ইতিহাসে উপেক্ষিতা তোসিকো

 

স্বাধীনতা সংগ্রামে বাঙলার মেয়েদের অবদান আমরা কম বেশি ইতিহাসে পড়ি৷ কিন্তু ভারতবর্ষ থেকে বহু দূরে জাপানের একটি মেয়ের অবদান ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে কম নয়৷

বিপ্লবী মহানায়ক  রাসবিহারী বসু৷  ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনন্য যোদ্ধা৷ সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ তার মাথার দাম ধার্য করেছে তৎকালীন সময় এক লক্ষ টাকা৷ তাই দেশে থাকা তাঁর পক্ষে আর নিরাপদ নয়৷

১২ই মে ১৯১৫ সাল৷ খিদিরপুর ডকে ১২ নং জেটি থেকে জাপানী জাহাজ ‘সানু কী মারু’-তে করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মীয় ও একান্ত সচিব পি.এন.ঠাকুর পরিচয় দিয়ে  জন্মভূমিকে বিদায় জানিয়ে সিঙ্গাপুর, হংকং হয়ে ৫ই জুন,১৯১৫ জাপানে পৌঁছোলেন ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের অনন্য যোদ্ধা রাসবিহারী বসু৷ ব্রিটিশ পুলিশের জানতে দেরী হলো না৷ অতএব জাপান সরকারকে চাপ দেওয়া হল রাসবিহারীকে বহিষ্কার করতে৷ জাপান সরকারও জাপান ত্যাগ করার নোটিশ জারী করলেন৷ পাশে দাঁড়ালেন জাপানের বিরোধী দলনেতা তোয়ামা৷ তাঁর প্রচেষ্টায় রাসবিহারী আশ্রয় পেলেন এক রুটি কারখানার মালিক মিঃ সোমার বাড়িতে৷ কিন্তু জাপান পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে ক’দিন থাকবে৷ এগিয়ে এলেন মিঃ সোমা ও শ্রীমতি সোমা৷ তাঁদের বড়ো মেয়ে তোসিকোর সঙ্গে রাসবিহারীর বিবাহ দেবে৷ মায়ের কথায় জীবনের ঝঁুকি নিয়েও এক অজ্ঞাত, অপরিচিত, পলাতক বিপ্লবীকে বিয়ে করতে রাজি হলেন তোসিকো৷ শুরু হলো নতুন জীবন, জাপানী পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে বার বার বাসা বদল, জীবনের ঝুঁকি৷ রাসবিহারীর

 সঙ্গে সবকিছু হাসিমুখে মেনে নিলেন তোসিকো৷ অবশেষে ১৯২৩ সালে জাপানী নাগরিকের স্বীকৃতি পেলেন রাসবিহারী৷ এবার হয়তো শান্তি ভাবলেন রাসবিহারী৷ কিন্তু ঘরের মঙ্গল শঙ্খ বিপ্লবীর জন্যে নয়৷ ১৯২৫ সালের ৪ঠা মার্চ এক পুত্র ও এক কন্যা রেখে ইহলোক ত্যাগ করলেন তোসিকো৷ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক বিপ্লবীকে রক্ষা করতে যে ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন একটি বিদেশিনী ইতিহাসে তাঁর তুলনা কোথায়! কিন্তু তাঁর কথা স্বাধীন দেশের ক’জনই বা জানে!