ছাঁচি কুমড়ো বা চাল কুমড়ো ও ঝিঙ্গে

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ ছাঁচি কুমড়ো সাধারণতঃ মাটিতে হয় না৷ ঘরের চালাতে বা মাচাতে এই লতানে গাছটাকে তুলে দিতে হয়৷ এর জন্যে ছাঁচি কুমড়োকে গ্রাম–ৰাংলায় অনেকে চালকুমড়োও ৰলেন৷ এরও তিনটি ঋতুগত প্রজাতি রয়েছে৷ বর্ষাতী চালকুমড়োকে অবশ্যই মাচায় অথবা ঘরের চালে তুলে দিতে হয়৷ শীতের প্রজাতির ছাঁচি কুমড়োকে মাটিতেই ৰেড়ে যেতে দেওয়া হয়৷ তবে কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ গ্রীষ্মকালীন চালকুমড়ো মাটিতেই ৰেড়ে যেতে থাকে৷ (একেও) কেউ ইচ্ছে করলে মাচায় তুলে দিতে পারেন৷ তবে বর্ষাতী চালকুমড়োকে মাচায় তুলে দিতেই হবে, নইলে পোকার আক্রমণে ফলটি নষ্ট হবেই.....গাছও নষ্ট হবে৷

ফলের আকার ৰাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর বাইরেকার সবুজ রঙটার ওপর একটা শাদা আস্তরণ পড়তে থাকে৷ তাই ৰাংলার কোন কোন জায়গায় একে চুনো–কুমড়োও ৰলা হয়৷ রাঁচী অঞ্চলে বলা হয় ‘রাখাস কোহড়া’৷ বিহারের কোথাও কোথাও বলা হয় ‘ভুয়া’, কোথাও কোথাও বলা হয় ‘ভতুয়া’–ভাল হিন্দুস্তানীতে বলা হয় ‘পেঠা’৷ ছাঁচি কুমড়ো ভারতের একটি সাবেকী জিনিস.... বাইরে থেকে আসেনি৷ প্রাচীন ৰাংলায় যাঁরা শাক্ত দেবী–দেবতাকে বৈষ্ণবীয় রীতিতে অর্চনা করতেন, তাঁরা বলি দানের উদ্দেশ্যে পশু–পক্ষীর পরিবর্ত্তে আখ, কলা, সুপুরী, ছাঁচি কুমড়ো বলি দিতেন৷ বলি দানের অধিকার ছিল কেবল পুরুষের৷ তাই দীর্ঘকাল ধরে আখ, কলা, সুপুরী, ছাঁচি কুমড়ো মেয়েরা কাটতেন না৷

উদররোগে, অগ্ণিমান্দ্যে ও স্নায়ুতন্তুর রোগে ছাঁচি কুমড়ো ঃ পাকা ছাঁচি কুমড়ো উদর রোগের পক্ষে ভাল৷ দীর্ঘকালীন উদর রোগে ছাঁচি কুমড়ো ভাল ফল দেয়৷ ছাঁচি কুমড়োর ঘণ্ট বা নারকোল–কুমড়ি ৰাঙালীর একটি প্রিয় ভোজ্য৷ স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্তুর রোগেও কাঁচা বা পাকা ছাঁচি কুমড়ো ঔষধের কাজ করে৷ ছাঁচি কুমড়োর মধ্যে উদর ও স্নায়ু রোগের ঔষধীয় গুণ নিহিত থাকায় মধ্য যুগে ৰাঙালী মেয়েরা অঘ্রাণ মাসে নারকোল কুরুনিতে ছাঁচি কুমড়ো কুরে ডাল–বাটার সঙ্গে মিশিয়ে বড়ি তৈরী করতেন৷ ছাঁচি কুমড়ো অগ্ণিমান্দ্যের ন্প্সব্দব্দ প্সন্দ্র হ্মন্দ্বব্ধন্ব্ধন্দ্বগ্গ্ ঔষধ ঙ্মরস বের করে সেই রস বা তরকারী হিসাবেৰ৷ ছাঁচি কুমড়ো যত কচি–কাঁচা অবস্থায় থাকবে ততই সে স্নায়ুকোষ ও স্নায়ুতন্তুর পক্ষে ভাল৷ আর যত বেশী পূর্ণত্বের দিকে যেতে থাকে তত বেশী যকৃত ও পেটের রোগের ভাল ঔষধ৷ শুকনো অবস্থাতেও এ অগ্ণ্যাশয়ের ঔষধ৷

ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তৈল ও চর্মরোগ ঃ আয়ুর্বেদে ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তেলের ঔষধীয় ব্যবহার আছে৷  ছাঁচি কুমড়ো ৰীজের তেল চর্ম রোগের ঔষধ৷

ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বা ঃ উত্তর ভারতের আগ্রার ও পূর্ব ভারতের শিউরীর (বীরভূম জেলা)* পেঠা বা ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বা প্রসিদ্ধ৷ কলকাতার কাছাকাছি এলাকায় ছাঁচি কুমড়োর মোরব্বাকে কেউ কেউ ‘কুমড়োর মেঠাই’ ৰলে থাকেন৷

