বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে হবে বাঙালীদেরই

লেখক
বিশ্বদেব মুখার্জী

টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলে কিছু কিছু অনুষ্ঠান বেশ জনপ্রিয়৷ ধারাবাহিকগুলোর পাশাপাশি দাদাগিরি,দিদি নং-১ যেমন জনপ্রিয় তেমনই জনপ্রিয় গানের অনুষ্ঠান সা- রে- গা- মা-পা কিংবা  নাচের অনুষ্ঠান ’ ড্যান্স বাংলা ড্যান্স’৷ বহু নবীন প্রতিভা এইসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উঠে আসে বা প্রতিষ্ঠা পায় একথা সত্য৷ এই বিষয়ে আলোকপাত করার উদ্দেশ্যে এই প্রতিবেদন লেখা নয়,প্রশ্ণটা অন্য৷

যে চ্যানেলগুলিতে ধারাবাহিক বা গানের ও নাচের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে সেগুলো সবই বাংলা চ্যানেল৷ মূলতঃ বাঙালী দর্শকদের দেখার জন্য ধারাবাহিক গুলো সম্প্রচার করা হয়৷ আর নাচ গানের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যারা তাদের সিংহভাগই বাঙালী৷ নিশ্চয় নবীন বাঙালী প্রতিভা অন্বেষণের জন্যই এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ যাদের জন্য ও যাদের দেখার জন্য এই অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে তারা বাঙালী হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তারা বাংলা গান শুণতে ভালোবাসবে ও বাংলা গানের উপর নাচ দেখতেই পছন্দ করবে৷ কিন্তু চাইলেই তো সব পাওয়া যায় না৷ যারা এই সব চ্যানেলের মালিক বা পরিচালনা করেন সম্ভবত তারা সবাই বাংলার হিতাকাঙ্খী নন৷ যারফলে আপনার ইচ্ছা না থাকলেও আপনাকে  অপছন্দের হিন্দি গান শুনতে হবে৷  কিচ্ছু করার নেই আপনার!

সর্বভারতীয় চ্যানেলে  নিজেদের পছন্দমত হিন্দি গান চালিয়েও এরা সন্তুষ্ট নয়,বাংলা চ্যানেলকেও এরা গ্রাস করে নিচ্ছে৷ বাঙালীদের মধ্যে থেকে এর কোনো প্রতিবাদ নেই৷ তাই বাংলা ধারাবাহিকে বিশেষ কোনো জায়গায় গানের প্রয়োজন দেখা দিলে সেখানে বাংলার পরিবর্তে হিন্দি গান শোণানো হচ্ছে৷ এগুলোর কোনো যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যাবে না৷ এছাড়াও এখন তো আবার বাংলা ধারাবাহিকে নানারকম শব্দও ব্যবহার করা হচ্ছে যেগুলো বাংলা শব্দ বলে বাঙালীরা অন্তত জানে না৷ বাংলা ভাষা যেমন সমৃদ্ধশালী, তেমনই বাংলা গানের সংখ্যাও যথেষ্ট বেশি৷ তাহলে  অন্য ভাষার গানের উপর ভরসা করতে হচ্ছে কেন আয়োজকদের ? কোনো ভাষার বিপক্ষে না গিয়েও বলা যায় এটা কী জেনেবুঝে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল ! বাংলা চ্যানেলে বাংলা ভাষার উপর আধারিত গান বা অনুষ্ঠানই তো অধিকাংশ বাঙালী  আশা করে৷ সেখানে জোর করে হিন্দি গান প্রতিযোগীদের দিয়ে গাওয়ানো হচ্ছে কেন ? মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় যে বাঙালীরা প্রাণ দিয়ে ইতিহাস রচনা করে গেলেন, সেই বাংলা ভাষার উপর নতুন কায়দায় ছুরি মারা হচ্ছে৷

বাঙালী নামধেয় জনগোষ্ঠী যে আজও দুর্দান্তভাবে জীবিত আছে আজ তার প্রমাণ দেওয়ার সময় এসেছে৷ শৌর্যে বীর্যে যে বাঙালীর সুনাম সর্বত্র ছিল, সেই বাঙালী  কিনা সবকিছু বিনা  বাধায় মেনে নিচ্ছে! ভাবতেও অবাক লাগে! প্রয়োজনে বাঙালী প্রতিযোগীরাও প্রতিবাদ জানাক! সাধারণ বাঙালী দর্শক ও শ্রোতা যাঁরা ঘরে বসে টেলিভিশনের পর্দায় এইসব অনুষ্ঠান দেখে থাকেন প্রয়োজনে তাঁদেরও প্রতিবাদী হিসেবে অনুষ্ঠানগুলো বয়কট করতে হবে৷ বুঝিয়ে দিতে হবে মাতৃভাষার অমর‌্যাদা কিছুতেই মেনে নেবে না আপামর বাঙালি৷ মনে রাখা দরকার বাংলাভাষা ও বাঙালীর হৃত গৌরব  ফিরিয়ে আনতে হবে বাঙালীদেরই৷