স্বাস্থ্য বিজ্ঞান

যোগ ও স্বাস্থ্য

যোগাচার্য্য

স্বাস্থ্য বলতে সাধারণতঃ মানুষের ধারণা শরীরটা সুস্থ থাকা৷ না, শুধু শরীর সুস্থ থাকলেই তাকে স্বাস্থ্য বলা হয় না৷ ধরা যাক, একজন শারীরিক ভাবে সুস্থ কিন্তু প্রচণ্ড ধরণের মানসিক বিষাদে ভুগছে৷ তাকে কী করে সুস্থ বলতে পারি কিছুদিন পর মানসিক বিষাদ থেকে তার পরিপাক ক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দেবে, ও তারপর নানান দৈহিক রোগেরও শিকার হবে৷ তাই বলছি, কেবল শারীরিক সুস্থতাকে স্বাস্থ্য বলে না৷

প্রাচীন ভারতে শল্য–চিকিৎসা, বিষ–চিকিৎসা, হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার উদ্ভব ও বিকাশ

এবার আমি মহাভারতের যুগের চিকিৎসা–পদ্ধতি সম্বন্ধে কিছু বলব৷ আয়ুর্বেদের মতে যখনই শরীরে বায়ু কিংবা পিত্ত কিংবা কফের বৃদ্ধি বা স্বল্পতা ঘটে তখনই দেহের সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়ে রোগ দেখা দেয়৷ এই সাম্যাবস্থা পুনরায় ফিরিয়ে আনার জন্যই ওষুধের প্রয়োজন হয়৷ বায়ুর স্বল্পতা ঘটলে ওষুধ দিয়ে তাকে বাড়াতে হয়৷ পিত্তের বেলায়ও একই নিয়ম৷ আয়ুর্বেদের এটাই মত৷ একই পর্যায়ভুক্ত ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী চারটা ধাতুর ওপর পরীক্ষা চালানো হয়–বায়ু, পিত্ত, কফ, ও রক্ত৷ এই দু’য়ের মধ্যে তফাৎটা হ’ল এই যে ইউনানি পদ্ধতিতে একটা অধিক ধাতুকে (রক্ত) ধরে নেওয়া হয়েছে৷ বাকি তিনটি ধাতু উভয় পদ্ধতিতেই সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ৷ উভয় পদ্ধতিতেই স্থূল

তৃণভোজী জীব, মাংসাশী জীব, মানুষ

তোমরা জান জীবজন্তুরা মুখ্যতঃ তৃণভোজী (graminivorous) ও মাংসভোজী (carnivorous) –এই দু’টি মুখ্য শাখায় বিভক্ত৷ তৃণভোজীদের দাঁতগুলো থাকে মুক্তোর মত ধবধবে শাদা ও সাজানো৷ যারা মাংসভোজী জীব তাদের দাঁতগুলি হয় খোঁচা খোঁচা, ঈষৎ হল্দেটে অথবা লালচে মেশানো হলদেটে৷ মুখের দুই পাশে থাকে মাংস কাটবার কর্ত্তন দন্ত (canine teeth)৷

সয়াবীন

সয়াবীন একটি প্রচুর স্নেহগুণ–যুক্ত উত্তম খাদ্য৷ কিন্তু এতে রয়েছে কিছুটা বুনো গন্ধ৷ এর আদি বাস চীন ও উত্তর পূর্ব এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে৷ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে একে de-odourised (দুর্গন্ধনাশক) করতে পারলে এর জনপ্রিয় হওয়ার পথে কোন বাঁধা থাকে না৷

তরমুজ

পৃথিবীতে তরমুজের অনেক প্রজাতি রয়েছে৷ ভারতীয় তরমুজের ওপর–শাদা, ওপর–সবজে ও ওপর–কালচে–তিন প্রজাতিই রয়েছে৷ সাধারণতঃ ভারতীয় তরমুজের ভেতরটা ঘোর লাল অথবা ফিকে লাল হয়ে থাকে৷ গোয়ালন্দ, আমতা, তারকেশ্বর, ক্ষর্দ্ধমান, ভাগলপুর ও সাহারাণপুরের তরমুজেরও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ আকারে সবচেয়ে বড় হয়ে থাকে ভাগলপুরী তরমুজ৷ যার ভেতরটা হলদে সেই চীনা তরমুজের আকার কিছুটা ছোট হয় কিন্তু মিষ্টত্ব খুবই বেশী৷ বর্ত্তমানে সাবেকী জাপানী বর্গীয় তরমুজ দক্ষিণ বাংলায় সমুদ্র–ঘেঁষা অঞ্চলে ভালই জন্মাচ্ছে–এর স্থানিক নাম দেওয়া হয়েছে সাগরশ্রী৷ উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা বলেন তরমুজের আদি বাসস্থান নাকি আরব দেশে৷ অনুমিত হয় জলপথে এই তরমুজ কলিঙ্গ