মিষ্টি কুমড়ো

মিষ্টি কুমড়ো বা লাল কুমড়ো বাইরে থেকে এসেছে (ভারতের সাবেকী জিনিস নয়গ্গ৷ তাই এর পুরাণোক্ত বা সংস্কৃত কোন নাম নেই৷ এদেশে এসেছে আনুমানিক ৪০০ বছর আগে৷ এর ইংরেজী নাম ‘পাম্কিন’৷ ভারতের বিশেষ করে রাঢ়ের* মাটি লাল কুমড়োর পক্ষে অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় এর চাষ হু হু করে ৰেড়ে যাচ্ছে৷ যে ইয়ূরোপ থেকে একদিন লাল কুমড়ো এসেছিল, সেই ইয়ূরোপের চাষীরাই এখন শেওড়াফুলীর হাট থেকে লাল কুমড়োর ৰীজ কেনে৷ বিদেশ থেকে জলযানে অর্থাৎ ডিঙ্গি করে এসেছিল বলে রাঢ়ের কোন কোন অংশে একে ডিঙ্গি–লাউ বা ডিংলা বা ডিংলে বলে৷ এই লাউ কুমড়োকে কোথাও কোথাও মিষ্টি কুমড়ো, কোথাও বা সূয্যি কুমড়ো, আবার ময়মনসিং অঞ্চলে কোথাও কোথাও বিলাতী লাউও বলে৷

মিষ্টি কুমড়োর খাদ্যগত মূল্য ততটা না থাকলেও খাদ্য পরিপাকে ও ক্ষুধার উদ্রেকে সাহায্য করে৷ মিষ্টি কুমড়োর ৰীজের খাদ্যগত মূল্য কিন্তু অত্যন্ত অধিক৷

অত্যধিক পরিমাণে বা প্রত্যহ মিষ্টি কুমড়ো খেলে আর তার সঙ্গে যদি পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব থাকে, তবে কুষ্ঠরোগ হবার সম্ভাবনা থাকে৷ অবশ্য তার জন্যে মিষ্টি কুমড়ো দায়ী নয়, দায়ী হ’ল দারিদ্র্য৷ মিষ্টি কুমড়োতে কাঁচা অবস্থায় কিন্তু সবুজ তরকারীর গুণ বিদ্যমান৷ মিষ্টি কুমড়ো পাতার শাক বা এর নরম লতার (ডাঁটা) তরকারী একটি ভাল ব্যঞ্জন৷

ঝিঙ্গে

পরিচয় ও প্রজাতি ঃ ‘কুলক’ শব্দটিকে তোমরা যদি ক্লীবলিঙ্গে ব্যবহার কর, তার মানে হবে ৰড় আকারের ঝিঙ্গে৷ যে ঝিঙ্গে একসঙ্গে থোকায় থোকায় হয় ও আকারে একটু ছোট, তার বিশেষ নাম হচ্ছে ‘সপ্তপুত্র’ বা ‘সপ্তপুত্রিকা’৷ এই ‘সপ্তপুত্রিকা’–সঞ্জাত ‘সাতপুতিয়া’ শব্দটি ছোট ঝিঙ্গের জন্যে উত্তর ভারতে কোথাও কোথাও ব্যবহূত হয়৷ সে সকল স্থানে ৰড় ঝিঙ্গেকে বলা হয় ঝিঙ্গী৷ রাঁচী অঞ্চলের ঝিঙ্গে আকারে খুব বেশী দীর্ঘ হয়..... স্বাদও ভাল৷ ঝিঙ্গে গাছের কুঁড়িগুলি বিকেলের দিকে একসঙ্গে সবাই মৃদু পট পট ধ্বনি করে ফুটে যায়৷ তাই যে মানুষের গুণ হঠাৎ বিকশিত হয়, তাকে প্রশংসার ভাষায় শাদা–মাটা ৰাংলায় ঝিঙ্গে ফুলের সঙ্গে তুলনা করা হয়৷

হজমে ও কর্মতৎপরতা ৰৃদ্ধিতে ঝিে৷ ঃ ঝিঙ্গে মুখে লালা আনে৷ তাই ভোজনে ও হজমে ঙ্মতরকারী হিসেবেৰ কিছুটা সাহায্য করে৷ তবে দিনের পর দিন অতি মাত্রায় ঝিঙ্গে খেলে আমাশয় রোগ দেখা দেবার সম্ভাবনা থাকে৷ ঝিঙ্গে শরীরকে স্নিগ্ধ রাখে৷ তবে রক্তচলাচল কিছুটা ৰাড়িয়ে দেয় ৰলে এতে মানুষের কর্মতৎপরতা ৰৃদ্ধি পায়৷

ঝিঙ্গে–পোস্ত গ্রীষ্ম ঋতুতে শরীরকে শুষ্কতা বা টানের হাত থেকে রক্ষা করে৷ যেমন রক্ষা করে ৰিউলির ডাল (ৰিরি কলাই)৷ অনেক অভিজ্ঞ মানুষ বলে থাকেন, পোস্ত–সহযোগে ঝিঙ্গের গুণ ও মিষ্টতা নাকি ৰৃদ্ধি পায়৷ এ উক্তির সত্যাসত্য নির্দ্ধারণের জন্যে একটি উচ্চ ক্ষমতাশীল তদন্তকমিশন বসানো যেতে পারে! চৈত্র–বৈশাখ–জ্যৈষ্ঠ–এই রকম মাসে কম পরিমাণ ঝিঙ্গে–পোস্ত স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল৷ আদা–ৰাটা দেওয়া ঝিঙ্গের ঝোল (যা কোথাও কোথাও ‘ঝিঙ্গের কড়ুই’ নামে পরিচিত) অরুচিনাশক, অগ্ণি উদ্দীপক ও রক্তগতিৰর্দ্ধক রূপে আদৃত৷    –‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে