে ছিল৷ পশ্চিমবঙ্গের নির্র্বচন পরবর্তী পরিস্থিতিতে ত্রিপুরার মানুস এখন তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছে৷ পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জীকে ডায়মণ্ডহারবার থেকে সারা দেশের নেতা বানিয়ে দিয়েছে বিজেপি৷ এই পরিস্থিতিতে অভিষেক ব্যানার্জী ত্রিপুরায় পা রাখতেই বিজেপি বিরোধী জনতা নতুন করে জোট বাঁধছে তৃণমূলের ছত্রছায়ায়৷ ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতা তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন৷ এই অবস্থায় ত্রিপুরার বিজেপি নেতা মন্ত্রীরা তৃণমূল আতঙ্কে সংক্রমিত হয়ে পড়েছে৷ কোনমতেই তারা অভিষেক ব্যানার্জীকে এক ইঞ্চি জমি ছাড়তে নারাজ৷ তাই সবরকম গণতান্ত্রিক রীতি নীতিকে উপেক্ষা করে তৃণমূলকে রুখতে অগণতান্ত্রিক দাওয়াই কেই হাতিয়ার করছে বিজেপি৷ এক বিধায়ক তো হুমকি দিয়েছেন তালিবানী কায়দায় তৃণমূলকে রুখবে বলে৷ ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার তৃণমূলের পশ্চিমবঙ্গের নেতা মন্ত্রীরা শাসকদলের ক্যাডারদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন৷ পুলিশ প্রশাসনও নানা মামলায় জড়িয়ে হেনস্থা করছেন৷ এই অবস্থায় গত ২২ তারিখে অভিষেক ব্যানার্জী ত্রিপুরায় মহামিছিলের ডাক দিয়েছিলেন৷

বিপ্লব দেবের প্রশাসন অতিমারীর অজুহাত দেখিয়ে সেই মিছিলের অনুমতি দেয়নি৷ তৃণমূল উচ্চআদালতে গেলে আদালতও প্রশাসনের বক্তব্য মেনে মিছিলের অনুমতি দেয়নি৷

এই পরিস্থিতিতে বিরোধী নেতাদের ও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত তৃণমূলকে ভয় পেয়েছে বিপ্লব দেবের সরকার৷ এমনিতেই যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিজেপি ত্রিপুরায় ক্ষমতায় এসেছিল তার কোনো প্রতিশ্রুতি এখনো পর্যন্ত পালন করেনি৷  বিরোধীদের ওপরও নানা অত্যাচার  চলছে৷ এইসব কারণে জনগণের একটা বড় অংশ এখন বিজেপির বিরুদ্ধে৷ যে উপজাতিদের উপর ভর করে বিপ্লব দেব ক্ষমতায় এসেছিলেন সেই উপজাতিরাও বিজেপি থেকে মুখ ফিরিয়েছে৷ এ.ডি.সি নির্বাচনে বিজেপি পর্যদুস্ত হয়েছে৷ প্রদ্যুত দেব বর্মনের নেতৃত্বে  নতুন দল তিপ্রামথা এডিসির ক্ষমতা দখল করেছে৷

 এখন যদি  তৃণমূল ত্রিপুরায় ঘাঁটি গাড়তে পারে তবে  ২০২৩ শে নির্বাচনে বিজেপির ফিরে আসা মুসকিল হবে৷ দলের মধ্যে একটা বড় অংশ বিপ্লব দেবের বিরুদ্ধে চলে গেছে৷ পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে  নির্বাচনের পরে দল বদলের  উল্টোস্রোত শুরু হয়েছে ত্রিপুরাতেও সেই আশঙ্কা বিজেপির মধ্যে আছে৷ ইতিমধ্যে দল বদলে বিজেপিতে যাওয়া বেশকিছু নেতা তলে তলে তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন৷

তাই ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী এখন ত্রিসংকটে পড়েছেন৷ জনগণের আশাপূরণ না হওয়ার ক্ষোভ, দলের বিক্ষুদ্ধ গোষ্ঠী, আবার তৃণমূলের ত্রিপুরার মাটিতে ঘাঁটি গাড়ার চেষ্টা৷ ইতিমধ্যে কংগ্রেসের বরাক বঙ্গের জনপ্রিয় নেত্রী সুস্মিতা দেব তৃণমূলে যোগ দিয়ে ত্রিপুরার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন অভিষেকের সঙ্গে৷ সব মিলিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী এখন তৃণমূল আতঙ্কে আতঙ্কিত ৷