প্রভাতী

আগ কঁহা লগী

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

গদ্গদ  বচ  ঘঞ ঞ্চ গদ্গদবাচ৷ তোমরা অনেক নেতার জ্বালাময়ী বত্তৃণতা প্রাক্–স্বাধীনতাকালে হয়তো শুণেছ৷ তাঁরা ভাষণে আগুন ছুটিয়ে দিতেন, যদিও বক্তব্যে বড় একটা কিছু থাকত না৷ শ্রোতার তলিয়ে ভাবার অবকাশ থাকে না৷ এই ধরণের অভ্যন্তরীণ মূল্যহীন যে ভাষণ তা’ ‘গদ্গদবাচ’৷

একবার বিহারে কোন এক জনসভায় জনৈক নেতা এলেন নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পরে৷ শ্রোতারা অধীর আগ্রহে কখনো রোদে মুখ পুড়িয়ে, কখনো বা জলে জামা ভিজিয়ে অপেক্ষা করে আছে৷ নেতার আসতে দেরী হ’ল কারণ তিনি একটি দূরবর্ত্তী স্থানের সুলভ শৌচালয়ের ফিতে কাটতে গেছলেন৷

তিনি এসে কিন্তু লজ্জিত হলেন না....তাঁর মুখে কিন্তু কিন্তু ভাবও ছিল না৷ তিনি শ্রোতাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন–‘‘মালা লেনে কা টাইম নহী হ্যায়, ম্যায় বহুৎ ব্যস্ত হুঁ’’৷ সবাই ভাবল–নেতা তো, কতই ব্যস্ত! তাই মালা নিতে চাইছেন না৷ তাঁর জনৈক টাউট শ্রোতাদের এ্যাড্রেস করে বিহারের স্থানীয় ভাষায় বললেন–এঁর সময়ের অত্যন্ত অভাব৷ আর কাজও প্রচুর৷ নাওয়া–খাওয়া–শোয়া তো প্রায় উঠেই গেছে৷ দীর্ঘশঙ্কায় (মলত্যাগ) না গেলে নয়, তাই যান৷ আর ত্যাগ! ত্যাগের কথা আর বলবেন না৷ আগে দিনে দশ প্যাকেট সিগারেট খেতেন৷ আজকাল কেবল দীর্ঘশঙ্কার সময় এক প্যাকেট সঙ্গে নিয়ে যান, নইলে পেট পরিষ্কার হয় না৷ ভেবে দেখুন তো কী দারুণ ত্যাগ! আসছে ইলেকশানের সময় এঁর কথা আপনারা যেন কিছুতেই ভুলবেন না৷ আমি আবার আপনাদের জোড়া পায়ে সালাম দিতে আসব৷

তারপর নেতা শুরু করলেন তাঁর ভাষণ–বন্ধুয়োঁ, আজ ইস সুবসর পর আগ লগ গয়ী৷ ক্যা হুয়ী আগ লগ গয়ী৷ আগ কহাঁ লগী আগ লগ গয়ী আপকে দিল মে, মেরে দিল মে, দুঃখিয়া মানবতা কে দিলমে৷ আগ জ্বল রহী হ্যায়...আগ জ্বল রহী হ্যায়....জ্বলতী রহেগী৷

তবু শ্রোতারা মুগ্ধ....অভিভূত!                                           (শব্দ চয়নিকা, ১৮/২০)

 

ভাইফোঁটা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

 ভাই-বোনেদের নির্মল মন

 মঙ্গল কামনায় মুগ্দ ভূবন৷

হৃদয় থেকে স্বতঃস্ফূর্ত

 প্রীতি-সুধা ঝরে পড়ে,

কেউ যেন না নিঃসঙ্গতায় রয়

 অবহেলায় অনাদরে৷

ভ্রাতৃপ্রীতির মঙ্গল গীতি

 পৃথিবীর কোণে কোণে,

নিরাশার মনে আশার উদয়

 সম্পর্কের দৃঢ় বন্ধনে!

যে যাকে ছেড়ে যত দূরে যাক

 কর্মকাণ্ডে যত ব্যস্ত থাক,

প্রীতি-স্পন্দন শুভ কামনা

 জাগত দুটি মনে৷

সম্পর্কের এত মধুরতা

 ভাইবোন পরিচয়ে,

যত দূরে থাক তবুও নিকটে

 শুভেচ্ছা বিনিময়ে৷

সুন্দর ধরা সম্প্রীতি ভরা

 চঞ্চল উচ্ছ্বাসে,

রবি শশী তারা সাক্ষী যাহারা

 নির্বাক হাসি হাসে!

এক্স

সপ্তর্ষির প্রশ্ণ

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

কৃষ্ণা রজনীর শেষ প্রহর

সপ্তমীর ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ তখনও

ঢালছে অন্তিম জ্যোৎস্নার পুষ্পবর্ষণ,

আকাশের উজ্জ্বল তারার নিশানায়

ছোট্ট তরী ভাসিয়েছে মানুষ

ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ জীবনের অপার সমুদ্রে

অসহ্য ব্যথার তীব্র কালকূট বুকে

ফেনিল জীবন যন্ত্রণার

উত্তাল তরঙ্গমালা চারিদিকে

মুক্তির আশ্বাস খুঁজেছে শুক্রে-মঙ্গলে

কিংবা ওই আলো-বিলানো

 চাঁদের কোণে পেয়েছে কি?---

ঊষার প্রথম পদক্ষেপে পাখীর কলগুঞ্জন

পূর্ব দিগন্তে সদ্য জেগে ওঠা চকোলেট রং

সভ্যতার অগ্রগতি হাই তোলে প্রকৃতির সাথে৷

শ্রান্ত নাবিক ক্লান্তির স্বেদ মোছে

প্রশান্তির প্রগাঢ় পরশ খুঁজে পেতে

আপ্তি-প্রাপ্তির মধ্যবিন্দ

নিঃসীম ব্যোমের ঠিকানায়---

তখনও বিদায়ী সপ্তর্ষির জিজ্ঞাসা চিহ্ণ

প্রশ্ণ করে নীরব ভাষায়

পেয়েছ কি?

সেকালের পাঠশালা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

আজ আর সে-পাঠশালা নেই৷ এখন হয়েছে স্কুল-কলেজ আর ছাত্র-ছাত্রী৷ তখন ছিল আটচালার পাঠশালা আর পোড়োর দল৷ পাঠশালার সঙ্গে আজ আমাদের পরিচয় হয় পূরনো গল্প-উপন্যাসের মাধ্যমে৷

কারা তৈরি করত সেই সব পাঠশালা? এখন যেমন সরকার, পৌরসভা, বিভিন্ন সেবাপ্রতিষ্ঠানের দানে-অনুদানে স্কুল-কলেজ নির্মিত হয় তখন তো তা ছিল না৷ জমিদার বা গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তিরা সমাজসেবার অঙ্গস্বরূপ সে সব পাঠশালা তৈরি করতেন!

সেকালের কলকাতার পাঠশালায় সাধারণত বর্ধমানের কায়স্থ গুরুরাই পড়াতেন৷ সকাল-সন্ধ্যা দু’বেলাই পাঠশালা! বসত৷ যে সকল দরিদ্র ছাত্র দিনের বেলায় অবকাশ পায় না, তাহারা সন্ধ্যার সময় পড়িতে আসে’৷ (শরৎচন্দ্র) গুরুমশাই বেত হাতে বসতেন ঘরের মাঝখানের খুঁটিতে ঠেস দিয়ে৷ আর পোড়োরা যার যার বাড়ি থেকে আনা মাদুর পেতে বসত৷ এ প্রসঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রী লিখে গেছেন---তখন কলিকাতার দক্ষিণপ্রদেশস্থ অনেক গ্রামের পাঠশালে বর্ধমানের গুরু দেখা যাইত৷ এই গুরুরা আসিয়া ধনী গৃহস্থদের চণ্ডীমণ্ডপে পাঠশালা খুলিতেন৷ এক গুরুমহাশয় খুটি ঠেসান দিয়া বেত্র হস্তে বসিতেন, সর্র্দর ছেলেরা তাঁর সহকারীর কাজ করিত নিম্নশ্রেণীর বালকদিগের শিক্ষায় সাহায্য করিত গুরুমহাশয়ের পয়সাদি আদায় করিয়া দিত তাঁহার পাকাদিকার্যের সাহায্য করিত পলাতক বালকদিগকে ধরিয়া আনিত ইত্যাদি৷’’ পাঠশালার গুরুমশাইরা বেতন কত পেতেন? বেতনের কোনও ঠিক ছিল না৷ পোড়োদের অভিভাবকরা যে যা দিতেন তাই সব মিলিয়ে হত দশ কি বারো টাকা৷ এ ছাড়া নানারকম পালা-পার্বন এবং পারিবারিক উৎসবাদিতেও গুরুরা কিছু কিছু দক্ষিণা পেতেন!

পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু হত পাঠশালার পড়াশুনা৷ পাঠ্যপুস্তকের বালাই ছিল না৷ ছিল না-কোনও ব্ল্যাকবোর্ড৷ গুরুমশাই মাটিতে খড়ি দিয়ে অ আ ক খ লিখতেন৷ পোড়োরা তাই দেখে বর্ণ চিনতে শিখত৷ তারপর তালপাতায় স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ লিখতে শিখে যুক্তাক্ষরে হাত দিত ৷ তারপর শাটিকা, কড়াকিয়া, বুড়িকিয়া ইত্যাদি শিখত৷ এর পর আস্তে আস্তে তালপাতা ছেড়ে কলাপাতায় উত্তীর্ণ হত৷ কলাপাতায় লেখা হত জমা খরচের হিসাব, তেরিজ, কাঠাকালী, বিঘাকালী, শুভঙ্করী ইত্যাদি৷ কলাপাতার পর শুরু হত কাগজে লেখা৷ কাগজে লেখা হত চিঠিপত্র৷ পোড়োরা মুখে মুখে বড় বড় মানসাঙ্কের সমাধান করে দিতে পারত৷

পাঠশালার শাস্তির ব্যাপারটা ছিল বড়ই নির্মম৷ ১৮৩৪ সালে উইলিয়ম এডাম এ দেশের পাঠশালাগুলি পরিদর্শন করে যে রিপোর্ট পেশ করেছিলেন৷ যেমন---

হাতছড়ি : সাধারণত দেরি করে পাঠশালায় এলে হাতছড়ি খেতে হত৷ ডান হাত পেতে গুরুমশাইর সামনে দাঁড়াতে হত৷ তখন গুরুমশাই দশ ঘা বেত মারতেন৷ নাড়ুগোপাল : অপরাধী পোড়োকে বালগোপাল অথাঁৎ শিশুর মতো দু’ পা আর বাঁ হাতে ভর দিয়ে ডান হাত তুলে থাকতে হত৷ সেই পেতে রাখা ডান হাতে একখানা এগার ইঞ্চি ইট চাপানো হত৷ হাত ব্যথা হয়ে গেলেও এ ইট ফেলা চলবে না৷ ইট ফেললেই পেছনের কাপড় তুলে বেত মারা হত৷ ত্রিভঙ্গ : অপরাধী পোড়োকে কৃষ্ণের মতো বেঁকে এক পায়ে দাঁড়াতে হত৷ হাতে দেওয়া হত একটা ভারী ইট বা পাথর৷ একটু নড়লে বা উত্তোলিত পা মাটিতে ফেললেই পেছনে পড়ত বেত্রাঘাত ৷ চ্যাংদোলা : কোনও ছাত্র ভয়ে পাঠশালায় না এলে বা পাঠশালা থেকে পালালে এই চ্যাংদোলা সাজা দেওয়া হত৷ উক্ত ছাত্রকে ধরে আনবার জন্য বয়স্ক এবং বলশালী কিছু ছাত্রকে পাঠানো হত৷ তারা তন্নতন্ন করে খুঁজে অপরাধী ছাত্রকে হাতে পায়ে ধরে ঝুলিয়ে আনত৷ ঐ চ্যাংদোলা অবস্থায় তাকে নিয়ে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গে গুরুমশাই এলোপাথারি বেত চালাতেন তার ওপর! মাটিতে বসে ছাত্রকে নিজের একখানা পা কাঁধে তুলে বসে থাকতে হত ৷ উরুর তলা দিয়ে হাত চালিয়ে কান ধরে বসে থাকতে হত অনেক সময় কাপড় তুলে পেছনে বিছুটি দেওয়া হত৷ যাতে চুলকোতে না পারে তার জন্য হাত-পা বেঁধে রাখা হত৷

আরও মমার্ন্তিক শাস্তি হল একটা থলেতে একটা.. বেড়ালের সঙ্গে অপরাধী পোড়োকে ঢুকিয়ে মাটিতে গড়িয়ে দেওয়া হত৷ বিড়ালের দাঁতের কামড়ে আর নখের আঁচড়ে পোড়ো বেচারী ক্ষতবিক্ষত হত৷

নাট্য লীলা

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

পৃথিবীটা এক রঙ্গমঞ্চ

              জীবন মনোহর নাটক,

অজস্র চরিত্রে অভিনয় রত

             নাটকে জীবন আটক৷

জীবন-নাট্যের তুমি রূপকার

                   জীবনের শুভ সূচনায়,

তুমি লিখে চল উপসংহার

                  ভরা আনন্দ-বেদনায়!

