বাংলায় ‘ৰ’ ও ‘ব’ প্রসঙ্গে

লেখক
জ্ঞানভিক্ষু

প্রাউট–প্রবক্তা মহান দার্শনিক ঋষি শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার ভাষাতত্ত্ব ও ব্যাকরণ বিজ্ঞানের ওপরও বহু অমূল্য পুস্তক রচনা করেছেন, যা কলকাতা, ঢ়াকা, কল্যাণী প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা অধ্যাপক সহ বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক ও জ্ঞানী গুণীজনের দ্বারা বহুল প্রশংসিত৷ তাঁর রচিত ‘প্রভাতরঞ্জনের ব্যাকরণ বিজ্ঞানে’ (৩ খণ্ড) তিনি বহু প্রচলিত অনেক বাংলা বানানের ভুলত্রুটি বা অর্থবিচ্যুতি দেখিয়ে সে সবের সংস্কার সাধনেও সচেষ্ট হয়েছেন৷ তাছামড়া, বাংলাভাষাকে সমৃদ্ধশালী করে তুলতে, সংস্কৃত থেকে আগত তৎসম শব্দগুলির উচ্চারণ ও অর্থ যথাযথভাবে প্রকাশ করতে, বিভিন্ন বিদেশী শব্দেরও উচ্চারণকে ঠিক ঠিক ভাবে প্রকাশ করার প্রয়োজনে, এছাড়া বাংলার বিভিন্ন উপভাষার উচ্চারণটিকেও যথাযথভাবে প্রকাশ করার জন্যে শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বাংলা বর্ণমালায় নোতুন কয়েকটি অক্ষরের (ক, খ, জ, ফ, ল, ৰ) সংযোজন করেছেন৷ এখন বগর্িয় ব (ৰ) ও অন্তঃস্থ ব (ব)–এই দুয়ের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হচ্ছে৷

ব () ৰ (ত্ব্ত্র)

পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত ভাষাতে বর্গীয় ‘ৰ’ ও অন্তঃস্থ ‘ব’–য়ের পার্থক্য সুন্দরভাবে চিহ্ণিত ও উচ্চারিত৷ বর্গীয় ‘ৰ’  ও অন্তঃস্থ ‘ব’ যখন দুটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী বর্ণ তখন একের কাজ অন্যকে দিয়ে কিছুতেই করা সম্ভব নয়৷

ৰাংলা বর্ণমালায় ‘ব’ আমরা দু’বার লিখে থাকি৷ একবার প, ফ, ৰ অর্থাৎ বর্গীয় ‘ব’ ও অন্য বার য, র, ল, ব অর্থাৎ অন্তঃস্থ ‘ব’৷ কিন্তু দু’টো ‘ব’–কেই একইভাবে উচ্চারণ করে থাকি৷ বর্গীয় ‘ৰ’ ও অন্তঃস্থ ‘ব’ দুটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র বর্ণ৷ একের কাজ অন্যকে দিয়ে করা কিছুতেই সম্ভব নয়৷ একটি বর্গীয় বর্ণ, আরেকটি অন্তঃস্থ বর্ণ৷ একটি ইংরেজীতে ‘’, অন্যটি ‘ত্ব্ত্র’৷ তাই তাদের জন্যে স্বতন্ত্র আক্ষরিক রূপ রাখতেই হৰে৷ তা না হলে প্রথমতঃ বিদেশী শব্দগুলি যথাযথভাবে লেখা যাৰে না৷ দ্বিতীয়তঃ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করা যাৰে না৷ তৃতীয়তঃ এর ফলে ভাষাও ক্ষতিগ্রস্ত হৰে৷

হিন্দুস্তানী গানের ৰাংলা রূপান্তর ঘটাতে গিয়ে অনেকেই এই অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন৷ অনেকে আবার ‘ব’ অক্ষরটিকে ‘ৱ’ লিখে ৰোঝাৰার চেষ্টা করেছেন৷ এতে একটি অসুবিধে হল ‘র’–য়ের সঙ্গে এর পার্থক্য খুবই কম৷ তাই গণ্ডগোলের আশঙ্কা প্রৰল৷

শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার এই দুটো ‘ব’য়ের উচ্চারণ ও ব্যবহার শুদ্ধভাবে ৰোঝাবার জন্যে প্রচলিত ‘ব’ অক্ষরটির পেট কেটে দিয়ে বর্গীয় ‘ৰ’ রূপে ও পেট–না–কাটা অবস্থায় অন্তঃস্থ ‘ব’ রূপে ব্যবহার করার কথা উল্লেখ করেছেন৷ এতে প্রচলিত অন্য কোন অক্ষরের অর্থাৎ ‘র’ ও অন্তঃস্থ ‘ব’ য়ের কারো কোন ক্ষতি হৰে না৷ অর্থাৎ বর্গীয় ‘ব’ এবার থেকে আমরা লিখৰ ‘ৰ’ এই ভাবে, আর অন্তঃস্থ ‘ব’ যেমন ছিল তেমনই থাকৰে৷

