কোভিড-১৯ ভাইরাস ও তার প্রতিকার

লেখক
প্রভাত খাঁ

কবি সত্যেন্দ্রনাথ বলেন---

‘‘মন্বন্তরে মরিনি আমরা

‘মারি নিয়ে ঘর করি

বিধির আশিসে বাঁচিয়ে গিয়াছি

অমৃতের টিকাপরি৷

আমাদের ভুলে  গেলে  চলবে না যে দেহের ভিতরে ও বাহিরে বেঁচে থাকার জন্যে সদা সর্বদা সংগ্রাম করেই যেতে হয়৷ সর্বদাই নানা রোগের জীবানু বিজানু আমাদের শরীরে আক্রমণ করছে আর আমাদের প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে তাদের সঙ্গে লড়াই করে চলতে হচ্ছে৷ যারা প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে তারা বেঁচে থাক তাই সংগ্রাম হলো জীবনেরই ধর্ম৷

পৃথিবীতে নানা ধরণের রোগের জীবানু ও বিজানুর সৃষ্টি হয়েছে পরিবেশ-এর দূষণের জন্য৷ সেই রোগে  জীবজন্তু গাছপালা ধবংস হয়েছে৷ মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব৷ তাঁরা সচেতন হয়ে রোগ এর প্রতিষেধক উদভাবন করে রোগ দমন করেছেন৷ কতো প্রাণী ও মানুষ যে মারা গেছেন তার হিসাব নেই৷ কিন্তু সেই লড়াইয়ের শেষে মানুষেরই জয় হয়েছে৷ বিভিন্ন প্রতিষেধক (ঔষধ) উদভাবন করে মানুষ নিজেদের ও গাছপালা প্রাণীদের  বাঁচিয়েছেন৷ কলেরা, হাম, বসন্ত,যক্ষ্মার মতো রোগে একদিন গ্রামকে গ্রাম উজাড় হয়ে গেছে৷ কিন্তু আজ সেই সব রোগ ঔষধ এর উদভাবনে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে৷

হঠাৎ দেখা গেল এক নোতুন কোভিড ভাইরাস পৃথিবীতে এসেছে যার নাম করোনা ভাইরাস৷ এই রোগ নাকি মানুষের দ্বারা বাহিত হয়৷ তাই সারা পৃথিবীর মানব সমাজ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন৷ সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানী ও ডাক্তারগণ এই রোগের ভাইরাসকে চিহ্ণিত করছেন ও প্রতিষেধক ওষুধ উদভাবনে ব্রতী৷ কোন কোন দেশ ভ্যাকসিন ও ঔষধ উদভাবন করেছেন ও করার পথে৷ এই করোনা নামটি দিয়েছেন ইতালীর বিজ্ঞানীরা৷   করোনা ইংরেজী শব্দ৷ এর  বাংলা  অর্থ হলো সূর্য বা চন্দ্রের চারিপাশের উজ্জ্বল বৃত্ত বিশেষ৷ কিন্তু এই ভাইরাস মূলতঃ বয়স্ক ও শিশুদের যাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের আক্রমণ করে তাদের হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসকে অচল করে তোলে৷ শ্লেষ্মা বৃদ্ধিকারক৷ তাই  নাক, মুখ মাস্ক দিয়ে ঢাকতে হয় ও দূরত্ব বজায় রেখে চলতে ফিরতে হয়৷ সর্দি, কাশী, জ্বর হলো এর লক্ষ্মণ৷  চিকিৎসকগণ সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার নির্দেশ দিয়েছেন৷ অনেকে বলেন এই রোগ বাহিরের দেশ থেকে ছড়িয়েছে৷ পরিষ্কার পরিছন্ন থাকা শিশু ও বয়স্কদের ঘরে থাকার নির্দেশ বিশেষ করে দেওয়া হয়েছে৷ তবে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে দেশে লক্‌ডাউন’’ ঘোষণা করা হয়েছে৷ সব যোগাযোগ বন্ধ ছিল প্রায় এক বছর৷ দোকানপাঠ, লোকজমায়েত, একেবারে কম করার নির্দেশ দেওয়া  হয়েছে৷ দূরত্ব বজায় রেখে চলার নির্দেশকে কঠোরভাবে পালনের নির্দেশ এখনও রয়েছে৷ দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন৷ গত ২৪শে মার্চে ২০২০ থেকে দেশে লকডাউন চলেছে৷  এই রোগের জন্যে জোন ভাগ করা হয়েছিল৷ রেড জোন, ইয়োলো জোন, অরেঞ্চ জোন  ও গ্রীন জোন৷ পৃথিবীতে কয়েকলক্ষ নারী পুরুষও মারা গেছেন৷  অদ্যাবধি ভারতে বহু লোক- শিশু মারা গেছেন ও এর থেকেও অধিক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন৷  তবে বেশীরভাগ মানুষ সুস্থ হয়েছেন৷

