বাংলা বিভাগের নামফলক থেকেই বাংলা উধাও

লেখক
মনোজ দেব

ত্রিপুরা 

বাংলা প্রেমের স্বরূপটা প্রকাশ পাচ্ছে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায়৷ ত্রিপুরার কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নামফলক থেকেই বাংলাকে ছেঁটে দেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যে রাজ্যে আঞ্চলিক ভাষাগুলোকে বিলুপ্ত করে হিন্দী চাপানোর যে প্রবণতা নেহেরু সরকার শুরু করেছিল, মোদী জমানায় সেই প্রবণতা আরও বহুগুন বেড়েছে৷ পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, অসমে বাংলাকে সরিয়ে হিন্দী চাপানোর কাজ জোর কদমে চলছে৷ ত্রিপুরা ও অসমে কেন্দ্রের শাসক দলই শাসন ক্ষমতায় থাকায় সোজা পথেই সেটা করছে৷ পশ্চিমবঙ্গে নানা কৌশলে হিন্দী চাপানোর প্রয়াস করছে দিল্লীর বিজেপি সরকার৷

অসমে তো বটেই ত্রিপুরায় একেবারে বাংলার ঘাড়ে চেপে বসেছে হিন্দী ভাষা৷ ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগ তো বটেই, বাংলা বিভাগের নামফলক থেকেও বাংলা উঠিয়ে হিন্দী-ইংরাজী বসিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এই নিয়ে প্রতিবাদ হতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে৷ মোদী সরকার ক্ষমতায় বসার পরই কেন্দ্রীয় বিভিন্ন সংস্থায় বাংলা ভাষার গুরুত্ব কমাতে শুরু করে, এই অভিযোগ আগেই উঠেছে৷ ত্রিপুরা পশ্চিমবঙ্গের মত বাঙালী সংখ্যাগড়িষ্ঠ রাজ্যেও বাংলাকে ব্রাত্য করে হিন্দী চাপানো হচ্ছে৷ এমনকি সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশেও সাতটি ভাষার মধ্যে বাংলাকে স্থান দেওয়া হয়নি৷ পরে অনেক আন্দোলন ও প্রতিবাদ করার ফলে বাংলাকে মেনে নেয় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট৷ পশ্চিমবাংলায় কৌশলগত কারণে এখনও ব্যাপকভাবে হিন্দীর প্রয়োগ শুরু না করলেও ক্ষমতা পেলে কী করবে সেটা অসম, ত্রিপুরা দেখিয়ে দিচ্ছে৷

ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের নাম ফলকে বাংলা না থাকার বিষয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ হতেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে৷ বাংলা বিভাগের প্রধান রিণ্টু দাস বলেন---বাংলা বিভাগের নাম বাংলাতেই লেখা ছিল৷ তিন বছর আগে সব বিভাগের নাম হিন্দী  ও ইংরাজীতে লেখা শুরু হয়েছে৷ তখনই বাংলা সরিয়ে বাংলা বিভাগেও হিন্দী, ইংরাজী লেখা হয়৷ তিনি আরও বলেন, আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলে আমরা বাংলাতেই লিখতে বলতাম৷ অর্থাৎ রিণ্টু দাসের কথায় একটা বিষয় পরিষ্কার---বিপ্লব দেব সরকার ক্ষমতার আসার পরই বাংলা সরিয়ে হিন্দী ব্যবহার শুরু হয়েছে৷ আর এটা করা হয়েছে বিভাগীয় প্রধানের গোচরে না এনে৷ কলা বিভাগের ডিন চন্দ্রিকা বসু মজুমদার অবশ্য বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন৷ তিনি বলেন, নিয়মনীতি কি ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে চলছে খোঁজখবর না নিয়ে কিছু বলতে পারব না৷

কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ মন্ত্রক অবশ্য এ বিষয়ে স্ববিরোধী মন্তব্য করেছেন৷ একদিকে মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দাবী করা হয়---কোনও বিভাগের নাম কোন্ ভাষায় লেখা হবে তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই ঠিক করেন৷ সেখানে আমাদের কোনও ভূমিকা থাকে না৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজ্যের ছাত্রছাত্রাদের কথা ভেবে হিন্দী ও ইংরাজীতে লেখার পরামর্শ দেওয়া হয়৷ ব্যাপারটা লক্ষ্য করার---নির্দেশ নয়, পরামর্শ দেওয়া হয়৷ এটা কী ভূমিকার বাইরে? হিন্দী চাপাতে মন্ত্রকের পরামর্শই যথেষ্ট৷ যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থিক ব্যাপারে স্বনির্ভর নয়৷ কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর তারা নির্ভরশীল৷ তাই তাদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করার সাহস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের থাকে না৷ এটা মানব সম্পদ মন্ত্রকের কর্তা-ব্যষ্টিরা ভালই জানেন৷ তাই যে কাজ পরামর্শ দিলেই হয়ে যায়, সেখানে নির্দেশ দিয়ে দায়ভাগী হতে যাবেন কেন! অর্থাৎ কাজটা যে ঠিক হচ্ছে না এটা মানব সম্পদ মন্ত্রক ভালই বোঝেন৷ তাই এই ‘ধরিমাছ না ছুঁই পানি’ ভাব৷