আমার সন্তান যেন থাকে  দুধে ভাতে

লেখক
একর্ষি

পূর্ব প্রকাশিতের  পর,

বিকেন্দ্রিত অর্থব্যবস্থার চতুর্থ নীতি হচ্ছে একটি অঞ্চলের  অর্থনৈতিক কার্যকলাপে কেবলমাত্র স্থানীয় মানুষেরই নিযুক্তি তথা অংশগ্রহণ৷ বিকেন্দ্রিত অর্থনীতিতে একটি সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থানীয় মানুষেরই সার্বিক স্বার্থ তথা সার্বিক কল্যানেরই প্রাধান্য ও গুরুত্ব৷ স্থানীয় মানুষের চাহিদার ভিত্তিতেই সর্বনিম্ন প্রয়োজন পূর্ত্তির আবশ্যকতার  পরিমান ঠিক করা হবে ও তাদেরই আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবেই আর্থিক  মূল নীতি রচনা করা হবে৷ এই নীতি বাস্তবে রূপায়িত সম্পূর্ণ কর্মনিযুক্তিতেই স্থানীয় বেকার সমস্যার পূর্ণ সমাধান৷ (৫) বিকেন্দ্রিত অর্থনীতির পঞ্চম নীতি হচ্ছে স্থানীয় বাজারে কেবলমাত্র স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত দ্রব্যই বিক্রি হবে৷ মানে--- যে সব  দ্রব্য স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত হয় না তা সেই অঞ্চলের  বাজারে বিক্রি হতে দেওয়া চলবে না৷ কারণটা পরিষ্কার বিকেন্দ্রিত অর্থব্যবস্থার লক্ষ্য কী না স্থানীয় শিল্প বিকশিত করে স্থানীয় জনসাধারণের জন্যে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা৷ তাই যে সব সামগ্রী সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে উৎপন্ন হয় না সেই সব দ্রব্যকে সেখানকার বাজার থেকে যতদূর সম্ভব বের করে দিতে হবে৷ অবশ্য এই সঙ্গে গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে যেন স্থানীয় মানুষ তাদের নিজস্ব এলাকার উৎপন্ন সব প্রয়োজনীয় ভোগ্য সামগ্রী ব্যবহার করতে পারে৷ আর এইভাবেই স্থানীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক স্বয়ম্ভরতা সুনিশ্চিত হবেই৷ তবে স্থানীয় জনসাধারণকেও এটাও মেনে নিতে হবে ও সহযোগিতামূলক সহনশীলতা দেখাতে হবে---কেননা প্রাথমিক পর্বে, প্রথম প্রথম স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন সামগ্রী হয়ত বাইরে থেকে আমদানি করা দ্রব্যসামগ্রীর তুলনায় গুণগত মানে কিছুটা পিছিয়ে থাকতে পারে, মহার্ঘ্য হতে পারে অথবা তা সহজ-প্রাপ্য নাও হতে পারে৷ তা সত্ত্বেও স্থানীয় অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার স্বার্থে রক্ষাকবজ হিসেবে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মানুষ স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন বস্তুই সাগ্রহে ব্যবহার করতে হবে৷ কিন্তু ব্যাপারটা দীর্ঘায়িত হতে দেওয়া যাবে না৷ এমনটা ঘটলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে তাদের গুণগত মান বাড়ে, দাম কমানো যায়, আর স্থানীয়ভাবে সব দরকারি জিনিসের সরবরাহ বাড়ে৷ নইলে লোকচক্ষুর আড়ালে চোরা পথে বে-আইনি আমদানি ব্যবসা গড়ে উঠবে, ব্যাপারটা নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারার মত হবে৷ কেননা যদি এটা অবহেলা করা হয় তাহলে স্থানীয় শিল্পে লালবাতি জ্বলে যেতে পারে৷ ফলে স্থানীয়  মানুষের হাত থেকে সেখানকার বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে, বেকারিও বেড়ে যাবে৷ পক্ষান্তরে নীতিগতভাবে স্থানীয় ভিত্তিতে উৎপন্ন সামগ্রীই যদি স্থানীয় বাজারে ‘রাজ’ করে তাহলে শুধু স্থানীয় শিল্পই বাঁচবে না, স্থানীয় অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে, শক্তিশালী হবে, অর্থের বহিঃস্রোতও বন্ধ হবে৷ এছাড়াও আরও কতগুলো সুফল পাওয়া যাবে৷ যেমন ‘অর্থের বহিঃস্রোত বন্ধ হলে অর্থ সংশ্লিষ্ট এলাকাতেই থেকে যাবে ফলে সেই অর্থ উৎপাদন বৃদ্ধি আর স্থানীয় মানুষের বিকাশের কাজে লাগবে৷’ স্থানীয় ভাবে উৎপন্ন বস্তুর চাহিদা বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পও ভালভাবে গড়ে উঠবে৷ আঞ্চলিক শ্রীবৃদ্ধি সুনিশ্চিত হবে৷  সুনিশ্চিত হবে---শুধু ‘‘আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে’’ নয়, আমার তোমার  সবার  সন্তান থাকবে দুধে ভাতে৷  (সমাপ্ত)