কালো বাড়ি

লেখক
কৃষ্ণা হোমরায়

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই শঙ্খর ফোন৷

–মিস্, তুমি কি করছো?

–আমি এই তো সবে ঘুম থেকে উঠলাম৷

–এত দেরীতে তুমি ঘুম থেকে ওঠো?

–না, বাবা, আজতো স্কুল ছুটি৷ তোমাদের পড়াতে যাব না৷ তাই একটু দেরী করে উঠলাম৷ এবার বলো তো–তুমি কেন এতো সকালে ফোন করলে? কোন দরকার আছে?

–হ্যাঁ, আমি একটা ছবি এঁকেছি৷ তোমায় দেবো৷

–বেশ তো৷ কাল স্কুকলে দিয়ে দিও৷

–না না, কাল তো আমি স্কুলে যাবো না৷ তুমি একটু কষ্ট করে আমাদের বাড়িতে আসবে৷ তাহলে তোমার হাতেই ছবিটা দিয়ে দেবো৷ এসো না মিস৷ প্লি–জ একটুখানির জন্যে এসো আমাদের বাড়ি৷

–ঠিক আছে দেখছি৷

ফোনটা রাখার পর আমার মনে হলো, শঙ্খ বেশ কিছুদিন ধরে স্কুলে আসছে না৷ বাড়ি থেকে জানিয়েছে শরীর ভালো নেই৷ আণ্ডার মেডিকেল ট্রিটমেণ্ট৷

ব্যাপারটা ওই পর্যন্ত মাথায় রেখেই আমি ক্লাসের অন্যান্য বাচ্চাদের দিকে নজর দিচ্ছিলাম৷ শঙ্খর ব্যাপারটা নিয়ে আলাদা করে ভাবিনি কিছু৷ আজ শঙ্খর ফোন পেয়ে মনে হলো খুব বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি আমি৷ শঙ্খ হাজার হলেও আমার ক্লাসের ছাত্র৷ হোক নার্সারির ছাত্র তবু তো আমার খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল–কেন শঙ্খ এতদিন স্কুলে আসেনি৷ কি অসুখ হয়েছে৷ আঃ হাঃ এতো বড়ো ভুল আমি করলাম কি করে৷

না, আজ একবার শঙ্খর বাড়িতে যেতেই হবে৷

দুপুরের দিকে খাওয়া দাওয়া সেরে ঠিক তিনটে নাগাদ রওনা হলাম যাদবপুরের দিকে৷ গল্ফ গ্রীণে শঙ্খদের বাড়ি৷ বাবা–মা’র একমাত্র ছেলে শঙ্খ৷ ভারি মিষ্টি দেখতে৷ একেবারে ধপধপে গাবলু গাবলু চেহারা নয়৷ শ্যামলা, দোহারা, একটু লম্বাটে গোছের গড়ন৷ চোখ দুটো ভারি সুন্দর৷ এককথায় শঙ্খ আর পাঁচটা সাধারণের থেকে আলাদা৷ দশজনের মধ্যে মিশে থাকলেও আগে নজরে পড়ে যায়৷

বিকেলের রোদ তখন তেরছাভাবে গল্ফগ্রীণের রাস্তায় পড়েছে৷ শঙ্খদের বাড়িটা যেদিকে সেদিকে রোদের তাপ কমে এসেছে৷ হালকা হাওয়া বইছে৷ সন্ধ্যের সাঁঝবাতি তখন আকাশের গায়ে জ্বলে উঠেছে৷

শঙ্খদের ঘরটা দোতলায়৷ সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠতেই শঙ্খর মায়ের সঙ্গে দেখা হলো৷ উষ্ণতায় ভরা অভিনন্দনে বলে উঠলেন–শঙ্খ, দেখো মিস্ এসেছেন৷ শঙ্খ ঘরের ভেতর থেকে উত্তর দিলো মিস্ তুমি লাল পরদাটা সরিয়ে আমার ঘরে এসো৷ আমি এইঘরে আছি৷

লাল পরদা সরিয়ে শঙ্খর বিছানায় বসলাম৷ শঙ্খ তখনো মাথা নীচু করে রঙ লাগিয়ে চলেছে৷ মুখ না তুলেই বললো মিস্ তুমি একটু বসো, আমি বাড়িটা কমপ্লিট করে নি৷

শঙ্খর খাতার দিকে তাকিয়ে দেখলাম–ও একটা বাড়ি এঁকে কালো রঙ করছে৷ বাড়িটার সামনে ছোট্ট গুড়ি–পথ৷ বাদামী রঙের বেড়া দিয়ে পুরো বাড়িটায় বাউণ্ডারি ওয়াল করেছে৷ বাড়ির পিছনে সবুজ রঙের গাছ৷ সম্ভবত তাল গাছ এঁকেছে৷ বাড়িটায় জানলা দরজায় সাদা রঙ৷

আমি অবাক হয়ে শঙ্খকে জিজ্ঞেস করলাম৷ তুমি কালো রঙের বাড়ি এঁকেছো কেন?

শঙ্খ জবাব দিল–মিস্ জানো, এই কালো বাড়িটায় আমি থাাকবো৷

আমি বুঝলাম ওর শিশুমনে যে রঙ লেগেছে ও তাই দিয়ে বাড়িটা রঙ করেছে৷ মুখে