বয়ঃব্রণ ও তার ঔষধ

মানুষের সাধারণতঃ ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সে শরীরে বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন গ্রন্থিরসের ক্ষরণ ত্রন্দ্বন্তুব্জন্দ্বব্ধ প্সন্দ্র ড়প্সব্জপ্পপ্সুন্দ্বগ্গ্ হতে থাকে৷ এর ফলে রক্তের উষ্ণতায়, গতিতে, সংরচনায় পরিবর্তন ঘটে৷ তাতে করে মুখমণ্ডলে, বিশেষ করে কপাল ও গালে ছোট ছোট ফুসুক্ড়ি দেখা যায়৷ বাংলায় একে ব্রণ বলা হয়৷ এটা বিশেষ একটা বয়সে হয় তার পূর্বেও হয় না, পরেও হয় না৷ তাই একে বয়ঃব্রণ বলা হয়৷ সংস্কৃত ভাষায় ব্রণ বলতে বয়ঃব্রণকে তো বোঝায়–ই, অধিকন্তু যে কোন ক্লেশদায়ক ফোঁড়া বা ফুসুক্ড়ির জন্যেও ব্রণ শব্দ চলতে পারে৷ ব্রণরোগ মানে ঘা–এর রোগ৷

‘যথা অতি রমনীয় চারু কলেবরে

ব্রণ অন্বেষণ করে মক্ষিকানিকরে৷’

বাতরোগ

রোগের লক্ষণ ঃ রক্তে অম্লদোষ বেড়ে গেলে বাত রোগের সৃষ্টি হয়৷ এখানে বাতরোগ বলতে বিশেষ করে গ্রন্থিবাতের ( গেঁটে বাত) কথাই বলা হচ্ছে৷

ঔষধ ঃ এই বাতরোগ কোন ঔষধের বহিঃপ্রয়োগে খুব ভাল ভাবে সারে না৷ তবে সাময়িক ভাবে উপশম হয়৷ বাতরোগে মালিশ জাতীয় বস্তুর মধ্যে যেগুলি উত্তম মানের তাদের অনেকেরই উপাদান হ’ল ধুতুরা ফল৷ কণ্ঢকযুক্ত ধুতুরা ফল খাদ্য হিসেবে কথঞ্চিৎ বিষাক্ত হলেও বহিঃপ্রয়োগে ভাল ফল দেয়৷ তবে কৃষ্ণ ধুতরোর ফলেতে এই গুণ একটু বেশী৷

ভক্ষ্য–অভক্ষ্য

রসোন (রসুন)–Allium sativum ঃ

তোমরা রসুনের নাম শুনেছ নিশ্চয়৷ শব্দটি রসুন নয়–রসোন৷ রস + উন  = রসোন৷ তিক্ত, কটু, কষায়, লবণ, অম্ল, মধুর–এই ছয় রকমের খাদ্য রস আছে৷ রসোন তামসিক খাদ্য হলেও তাতে ছ’টি রসের মধ্যে পাঁচটি রস রয়েছে–নেই কেবল অম্ল রস৷ তাই অম্লরসের সঙ্গে রসোন মিশ্রিত হলে তাতে একাধারে ছ’টা রসই এসে যায় উন মানে কম, যাতে একটা রস কম তা রসোন৷ উত্তর ভারতে রসোনকে ‘লহসূন’ বলা হয়৷

নিম

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ বিশ্বে নিমের অনেক প্রজাতি আছে – কেউ খুব তেঁতো, কেউ কম তেঁতো, বা কেউ একেবারেই তেতো নয়–যেমন মিঠা নিম বা কারি লিফ্৷ ভারতের যে সকল স্থানে তেজপাতা জন্মায় না সেখানকার মানুষ তেজপাতার বদলে এই মিঠা নিম বা কারি লিফ্ ব্যবহার করে থাকেন৷

মানুষ, প্রকৃতি ও ঔষধ

(পুর্ব প্রকাশিতের পর)

খাদ্যের মাধ্যমে ঃ যে সকল ঔষধ অতিরিক্ত তিক্ত বা বিস্বাদ (সুজির মোহনভোগের সঙ্গে বিস্বাদ ঔষধ মিশিয়ে দিয়ে মোগল যুগে হেকিমরা তৈরী করতেন সুমধুর ‘হল্বা’, বাংলায় যাকে ভুল করে ‘হালুয়া’ উচ্চারণ করা হয়) সম্ভব ক্ষেত্রে সেগুলিকে রন্ধন করে ভাত বা অন্য কোন প্রধান খাদ্যের সঙ্গে মিশিয়ে মানুষ ঔষধ সেবনের এক নবতর পদ্ধতি আবিষ্কার করল৷ এই ভাবে ঔষধীয় গুণসম্পন্ন নিম্বপত্র (নিমপাতা), উৎসিকা (উচ্ছে), পটোল লতা (পলতা), গন্ধিকা (গাঁদাল) প্রভৃতি ঔষধকে মানুষ প্রধান খাদ্যের সঙ্গে, যেমন বাংলায় ভাতের সঙ্গে খেয়ে ঔষধের গুণ আহরণ করতে লাগল৷