যা’ লেখা রয়েছে জীবন-নাটকে

                     জীবনের মূলধন,

বিধিলিপি বল, ললাট-লেখন

                  খণ্ডাবে কোন জন?

পার্থিব বৈভবে নিহিত রয়েছে

                সুখ-শান্তির খোঁজ,

সেই ধারণার বশবর্তী হয়ে

              ছুটি অন্ধের মতো রোজ৷

সম্বিত যখন ফিরল তখন

              শুনি আহ্বান বাণী,

নোতুন ঊষার দুয়ার খুলেছে

              তোরণে আঘাত হানি৷

ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা এ’ জীবন

                         সাবলীল, দূর্গম,

সদা সাথে থাকো তুমি যে আমার

                       সুন্দর মনোরম!

কান্না-হাসি মোহন বাঁশি

                জীবন তো নিঃসংশয়,

আলো-আঁধারের লুকোচুরি খেলায়

                 রয়েছো জ্যোতির্ময়৷

এ’ভাবে জীবন আসে আর যায়

                 ভরে থাকে ধরাতল,

     সংস্কার-বলে নিত্য সাধনে

                হই সংশোধিত নির্মল৷

আমার যা’ আছে সবই তব দান

                   নিঃস্ব বৈত নয়,

প্রণিপাতে মোর আত্মসমর্পণ

              জয় তোমারই জয়!

দেব সেনাপতি কার্ত্তিক

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

কার্ত্তিক সম্বন্ধে অনেকের অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে৷ লোকের ধারণা কার্ত্তিক গঙ্গা নদীর পুত্র৷ জন্মের পর শিশু কার্ত্তিককে ছটি নক্ষত্র স্তন্য পান করিয়েছিলেন বলে তার নাম হয় ষড়ানন৷ অর্থাৎ কার্ত্তিকের ছটি মুখ৷ পুরাণের উল্লেখ আছে তার ছটি মুখ দিয়ে ছটি নক্ষত্রের স্তন্য পান করেছিলেন৷ মোদ্দা কথা কার্ত্তিকের ছটি মুখ৷ কেউ বলেন কার্ত্তিক পাবর্তীর পুত্র আবার কেউ ভাবেন কার্ত্তিক দুর্গার সন্তান৷ এ প্রসঙ্গে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তি তাঁর ‘‘নমঃ শিবায় শান্তায়’’গ্রন্থে পরিষ্কার বলেছেন---‘‘কার্ত্তিক শিবের ছেলে কিন্তু পার্বতীরও কেউ নয়, আর পুরানোক্ত দুর্গাদেবীরও কেউ নয়৷ তবে শিবের স্ত্রী গঙ্গার পুত্র ও সে নদী গঙ্গার পুত্রও নয়, ও তার মানবীয় আধারে ছয় মুখ হতে পারে না৷ সে ষড়ানন হতে পারে না এক মুখই হবে তার৷’’ অনেকের ধারণা কার্ত্তিক অবিবাহিত৷ এ প্রসঙ্গে আনন্দমূর্ত্তিজী বলেছেন---‘‘একথা ভুল৷ কার্ত্তিকের স্ত্রীর নাম ছিল দেবসেনা৷ কার্ত্তিক হচ্ছে তা হলে দেবসেনার পতি৷ লোকে ভুল করে ভাবে দেবসেনা পতি মানে দেবতাদের সেনাপতি৷ ...স্ত্রীর নাম দেবসেনা৷ কার্ত্তিক সেনাপতি নয়, দেবতাদের সেনাপতিও নয়৷’’

