বধিরতা

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

লক্ষণ ঃ এই রোগে আক্রান্ত হবার প্রথমের দিকে রোগী কাণে ভোঁ–ভোঁ শব্দ শোণে ও ক্রমশঃ অনান্য সমস্ত শব্দই রোগীর কাছে অস্পষ্ট হয়ে যেতে থাকে৷

কারণ ঃ জন্মগত কারণ ব্যতিরেকে বধিরতা নিজে কোন রোগ নয়–অন্য রোগের প্রতিক্রিয়া মাত্র৷ তাই এ রোগের অজস্র কারণ থাকতে পারে৷

১) অতিরিক্ত কুইনাইন বা অন্য কোনবিষ ঔষধ রূপে দীর্ঘকাল ব্যবহার করলে শ্রবণশক্তি হ্রাসপ্রাপ্ত হয় বা স্তম্ভিত হয়ে যায়৷

২) পুষ্টিকর খাদ্যের অভাবে প্রৌৌত্বে বা বার্দ্ধক্যে অনেক লোকের শ্রবণযন্ত্রের স্নায়ুপুঞ্জ দুর্বল হয়ে পড়ে ও তার ফলে বধিরতা দেখা দেয়৷

৩) অতিরিক্ত মাদকদ্রব্যের ব্যবহারের ফলে রক্তে অম্লদোষ বেড়ে গেলে শ্রবণশক্তি হ্রাসপ্রাপ্ত হয়৷

৪) যাদের শ্লেষ্মাপ্রধান ধাত তাদের কখনও কখনও অতিরিক্ত শ্লেষ্মা জমে শ্রবণযন্ত্রের কাজকর্ম ব্যাহত হয় ও তার ফলে বধিরতা রোগ সৃষ্ট হয়৷

৫) অতিরিক্ত শুক্রক্ষয়ের ফলে শ্রবণশক্তি শোচনীয়ভাবে কমে যায় ও তাতে করে স্থায়ী বধিরতা সৃষ্ট হয়ে থাকে৷

৬) যাদের নস্য গ্রহণের অভ্যাস আছে অথবা যাদের জোরে নাক ঝাড়বার অভ্যাস আছে তাদেরও অনেক সময় শ্রবণস্নায়ুর স্বাভাবিক কর্মধারা ব্যাহত হয়ে যাওয়ায় বধিরতা দেখা দেয়৷

৭) কূপিত বায়ু বা শ্লেষ্মা কর্ণের স্নায়ুতন্তুর স্বাভাবিক কাজে বাধা দিয়ে বধিরতার সৃষ্টি করে৷

৮) কর্ণমূলের স্ফীতি বা কাণে পুঁজ সঞ্চয়ের ফলে বধিরতা দেখা দিতে পারে৷

চিকিৎসা, পথ্য ও বিধিনিষেধ ঃ

যে ব্যাধির ফলে বধিরতা সৃষ্টি হয়েছে সেই ব্যাধিটির চিকিৎসা করলে ধীরে ধীরে এ রোগ সেরে যাবে৷ কুশ (২১) দিন ভোরে খালি পেটে লেহন করে খেলে শ্বাসরোগে সুন্দর ফল পাওয়া যায়৷ ১) অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম,

২) যৌনগ্রন্থির দুর্বলতা,

৩) কোষ্ঠবদ্ধতা,

৪) অম্লরোগ,

৫) কোন দীর্ঘস্থায়ী রস–রক্তক্ষয়ী ব্যাধি,

৬) পুরুষ ব্যাধি বা স্ত্রীব্যাধি৷

চিকিৎসা ঃ শিশুদের কৃশতায়–

প্রত্যুষে ঃ কর্মাসন, ভুজঙ্গাসন, শলভাসন, গরুড়মুদ্রা ও আগ্ণেয়ীমুদ্রা৷

সন্ধ্যায় ঃ সমকোণ আসন, চক্রাসন, গ্রন্থিমুক্তাসন৷

বয়স্ক্দের যে মূল ব্যাধির ফলে কৃশতা দেখা দিয়েছে সেই ব্যাধিটির যথাযথ চিকিৎসা করলে প্রয়োজন মত মেদ–মাংসাদির সঞ্চয় হবে৷ রোগীর পক্ষে অবশ্যই যথেষ্ট পরিমাণে (আন্দাজ ৪/৫ সের, কিন্তু এক সঙ্গে অধিক নয়) জলপান ও আতপ স্নান বিধেয়৷ রোগীর পক্ষে যথেষ্ট পরিমাণে উন্মুক্ত স্থানে প্রাকৃতিক পরিবেশে থাকা বাঞ্ছনীয়৷ কৃশ শিশুদের খেলাধূলাতেও উৎসাহ দেওয়া উচিত৷

পথ্য ঃ পাঁচ বৎসরের কমবয়স্ক্ বালক–বালিকার প্রধান খাদ্য দুগ্ধ ও ফল–মূল৷ শ্বেতসার, শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাদ্য যত কম দেওয়া যায় ততই মঙ্গল কারণ ওই সকল খাদ্য শিশুর অপরিণত যকৃৎ ও পরিপাক যন্ত্রগুলিকে দুর্বল করে দেয়৷ পাঁচ বৎসর বয়সের পূর্ব পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই শিশুকে আমিষ খাদ্য দেওয়া উচিত নয়৷ পাঁচ বছর বয়সের পর থেকে ধীরে ধীরে শ্বেতসার, শর্করা ও স্নেহজাতীয় খাদ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে৷ ফল–মূল প্রভৃতি ক্ষারধর্মী খাদ্যই শিশুর পক্ষে সব চেয়ে হিতকর৷ দারিদ্র্য নিবন্ধন অনেকে শিশুদের জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ দুগ্ধের ব্যবস্থা দিতে পারে না অথচ শিশুদের জন্যে প্রয়োজন দৈনিক অন্ততঃ পক্ষে তিন পোয়া/এক সের দুধ৷

বিধি–নিষেধ ঃ ফল–মূল, শাক–সব্জীর ঝোল ও দুগ্ধ যথেষ্ট পরিমাণে খেতে পেলে শিশুদের কৃশতা দূর হয়ে যায় কিন্তু দুঃখের বিষয়, অতিলোভী আমিষভোজী অভিভাবকগণ আর্থিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সন্তান–সন্ততিকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য থেকে বঞ্চিত করে মাছ, ডিম, ঘি, মাখন প্রভৃতি খেতে দেন৷ এ ধরণের স্বভাব অত্যন্ত ক্ষতিকর৷

প্রাপ্তবয়স্ক্দের ক্ষেত্রে সাধারণতঃ কৃশতার মূলীভূত কারণ যে ব্যাধিতে নিহিত সেই ব্যাধিটি দূর হবার সঙ্গে সঙ্গে কৃশতাও আর থাকে না৷ নিজের যকৃৎ ও পাকযন্ত্রের অবস্থা বুঝে প্রাপ্তবয়স্ক্ কৃশকায় ব্যষ্টিরা যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করলে, যথেষ্ট শারীরিক পরিশ্রম করলে, বিধিমত জলপান ও স্নানান্তে সিক্তমর্দনের ব্যবস্থা করলে অল্প দিনের মধ্যে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে উঠতে পারেন৷   

উৎস

(দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য থেকে)