করোনার হঠাৎ আক্রমণে জনবহুল দেশ ভারত এর জনগণ ঈশ্বরের করুণায় বাহিরের অনেক দেশের চেয়ে  কম আক্রান্ত ৷ কারণ এদেশের লোকসংখ্যা প্রায় ১৩০ কোটির অধিক৷ জনবহুল নগরেও পরিবেশ দূষণে রোগের আক্রমণ বেশী৷ এর প্রতিষেধক হলো বিশুদ্ধ খাওয়া ও আনন্দে থাকা আর বিশ্রাম৷ ভিটামিন এ ও সি দরকার৷ পাতি নেবুর রস, নিমপাতা, ফল ইত্যাদি খাওয়া দরকার৷ উচ্ছে, সবুজ সব্জিও খাওয়া দরকার৷ নিরামিশ আহার দরকার৷ করোনা ভাইরাস এসেছে এখন থাকবে, তাই এই রোগের সঙ্গেই ঘর করতে হবে৷ তাই  প্রত্যেক এর শরীরে ইমিয়ূনিটি রোগ প্রতিষেধক বাড়াতে হবে৷ যতটা সম্ভব বিশুদ্ধ পরিবেশ-এর মধ্যে থাকবে হবে৷ কিছুটা ব্যায়াম করা দরকার, নেশা নিয়ন্ত্রণ দরকার, হই হই ভীড়, জনসমাবেশ থেকে দূরে থাকতে হবে৷

বর্তমানে ভারতের জনগণকে সেই প্রাচীন ভারতের কথা মনে রাখতে হবে৷ পরিবেশকে দূষিত করলে চলবে না৷ বৃক্ষরোপন জরুরী, যতটা সম্ভব সুস্থ পরিবেশে থাকতে হবে৷ বিশুদ্ধ পানীয়, শুদ্ধ খাবার খেতে হবে৷ রাস্তার খাবার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে৷ দুধ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্য মানুষের প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়৷ বাদাম,ছোলার ব্যবহার বাড়ানো দরকার৷

মোদ্দাকথা বাঁচার লড়াই মানুষকে করতে হবে৷ তাই প্রত্যেককে স্বাস্থের দিকে, আহারের দিকে, স্বাস্থ্যকর পরিবেশ রক্ষার দিকে নজর দিয়ে চলতে হবে৷ তাছাড়া সরল সাদাসিধে জীবনযাপন ও উচ্চভাবনাকে মনে স্থান দিতে হবে৷ ভারত আধ্যাত্মিকতার দেশ তাই আধ্যাত্মিক ভাবনাচিন্তাকে মনে স্থান দিতে হবে বেশী করে৷ প্রাণী হত্যা ও গাছপালা ধবংস থেকে বিরত থাকলে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়৷ একথা সকলকে স্মরণে রাখতে হবে৷  বাঁচ ও অপরকে বাঁচতে দাও৷ এটাই হোক আজকের জীবনবোধ৷

পরমারাধ্য মার্গগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী এই মারাত্মক ভাইরাসের কথা বলে গেছেন৷ এতে সারা পৃথিবীতে বহু মানুষ মারা যাবেন৷ তবে ভয়ের কিছু নেই মানব সভ্যতা এগিয়েই যাবে৷