আর নয় দেশের জনগণ এবার আরো সজাগও সচেতন হোক

লেখক
প্রভাত খাঁ

১৯০৫ সালে রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ (স্যারেন্ডার নট) এর মতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ নেতারা স্বদেশী আন্দোলন করে ও সঙ্গে সঙ্গে অরবিন্দ-বারিন্দ্র-ক্ষুদিরাম-প্রফুল্ল চাকীরা সহিংস আন্দোলন সংঘটিত করে ব্রিটিশের বাংলাভাগের চক্রান্তকে রুখে দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগষ্ট আমরা যে স্বাধীনতা পেলুম সেটা যে কতখানি অভিশপ্ত সেটা বোঝার মতো কি একটাও নেতা ছিল না। চিরকালের মতো আমাদের অখন্ড বাংলা ভাগ হলো। আর লক্ষ লক্ষ বাঙালী হিন্দু ভাই বোন উদ্বাস্তু হয়ে এদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আজও অনেকেরই বরাত ফেরেনি। দীনহীন হয়ে ভাগ্যের বিড়ম্বনা সহ্য করতে হচ্ছে। একে কি স্বাধীনতা বলে? কংগ্রেসের নেতারা বলেছিলেন যে দেশ স্বাধীন হলে বাংলাকে তার এলাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে, অর্থাৎ অসম, বিহার, ও ওড়িষার সঙ্গে বাংলার যেটুকু অংশ ইংরেজরা যুক্ত করে দিয়েছে সেগুলি বাংলা ফেরৎ পাবে। কংগ্রেস কি তার প্রতিশ্রুতি পালন করেছে? করেনি। পশ্চিমবাংলার কংগ্রেস দলও কি সেটা দাবী করেছে? তারাও করেনি। বরং ধানবাদের মতো সমৃদ্ধ এলাকা বিহারকে দিয়ে দেয়। ডঃ রায় পশ্চিমবঙ্গকে বিহারের সঙ্গে যোগ করার ব্যবস্থা করেন। সেটা ভাগ্যিস হয় নি। স্বাধীনতার পর হতভাগ্য বাঙালী শুধু মারই খাচ্ছে।

অত্যন্ত দুঃখের কথা তা হলো অসমে বাঙালী বোটারদের বোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যদিও তাঁরা জন্মসূত্রে ভারতের স্থায়ী বাসিন্দা। কিন্তু পশ্চিম বাংলার দার্জিলিং-এ নেপাল থেকে আগতদের বোটার করে গোর্খাবোটার বাড়ানো হচ্ছে। এ কেমন ব্যাপার? নেপালে বহু উপজাতির বাস। গোর্খা নামধারীরা নেপালের স্থায়ী বাসিন্দা। ইংরেজ আমলে গোর্খাদের ইংরেজ শাসক ভারতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ করে দেশীয় আন্দোলনকারীদের দমন করতে গোর্খাদের আমদানী কবেছিল। কার্লমাকর্স তাঁর রচিত ইতিহাসে গোর্খাদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন, গোর্খারা ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের সাহায্য করে সিপাহী মহাবিদ্রোহ দমন করতে। সেই গোর্খাদের এদেশের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার বোটের স্বার্থে প্রশ্রয় দিচ্ছে।প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজী দার্জিলিঙে গিয়ে গোর্খাদের আদেশ দেন এই বলে, তারা নেপালে গিয়ে আন্দোলন করুক এখানে নয়। কে কার কথা শোনে? বামেরাই বেশী উৎসাহী হয়ে দার্জিলিং -এ সুবাস ঘিসিংকে দিয়ে বিছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে প্রশ্রয় দেয়। এই ঘিসিং ছিল গোর্খা সৈন্যবিভাগের একজন। তাকে জি এন এল আর প্রধান করে দার্জিলিং -এ আগুন ধরায়। এতে খোদ নাটের গুরু ছিলেন জ্যোতি বসু। বামেদের আমলে বিদায় হয় ঘিসিং। তার সাকরেদ বিমল গুরুং ঘটি উলটে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা করে লাফালাফি করতে থাকেন। এরা নির্বাচনে দাঁড়িয়ে দার্জিলিং কব্জা করার কাজে এগিয়ে যায়। এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার আইন করেছে - ১৯০০ এর আগে যারা এদেশে এসেছে তারা ভারতের নাগরিক হবে। কিন্তু এরই মধ্যে নেপালীরা দলে দলে ভাগ্যাম্বেষণে এসে সংখ্যা এতটাই বাড়িয়ে নিয়েছে যা বলার নয়! সেদিকে কেন্দ্র বা বাম সরকারের কোন নজর নেই। নেপালী হয় গেছে গোর্খা। এটা ডাহা মিথ্যা। সব নেপালী গোর্খা নয়। গোর্খারা নেপালী। নেপালের রাজবংশ তো গোর্খাদের নেতা পৃথ্বীনারায়ণ সিং এর বংশধরগণ ছিল। নেপাল যাদের দেশ তারা এখানে গোর্খাল্যান্ড দাবী করে কি করে? এটা কেন্দ্র ও বাম সরকার জানেন না?

অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় হলো এই যে শুধু দলবাজী করে গদী সামলানোটাই কি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাজ। দেশের সার্বভৌমিকতা, নিরাপত্তা ও কারা এদেশে প্রবেশ করছে, তারা কোথা থেকে আসছে তার খোঁজ খবর নেওয়াটা তো জরুরী। নেপাল ও ভারত পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ, বহু প্রাচীন কাল থেকে দুদেশের বন্ধুত্ব আছে। ইংরেজ আমলে সেটা চলছিল। কিন্তু স্বাধীন রাষ্ট্র হওয়ার পর দেশের সরকারের সজাগ হওয়াটা জরুরী।

বাইরের দেশের সবাইতো এসে নাগরিক হতে পারে না। গত কয়েক বছরে নেপালীদের সংখ্যা এতটাই বেড়েছে যা কল্পনাতীত। কেন্দ্র ও রাজ্য যে ব্যাপারে সজাগ নয় সেটাই তার প্রমাণ। এতে করে দেশ বাঁচবে না। দেশের নিরপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাইয়ে দেওয়ায় রাজনীতিটা মারাত্মক। নানা দুর্বলতার কারণে সমগ্র ভারত অত্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই দেশের স্বার্থে সরকার ও জনগণকে সজাগ থাকতে হবে।

সীমান্ত রাষ্ট্র থেকে প্রতিদিন অনুপ্রবেশ ঘটছে। সীমান্ত দিয়ে উত্তর বাংলায় নেপাল ও ভুটানের টাকায় বাজার-হাটে বেমালুম লেনদেন চলছে। এটা যেন একটা চলন হয়ে গেছে। এটা কিন্তু বে-আইনি ব্যাপার। এগুলো অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ হওয়া দরকার। সরকারকে সাথে সাথে জনগণকে জাগ্রত প্রহরীর মতো সজাগ থাকতে হবে। দেশের কল্যাণে যাতে দেশের ক্ষতি না হয়।

ভারতে প্রতিদিন মায়ানমার, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান থেকে চোরা পথে বে-আইনি জিনিসপত্রের লেনদেন ও অনুপ্রবেশ ঘটছে অবৈধ ভাবে সীমান্তের কিছু লোক জন এব্যাপারে জড়িয়ে আছে। যদিও আমাদের সদা জাগ্রত জওয়ানরা পাহারারত। এব্যাপারে জওয়ানদের সাহায্য করতে হবে নাগরিকদের যারা সীমান্তে বসবাস করছেন। তবেই অনেকক্ষেত্রে দেশ দৃঢ়ভাবে নিরাপদে থাকবে।

এখনো যদি দেশের জনগণ জাগ্রত না হয় তাহলে ভারতের সার্বিক কল্যাণ ব্যাহত হবে।