এবার জানা যাক কে ছিলেন এই দেবসেনা৷ অনেকে বলেন, কার্ত্তিকের স্ত্রী হলেন ষষ্ঠী৷ এখানেও একটু গোলমেলে ধারণা আছে৷ বরাহপুরাণে বলা হয়েছে ষষ্ঠী তিথিতে কার্ত্তিক দেবসেনাকে বিবাহ করেছিলেন৷ তাই ষষ্ঠী ও দেবসেনা অভিন্ন হয়ে দেবসেনা ষষ্ঠীদেবীতে পরিগণিত হলেন৷ সব পুরাণেই ষষ্ঠী দেবীর অপর নাম দেবসেনা৷ নিঃসন্তান দম্পত্তি সন্তান কামনায় কার্ত্তিক মাসের সংক্রান্তিতে কার্ত্তিকের পুজো করে থাকেন৷ কার্ত্তিক বালক ও শিশুর রক্ষক ও পুত্রদাতা হিসেবে পূজিত হন৷ কার্ত্তিকের কৃপায় অপুত্র পুত্র লাভ করে, নির্ধন ধনলাভ করে--- একথার উল্লেখ আছে বরাহপুরাণে৷ শুধু তাই নয় যারা স্তুতি পাঠ করেন তাদের ঘরে বালকদের কল্যাণ হয় ও আরোগ্য বিরাজ করে৷

জেনে রাখা ভাল, চীন ও জাপানেও কার্ত্তিক হানা দিয়েছিলেন৷ জাপানে কার্ত্তিকের নাম কুমার-তেন৷ তাঁর আরেকটি জাপানী নাম ইদা-তেন৷

আশায় আশায়

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

ভাসছি, আমি ভাসছি

আনন্দ-সাগরে ভাসছি৷

তুমি যে চুপিচুপি বলে গেলে

আসছি, আমি আসছি৷৷

 

কতদিন কতরাত্রি কেটেছে তোমায় ভেবে

আঁখি-জল ঝরেছে কত না আবেগে৷

আজ এই বাদলা দিনে

সুর ও তালের জাল বুণে

শোণালে তোমার নুপুর ধবনি

মনের দুয়ার গেল খুলি ঝনঝনি৷৷

 

সুদীর্ঘ খর তাপের পরে

আজ যেন শাত্তণী-ধারা ঝরে৷

খুশির ঝিলিক আমার চাতক-চোখে

হৃদয়-পদ্ম নূতন আবেশে ফোটে৷

অজানা পুলকে মেতেছে আমার চিত্তভূমি

জানি, আমি জানি, ঠিক আসবে তুমি৷৷

উপস্থিত ৰুদ্ধি

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘তন্’ ধাতুর অর্থ হ’ল ৰেড়ে যাওয়া, অভিব্যক্ত হওয়া৷ যে মানুষ তার ভাবধারাকে নাচে–গানে অভিনয়ে–আবৃত্তিতে অভিব্যক্ত করতে পারে তার জন্যে ‘তন্’ ধাতুর উত্তর ড প্রত্যয় করে ‘ত’ শব্দ ব্যবহূত হয়৷ তাই এক্ষেত্রে ‘ত’–শব্দের একটি অর্থ হ’ল ণট বা অভিনেতা৷

অভিনেতার মধ্যেও অনেক সময় অদ্ভুত রকমের উপস্থিত ৰুদ্ধি দেখা যায়৷ সে বিচারে তিনি দু’দিক দিয়েই ‘ত’৷ অভিনয় জগতের ‘ত’–এদের উপস্থিত–ৰুদ্ধি সম্ৰন্ধে বা উপস্থিত ৰুদ্ধির স্বভাব সম্ৰন্ধে অনেক গল্প প্রচলিত আছে৷ দু’একটি গল্প তোমাদের শোনাচ্ছি ঃ

 সেটা তখন ইংরেজ আমল৷ আমি তখন দিনাজপুরে৷ উত্তর ৰাঙলার অন্যান্য শহরের মত দিনাজপুরও একটি মাঝারি রকমের ছিমছাম শহর ছিল৷ শহরটি ছিল আমার খুব প্রিয়৷ দিনাজপুর–বাসীর স্বভাবের একটি বৈশিষ্ট্য আমার খুবই ভাল লাগত৷ ওঁরা*(*ওনারা, যেনারা, তেনারা শব্দগুলি গ্রাম্য দোষে দুষ্ট৷ ওঁরা, যাঁরা, তাঁরা–ই শুদ্ধ ওনারা, যেনারা, তেনারা না লেখাই ভাল৷) ছিলেন খুবই নাচ–গান–ভিনয় প্রিয়৷ সেকালে স্থায়ী অভিনয়মঞ্চ কোলকাতার বাইরে আর কোনো শহরেই ৰড় একটা ছিল না৷ কিন্তু দিনাজপুরে তা–ও ছিল৷ কয়েকজন স্থানীয় অভিনেতা তখন রীতিমত প্রথিতযশা হয়ে পড়েছেন৷ কেবল শহরেই নয়, গ্রামাঞ্চলের দিকেও থিয়েটারের রমরমা৷ সেই সময়টায় ওই দিকটায় ‘সীতা’ নাটকটি জনপ্রিয়তার তুঙ্গে৷ সীতার ভূমিকায় অভিনয় করে যিনি দু’হাতে যশ কুড়িয়েছিলেন, তাঁর নাম ছিল সম্ভবতঃ আব্দুল লতিফ৷

সীতা নাটকের অভিনয় চলছে৷ শহরে হাজার হাজার গোরুর গাড়ীর ভীড়৷ গ্রামের লোক ঝেঁটিয়ে এসেছে অভিনয় দেখতে৷ হাতে পাট বেচার তাজা টাকা৷ দরকার পড়লে অভিনয়ের জন্যে ৰেশ কিছু খরচ করতেও তৈরী৷

অভিনয় চলছে৷ নাটক তার চরম স্তরে ন্তুপ্তন্প্প্ত্রপ্রগ্গ এসে পৌঁছেছে৷ এবার সীতার পাতাল প্রবেশ৷ ধরিত্রী মাতাকে সম্বোধন করে সীতাকে যা বলতে হবে তার মোদ্দা কথা হচ্ছে–‘‘মাতঃ বসুন্ধরে, দ্বিধা হও, আমি তোমার স্নেহময় অঙ্গে স্থানলাভ করি’’৷ আব্দুল লতিফে.র নাটকের ভাব ষোল আনাই জানা, ভাষাও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঠোঁটস্থ৷ এই বিশেষ স্থানটিতে সীতা ধরিত্রী মাতাকে সম্ৰোধন করে যা বলবেন তার ভাবটিও তাঁর জানা আছে৷ কিন্তু ভাষা একটু গোলমেলে হয়ে গেছে৷ সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ‘‘মাতঃ বসুন্ধরে’’ বলার পরই স্মারকের হ্মব্জপ্সপ্পহ্মব্ধন্দ্ এসে গেল দারুণ কাশি৷ সে কাশির চোটে আর কথা বলতে পারছে না অথচ সীতা তো আর তার প্রত্যাশায় মুখ ৰন্ধ করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না৷ সে তখন উপস্থিত ৰুদ্ধি প্রয়োগ করে বললে–‘‘মাতঃ বসুন্ধরে, তুই ফাঁক হ, মুই ভিতরত্ ঢুকিম্’’৷

দেখলুম, এ জিনিসটা শ্রোতারা সহজেই গ্রহণ করলেন৷ নাটকের কিছুমাত্র রসভঙ্গ হ’ল না৷

নির্ভীক বাঙালী ব্যরিষ্টার

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

নোয়াখালিতে এসেছেন এক বাঙালী ব্যরিষ্টার৷ আসামীর বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ৷ আসামীর পক্ষ নিয়ে তিনি এসেছেন৷ বিপক্ষে কারগিল সাহেব৷

বাঙালী ব্যরিষ্টার---সে আবার কেমন ধারা প্রাণী--- বিশেষ করে যে সাহেবের সঙ্গে লড়তে আসে? কৌতূহল হলো গ্রামবাসীদের৷ কৌতূহল চরিতার্থ করবার জন্য তারা দলে দলে আদালত প্রাঙ্গনে এসে ভীড় জমালো৷ বেলা হবে বলে কাপড়ের কোণে চিড়ে মুড়ি বেঁধে আনলো৷

শুরু হলো মামলা৷ শুরু হলো জেরা৷ অভাবনীয় ব্যাপার৷ মূহূর্ত্তে সকলের দৃষ্টি কারগিলের থেকে সরে গিয়ে পড়লো বাঙালী ব্যরিষ্টারের ওপর৷

বাঙালী ব্যরিষ্টার যেন অক্টোপাশ৷ কারগিল অক্টোপাশের ঘেরাজালে যেন পোকার মতো ধরা পড়েছে৷ আষ্টেপৃষ্টে বাঙালী ব্যরিষ্টার ঠেসে ধরলেন কারগিলকে৷ জেরার পর জেরা.. তার ওপরে জেরা...পালাবার পথ নেই যম আছে পিছে৷