‘‘হ্যাঁ, ৰাংলার ‘ভ’ মানে কিন্তু ইংরেজীতে কোন মতেই   নয়–তা ‘ব’ (অন্তঃস্থ ‘ব’)৷ আর ‘ভ’ বোঝাতে অবশ্যই ক্সত্ব্ড়্ত্রক্স লিখতে হবে৷ অর্থাৎ ‘ভ্যান’, ‘ব্যান’ ও ‘ৰ্যান’ শব্দ তিনটিকে ইংরেজীতে যথাক্রমে লিখতে হৰে ক্সত্ব্ড়্ত্রুক্স, ক্স্ল্ত্রুক্স ও ক্সত্ব্ত্রুক্স৷

এই অন্তঃস্থ ‘ব’–য়ের ব্যবহার না জানলে প্তব্ভন্দ্ব, প্ত্লন্দ্ব, ন্ব্দড়, ন্দ্বব্জম্ভ, ব্জম্ভ ইত্যাদি ইংরেজী শব্দগুলি ৰাংলায় ঠিকভাবে লেখা যাৰে না৷ শব্দগুলোর যথার্থ উচ্চারণ ‘ব’ দিয়েই লিখতে হৰে–‘ভ’ বা ‘ৰ’ দিয়ে নয়৷ ‘ব’–এর ব্যবহার না জানায় প্সব্ধন্দ্ব–কে ভুল করে অধিকাংশ লোকই ‘ভোট’ লিখে থাকেন৷ যেন ৰানানটা ক্সত্ব্ড়প্সব্ধন্দ্বক্স  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামের ইংরেজী ৰানানে ভুল করে ‘ত্ব্’ ব্যবহার করতেন ৰলে আর যাঁদের নাম রবীন্দ্রনাথ তাঁরাও ভুল করে ‘ত্ব্’ ব্যবহার করে আসছেন৷ এ ভুল সংশোধিত হওয়া উচিত৷ শব্দটি ‘রবি’–‘রৰি’ নয়৷ তাই ৰানানটি ত্ম্ত্র্ল–ত্ম্ত্রত্ব্ নয়৷

এই অন্তঃস্থ ‘ব’–য়ের উচ্চারণ ও ব্যবহার না জানার ফলেই আমরা বিদেশী শব্দ ‘হাবা’–কে ‘হাওয়া’, ‘আবহাবা’–কে ‘আবহাওয়া’ করে ফেলেছি৷ ‘বকিল’ হয়েছে ‘উকিল’৷ প্রশ্ণ হ’ল, কোথায় কোথায় বর্গীয় ‘ৰ’ বা অন্তঃস্থ ‘ব’ হবে? মোটামুটিভাবে বর্গীয় ‘ৰ’ যেসব ক্ষেত্রে লিখতে হৰে ঃ

(১) খাঁটি ৰাংলা শব্দে যেখানে ‘ব’ রয়েছে সেখানে বর্গীয় ‘ৰ’ হৰে৷ যেমন–ৰোকা, ৰেঁটে, ৰেঁড়ে, ৰাটি, ৰিড়ে ইত্যাদি৷

(২) ৰাংলা ক্রিয়াপদে ও ক্রিয়ার ভবিষ্যৎ কালে সব সময়ই বর্গীয় ‘ৰ’ হৰে৷

যেমন–ৰলা, ৰসা, ৰকা, ৰুঝা (ৰোঝা) (ক্রিয়াপদে) আবার করৰ, খাৰ, দেখৰে, যাৰে, পাৰে, শোৰেন ইত্যাদি ভবিষ্যৎ কালে৷

(৩) বিদেশী শব্দের ৰানানে যেখানে ‘ত্ব্’, ‘ৰ’, ‘ৰিটা’ অক্ষর ব্যবহার করা হয়েছে, সেখানে ৰাংলায় বর্গীয় ‘ৰ’ হৰে৷ যেমন ৰ্যান (ত্ব্ত্রু), ৰডি (ত্ব্প্সস্তুম্ভ), ৰুক (ত্ব্প্সপ্সন্স) ফরাসীতে ৰঁ (ত্ব্প্সু), ৰোনা (ত্ব্প্সুত্র) আরৰী, ফার্সীতে ৰে–তমিজ, ৰে–ইমান্ প্রভৃতি৷

 

ফারসী উপসর্গ ‘ৰে’–যুক্ত শব্দ ৰাংলায় ব্যাপকভাবে ব্যবহূত হয়৷ এই ‘ৰে’ উপসর্গযুক্ত সমস্ত শব্দই বর্গীয় ‘ৰ’ দিয়ে লিখতে হৰে৷ যেমন–ৰেইমান, ৰেকার, ৰেঘোর, ৰেগার, ৰেচারা, ৰেতার, ৰেদরদী, ৰেফাজুল, ৰেভুল, ৰেরসিক, ৰেহদ্দ, ৰে–তমিজ, ৰেহেড, ৰেয়াড়া ইত্যাদি৷