ঘোড়া রোগ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

এক জমিদার সাহেবের এক ভাইপো (ভ্রাতৃপুত্র ঞ্ছ(ভ্রাত্তিপুুত্ত ঞ্ছভাইপু ঞ্ছভাইপুতা ঞ্ছভাইপো ঃ ভ্রাতৃজ ঞ্ছভাত্তিজ ঞ্ছ ভাতিজা৷) ছিল৷ ভাইপোর নাম ছিল লোটা৷ জমিদার সাহেব বাইরের লোকেদের সামনে বনেদীয়ানা দেখাবার জন্যে ভাইপোর সঙ্গে বাংলা–উর্দু মিশ্রিত এক খিচুড়ি ভাষায় কথা বলতেন, যেমন–খাইকে পানী লাইকে যাবি না’ (খাবার পানী আনতে যাবি না)? আর যখন এদিক ওদিক চেয়ে দেখতেন বাইরের কেউ নেই তখন ভাইপোর সঙ্গে বাংলা ভাষায় কথাবার্তা কইতেন৷

একবার জমিদার সাহেব পশ্চিম দেশের লক্ষ্ণৌয়ের দিকে গেছলেন৷ ওখানে গিয়ে তিনি উর্দু ভাষা ও উর্দু চালচলন কিছুটা শিখে এসেছিলেন৷ আসবার সময় ওখানকার নবাবকে বাঙলায় আসার দাবাৎ জানিয়েও এসেছিলেন৷ ভেবেছিলেন নবাব বাহাদুর আর বাঙলায় আসবেন না, দাবাৎ জানিয়ে রাখি৷ কিন্তু শিরে কইল সর্পাঘাত, কোথায় ৰাঁধবি তাগা৷ কিছুদিন পর সেখানকার নবাব সাহেব চিঠি লিখলেন যে তিনি বাঙলায় আসছেন৷

জমিদার সাহেব তো মহা ফ্যাসাদে পড়লেন, তিনি তাঁর ভাইপো লোটাকে ডেকে বললেন–দ্যাখ লোটা, আমার তো কটি–বাত অইসে৷ আমি ইষ্টিশনে যাইবার পারমু না৷ তুমি নবাবেরে অভ্যর্থনা কইর্যা আইস৷

লোটা বললে–চাচা (শব্দটি হিন্দোস্তানী৷ প্রকৃত শব্দটি ‘চচা’ বাংলায় ভুল করে ‘চাচা’ বলা হয়৷ ‘কাকা’ শব্দটি ফারসী৷ খাঁটি বাংলা শব্দ ‘খুড়া’ ঞ্ছখুড়ো৷) কইত্যাসেন যহন যামু৷ যামু তো নিশ্চয় কিন্তু আমি তো উর্দু ভাষা জানিনা৷ কী করমু কইআ দ্যান৷

জমিদার বললেন–উর্দু শিখবার লাগব না৷ বাংলার সাথে দু’ চারিডা মঁৈ হঁৈ হুঁ লাগাইয়া দিবা নি, তাতেই উর্দু অইয়া জাইব৷

লোটা বললে–হ বুস্সি৷ তবে চাচা আমি তো উর্দু দ্যাশের আদব–কায়দা জানি না, আমারে শিকাইয়া দ্যান৷

জমিদার সাহেব বললেন–যার সাথে কথা কবা নি তারে বঢ় করবা আর নিজেরে সোট করবা৷ যদি তোমারে জিগায়, তোমার কয়ডা নবাবজাদা আসে, এ্যার অর্থ অইল নবাব তোমারে নবাব কইত্যাসেন৷ উত্তরে শরাফৎ কইর্যা কবানি, জনাব গোলাম কা তিন হারামজাদা হ্যায়৷ বুজহস্?

লোটা বললে–হ বুসসি৷

লোটা ইষ্টিশনে গেল৷ নবাব সাহেবের নাম মালেক–উল–মুল নবাব উশ্–শাক–ঈশাখ বাহাদুর৷

লোটা এ–কামরা ও–কামরা উঁকিঝুকি মেরে দেখছে৷ একটা কামরায় সে দেখলে জমকালো পোষাকে একজন ভদ্রলোক বসে আছেন৷ লোটা বুঝে নিলে ইনিই সেই নবাব বাহাদুর৷ লোটা যখন তাঁর সম্মানে জিজ্ঞাসা করলে–‘‘তুম্ নবাব বাহাদুর হ্যায়?’’

নবাব বাহাদুর বিনয় করে বললেন–নহী জনাব, ম্যাঁয় তো নবাব বাহাদুর নহী হুঁ৷

লোটা তখন বললে, তব্ তুম্ কৌন্ হ্যায়?

নবাব বললেন, ম্যাঁয় খাক্ হুঁ, ম্যাঁয় দুনিয়াকা খাক্ হুঁ৷ ম্যাঁয় সবোঁকে কদ্মোঁকা খাক্ হুঁ, ম্যাঁয় খাক্, ম্যাঁয় খাক্, মেরা নাম ঈশাক৷

লোটা নবাবের বিনয়ে অভিভূত হয়ে গেল৷ এত ৰড় একজন নবাব তিনি কি না বিনয় করে নিজেকে খাকের (ছাই) সঙ্গে তুলনা করলেন আর কৌশলে নিজের নামটা বলে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনিই নবাব সাহেব৷ শুধু তাই নয়, নবাবের কী কবিত্ব শক্তি খাক্ আর ঈশাক–কেমন কবিতার মিল আচ্ছা, আমিও দেখিয়ে দোব যে উর্দু ভাষা উর্দু শরাফতে নবাবের চেয়ে আমিও পিছিয়ে নেই৷

নবাব লোটাকে শুধোলেন–আপ্ কৌন্ হেঁ? আপ্ জমীঁনদার সাহেব কা ভাতিজা হেঁ?

লোটা নবাবের কাছ থেকে শেখা কায়দায় বললে–নহীঁ নহীঁ, হম্ কিসী জমীন্দার কা ভাতিজা নহীঁ হেঁ৷

নবাব শুধোলেন–তব্ আপ্ কৌন হেঁ?

লোটা বললে–ম্যাঁয় চোট্টা হুঁ৷ ম্যাঁয় দুঁনিয়াকা চোট্টা হুঁ, ম্যাঁয় আপকা কদ্মোঁকা চোট্টা হুঁ৷ ম্যাঁয় চোট্টা হুঁ৷ ম্যাঁয় চোট্টা–ম্যাঁয় চোট্টা, মেরা নাম লোটা৷

নবাব তখন বুঝে নিলেন সত্যিই জমিদার সাহেব আর তার পরিবার একেবারে খানদানী উর্দুভাষী৷