হিমশিম খেয়ে গেলেন কারগিল৷ ঘাম ছুটে গেল সারা শরীরে৷ এত সহজেই নেটিভ ব্যরিষ্টারের কাছে হার স্বীকার অসম্ভব৷ তিনি শুরু করলেন জেরা৷ কিন্তু তা কতক্ষণ? ক্ষুরের কাছে ব্লেড কতক্ষণ? নাস্তানাবুদ হয়ে পড়লেন কারগিল৷ কালো ব্যরিষ্টারের প্রতি ঘৃণায় সারা শরীর বিষিয়ে উঠলো তাঁর৷ তারপর? তারপর বাচ্ছা ছেলেরা হেরে গিয়ে কি করে? গালাগালি দিতে শুরু করে বিপক্ষকে৷ প্রথম থেকেই কারগিল বাঙালী ব্যরিষ্টারকে ‘বাবুবাবু’ বলে সম্বোধন করছিলেন৷ হেরে গিয়ে এবার যেন আরো বাড়াবাড়ি শুরু করলেন৷ কারণে অকারণে ‘বাবু’ সম্বোধনে বাঙালী ব্যরিষ্টারকে হেয় প্রতিপন্ন করতে লাগলেন৷ নিয়ম হচ্ছে ‘মিস্টার’ বলে সম্বোধন করার৷

প্রথম প্রথম বাঙালী ব্যরিষ্টার খেয়াল করলেও প্রতিবাদ করবার অবকাশ পাননি৷ এবার তিনি হুংকার দিয়ে উঠলেন, ‘বাবু’ আপনি কাকে বলছেন?

তাও কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? ভ্রূ কুঁচকে জবাব দিলেন কারগিল৷

বাঙালী ব্যরিষ্টার বললেন, আমি জানতাম কারগিল সাহেব এক শিক্ষিত লোক৷ এখন দেখছি তিনি সামান্য ভদ্রতা বা নিয়মটুকুও জানেন না৷

আদালতের সকলের দৃষ্টি যেন এবার হুমড়ি খেয়ে পড়লো কারগিলের ওপর৷

কারগিল লজ্জায় অপমানে রাগে লাল হয়ে উঠলেন৷ ঝাঁঝিয়ে বলে উঠলেন, তা আপনাকে কি বলে সম্বোধন করতে হবে?

কেন, আপনার দেশই ইংল্যাণ্ড আর এখানে হাইকোর্টে জজেরা ‘মিস্টার দাশ’ বলেই আমাকে সম্বোধন করেন৷ ব্যরিষ্টারের প্রতি ব্যরিষ্টারের সম্বোধনের ওটাই রীতি৷ আপনিও সেইভাবে সম্বোধন করবেন৷ ধীরে সুস্থে অথচ বেশ জোর দিয়েই কথাগুলো বললেন বাঙালী ব্যারিষ্টার৷

কী, এতবড় স্পর্ধা! খাড়া হয়ে উঠলেন কারগিল৷ ভাবটা এইরকম--- আদালতের বাইরে হলে তোমায় দেখে নিতাম৷

বাঙালী ব্যরিষ্টার মৃদু হাসলেন৷ তিনি যেন বলতে চান--- সাহেব, তোমার ওই আস্ফালনই সার৷

কে জানো এই নির্ভীক বাঙালী ব্যরিষ্টার? ইনিই হলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ৷ দেশের জন্য যিনি সর্বস্ব বিলিয়ে দিয়েছিলেন৷

কৌশিক খাটুয়ার কবিতা

 

(১)

পূব দিগন্তে রবির হাসি

কাটিয়ে বর্ষা রাত

শিশির ভেজা শিউলি ফুলে

স্নিগ্দ সুপ্রভাত৷

 

কালো মেঘের চোখ রাঙানি

কোথায় ভেসে যায়

হৃদয়ে বাইরে সোনালী ভোর

ছিল যে প্রতিক্ষায়৷

 

(২)

তোমার চরণ রেখা

চির প্রত্যাশিত সখা

সেই পথ মোর গতিপথ,

যে পথে আলোক শিখা

সূর্য চন্দ্র নীহারিকা

সুসজ্জিত করে তব রথর